|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
পান সিংহ তোমর-এর কথা জেনেছি আনন্দবাজার থেকেই |
খবরটা বেরিয়েছিল ‘সানডে’ পত্রিকায়। বললেন ছবির পরিচালক তিগমাংসু ধুলিয়া। ‘বুলেট রাজা’র মুক্তি। বিগ বি-র সঙ্গে সিরিয়াল। ব্যস্ততার মাঝে মুম্বইয়ে তাঁকে ধরলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত। |
সেদিন জুহু বিচের ঘোলাটে নীল জলে কি গোয়ার সমুদ্রকে খুঁজছিলেন তিনি?
|
তিগমাংসু ধুলিয়া। |
সইফ আলি অভিনীত ‘বুলেট রাজা’ ছবির পরিচালক তিগমাংসু ধুলিয়া।
পড়ন্ত বেলার সূর্যের লালচে-হলুদ আলোয় সাগরের দিকে চেয়ে থাকলেন কিছু ক্ষণ। এ বছর গোয়ায় ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তাঁর তৈরি ‘পান
সিংহ তোমর’ দেখানো হয়েছে। কিন্তু তা’ও গোয়া যাওয়া হয়নি তাঁর। ‘বুলেট রাজা’-র প্রচার নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন!
অথচ এই তিগমাংসুই কি না বছর কয়েক আগে রীতিমত বেকার জীবন কাটিয়েছেন টিনসেল টাউনে। হাতে ছবি নেই। ‘পান সিংহ তোমর’-এর মুক্তি আটকে বহু দিন। আর এখন? বলিউডে রীতিমত সমীহ জাগানো নাম।
শুধু পরিচালনায় নয়। অভিনয়েও। ‘গ্যাং অব ওয়াসেপুর’-এ তাঁর রামাধীর সিংহ দেখে গা-ঝাড়া দিয়ে বসেছেন বহু ফিল্ম-প্রেমী। সদ্য অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে একটি সিরিয়ালে অভিনয় করার পর আরওই তিনি শিরোনামে। |
পত্রিকা: টানা সাত বছর কাজ পাননি। আর এখন আপনার ডায়েরি কাজে ঠাসা। ‘বুলেট রাজা’-র মুক্তি, ‘পান সিংহ তোমর’ ইফিতে...
তিগমাংসু: ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, ‘এভরি ডগ হ্যাজ ইটস ডে’...
পত্রিকা: ফিরে দেখলে নিজের পথ চলাটা কেমন লাগে?
তিগমাংসু: ভাল তো লাগেই। আসলে ‘সাহেব বিবি অওর গ্যাংস্টার’-এর পরে আমি পরপর ছবি করি। তবে যে ক’টা ছবি এ পর্যন্ত বানিয়েছি, সবই কিন্তু আগেকার লেখা।
পত্রিকা: কী ভাবে ঠিক করেন, কোন কাজটাকে আগে সময় দেবেন?
তিগমাংসু: যেটার তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা আছে, সেটাকে প্রেফারেন্স দিই। ‘পান সিংহ তোমর’ নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে। এখন ভাল লাগছে যে ওটা ফেস্টিভ্যালে ডাক পাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, আমার অসংখ্য ধন্যবাদ আনন্দবাজার পত্রিকাকে। আপনাদেরই প্রকাশনার ‘সানডে’ ম্যাগাজিনে আমি প্রথম ‘পান সিংহ তোমর’-এর কথা পড়েছিলাম। যত দূর মনে পড়ছে, ১৯৮৩-র মার্চের একটা ইস্যু। কভারটা ছিল ‘ব্যান্ডিট কুইন’ নিয়ে। ‘ব্যান্ডিট কুইন’-এ আমি পরিচালক শেখর কপূরের অ্যাসিসট্যান্ট ছিলাম। ১৯৯১ সালে সিনেমাটা নিয়ে রিসার্চ করতে গিয়ে ‘সানডে’ পত্রিকাটা হাতে পাই। ওখানে পান সিংহ তোমরের উল্লেখ ছিল। এক বাঙালি সাংবাদিক লিখেছিলেন। সারনেমটা মনে আছে, ‘ভট্টাচার্য’।
পত্রিকা: নামটা?
তিগমাংসু: এখন মনে পড়ছে না। আমি ওই ম্যাগাজিনটা অন্তত তিনবার হারিয়েছি। তিন তিন বার আমার এক অ্যাসিসট্যান্টকে পাঠিয়েছিলাম আনন্দবাজারের দপ্তরে। আবার সেটা জোগাড় করে আনার জন্য। ইন্টারনেটে কোনও ইনফরমেশন ছিল না পান সিংহ-কে নিয়ে। ওই আর্টিকেলটাই ছিল একমাত্র সোর্স। ১৯৯৯ অবধি আমি ওটাকে আগলে আগলে রেখেছিলাম।
পত্রিকা: ‘পান সিংহ তোমর’ করার বহু আগে থেকেই তো অভিনেতা ইরফানের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব...
তিগমাংসু: সেই ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-র দিন থেকে। আমার থেকে দু’বছরের সিনিয়র ছিল ইরফান। খুব ইনট্রোভার্ট। ক্লাসে কখনওই বেস্ট অ্যাক্টর ছিল না। তখন অলোক চট্টোপাধ্যায় বলে একজন ছিল, যাকে ওদের ক্লাসের সব থেকে ভাল অভিনেতা বলা হত। এখন ভূপাল-এ থাকে। এনএসডি-তে ইরফান হস্টেলের সব চেয়ে খারাপ রুমটায় থাকত। গোর্কির একটা নাটক ‘লোয়ার ডেপথ’-এ ইরফানকে দেখে আমি পুরো ছিটকে যাই।
|
|
বুলেট রাজা। |
পত্রিকা: আপনার সিনেমা মানেই ইরফান থাকবেন। সেখানে ‘বুলেট রাজা’-য় সইফ আলি মুখ্য ভূমিকায়...
তিগমাংসু: ইরফান সিনেমাটা করছিল। কিন্তু একটা বিদেশি সিনেমার শ্যুটিং-এর জন্য ওকে দেশের বাইরে যেতে হয়। মাত্র বারো দিনের কাজ ছিল আমার ফিল্মে। কিন্তু ঠিক ওই সমটাতেই ও আটকা পড়ে।
পত্রিকা: ইরফান আপনাকে বলে দিলেন, ছবিটা করতে পারব না!
তিগমাংসু: হু। বলল, অসুবিধের কী আছে! আমরা বন্ধু। সেটাই তো বন্ধুত্বের সুবিধে।
পত্রিকা: বন্ধুরা আবার বেশ স্পর্শকাতরও হয়ে যেতে পারেন। ‘এত বড় হয়ে গেছে যে আমার সিনেমাটা করল না’ গোছের একটা ভাব তো আসতেই পারে...
তিগমাংসু: ঠিকঠাক বন্ধু হলে ওটা হবে না। এই দেখুন না, প্রত্যেক বছর ইরফান যেখানেই থাকুক না কেন, আমার সঙ্গে হোলি সেলিব্রেট করে। হোলির সময় আমরা লখনউ-এ ‘বুলেট রাজা’র শ্যুটিং করছিলাম। ইরফান মুম্বই থেকে লখনউ চলে এসেছিল হোলি খেলবে বলে। এর পরেও লোকে যা ইচ্ছে বলতে পারে। সেটা পাত্তা না দেওয়াই আমার কাজ।
পত্রিকা: বন্ধুত্বটা কী ভাবে পালটেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে?
তিগমাংসু: গাঢ় হয়েছে। ওর স্ত্রী সুতপা এনএসডি-তে ছিল। এখন তো ‘উই আর লাইক ফ্যামিলি’। বিশ্বাস করবেন, আমাদের ঘনিষ্ঠ তিন-চার জন বন্ধুর বাচ্চাও প্রায় একসঙ্গেই জন্মেছে?
পত্রিকা: মানে? এটাও বন্ধুত্বের কারণে মিলিয়ে মিলিয়ে দিনক্ষণ ঠিক করা?
তিগমাংসু (হাসি): জানি না। তবে তিন-চারজন ক্লোজ বন্ধুদের স্ত্রী এক সঙ্গে প্রেগন্যান্ট ছিল। এই নিয়ে কত হাসাহাসি হত! কখনও ইরফান ওই তিন-চারজন প্রেগনেন্ট মহিলাকে নিয়ে একসঙ্গে বাজারে যেত। কখনও আমি। তবে আজকে আমি নিজেকে ইরফানের সব চেয়ে বড় ক্রিটিক বলে মনে করি। ওর কোনও কাজ ভাল না লাগলে, মুখের ওপর বলে দিই। ইরফান চুপ করে শোনে। আমার ক্ষেত্রেও তাই। আমাদের মধ্যে ঈর্ষা বা ইগো কোনও কিছু্ই কাজ করে না। ও অভিনেতা, আমি পরিচালক। আমাদের মধ্যে তো কোনও তুলনা হতে পারে না।
পত্রিকা: কিন্তু আপনাকে তো এখন শুধু পরিচালক বলা যাবে না...
তিগমাংসু: আমি তো বন্ধুদের জন্য অভিনয় করেছি। ইরফান আর আমার অভিনয়ের কোনও তুলনাই হয় না।
পত্রিকা: অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করলেন যে! সেটাও কি বন্ধুত্বের খাতিরে নাকি?
তিগমাংসু: আরে, অমিতাভ বচ্চন বলে কথা! এক দিন কাজ করেছি। ‘বুলেট রাজা’-র জন্য ডেট নিতে পারিনি। আবার ডিসেম্বরে শ্যুটিং হবে। যখন অমিতজিকে মিট করলাম, আমি কেবল বললাম, ‘প্লিজ, রহেম করনা’। ওই সিরিয়ালে আমি এক জন করাপ্ট মন্ত্রীর চরিত্রে। আর উনি একজন সৎ বিল্ডার। সিরিয়ালটা ওঁর জীবন নিয়ে।
পত্রিকা: সইফ আলি খান বলছিলেন আপনাদের দুজনের মধ্যে নাকি অনেক মিল...
তিগমাংসু: হ্যাঁ, আমি তো সইফকে গারফিল্ড বলে ডাকি। ওর দারুণ রসবোধ। বেশ দুষ্টু। আমরা দুজনেই ডিপ পার্পলের ভক্ত। দুজনে রক মিউজিক পছন্দ করি। দুজনে গিটারও বাজাতে পারি। ও বলে, হিন্দি সিনেমা দেখে না। আমিও খুব একটা দেখি না।
পত্রিকা: কেন? কারণটা কী?
তিগমাংসু: ইম্পর্ট্যান্ট সিনেমাগুলো দেখি। তবে আগে যত দেখতাম, এখন তা দেখি না। ‘রামলীলা’ দেখেছি। ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ দেখিনি।
পত্রিকা: কেন?
তিগমাংসু: কোনও পার্টিকুলার কারণ নেই...ফারহানকে দেখতে ভাল লেগেছে। একটা কথা বলব, আমি ‘পান সিংহ তোমর’ বানিয়েছি। মিলখার সঙ্গে দেখা করেছিলাম ফিল্মটা বানানোর আগে। মিলখা সিংহ একমাত্র মানুষ, যিনি পান সিংহ সম্পর্কে বলার জন্য আমাদের কাছে পয়সা চেয়েছিলেন। শুধু ক’টা গল্প শেয়ার করার জন্য এই পয়সা চাওয়াটা আমার কাছে, সত্যি বলছি, ‘ডিসইলিউসনিং’ লেগেছিল। মিলখা কিন্তু পান সিংহকে ভাল করে চিনতেন। ওরা কনটেম্পোরারি। মিলখা অ্যাথলেটিক্স টিমের ক্যাপটেন। পান সিংহ স্টিপল্ চেজ্-এ দৌড়তেন। ওঁরা বন্ধু। কত গরিব খেলোয়াড়ের কাছে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছি। কেউ পয়সা চাননি। মিলখার তো কত বড় বাড়ি চণ্ডীগড়ে। অনেক টাকা। ছেলে গল্ফার। তবু ...
পত্রিকা: এমনও তো হতে পারে, উনি নিজে চাননি, কিন্তু মাঝের কোনও এজেন্ট চেয়ে বসেছিলেন...
তিগমাংসু: জানি না। এজেন্টকে কিছু পয়সা দিতে হয়েছিল...যাক সে কথা...আমি অনেক সিনেমা দেখি, কিন্তু আগে ফিল্ম দেখা ছিল বিনোদন। ক্লাস টেন থেকে সিনেমা দেখছি। তখন ত্রুফো, গদার দেখতাম, যদিও কিছু বুঝতাম না। এটুকু জানতাম, যে দাদারা দেখেছেন, তাই ফিল্মটা নিশ্চয়ই ভাল। বহু বছর পর আবার ফিল্মগুলো দেখে বুঝতে পারি। এখন তো পরিচালনা আমার পেশা। তাই অবজেক্টিভলি বিনোদন খোঁজার জন্য ছবি দেখি না। অভিনেতাদের চিনি। তাই যখন একটা সিনেমা দেখি আমাকে তার মধ্যে এমন রসদ খুঁজতে হয় যা আমি অন্য কোথাও শিখতে পারব না। সিনেমা দেখাটা আমার কাছে অনেকটা ওয়ার্কশপের মতো। বাট নাইন্টি নাইন পার্সেন্ট কেসে সিনেমা ডাজন্ট গিভ মি দ্যাট। |
|
পান সিংহ তোমর। |
পত্রিকা: আপনার মতো একজন দর্শককে হিন্দি সিনেমা টানতে পারছে না। কারণটা কী মনে হয় আপনার?
তিগমাংসু: এক্সিবিশন সেন্টারটা ছড়িয়ে পড়ছে। এখন ভারতে সাড়ে বারো হাজার থিয়েটার। তার মধ্যে ছ’হাজার সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমার জন্য। লোকে কিন্তু আজকাল ছবি দেখছে। ফুটফল বাড়ছে। ২০১২-তে কত ধরনের সিনেমা হয়েছে, বলুন তো? ‘ভিকি ডোনার’, ‘পান সিংহ তোমর’, ‘ইংলিশ ভিংলিশ’, ‘কহানি’... কিন্তু এটা মনে রাখবেন যে সিনেমা একটা শিল্প। কিন্তু এই শিল্প করতে গেলে পয়সা লাগে। শিল্প আর পয়সা এই ব্যালান্সটা করতে পারলেই সিনেমা যথাযথ হয়ে ওঠে। সেটা আমি শেখর কপূর আর মণিরত্নমের মধ্যে দেখেছি। দুজনের সঙ্গেই কাজ করেছি। দুজনে এখনও সিনেমাটাকে আর্ট হিসেবে দেখেন।
পত্রিকা: ‘বুলেট রাজা’-র মধ্যে এমন কী আছে, যা আপনি শেখর কপূর আর মণিরত্নমের কাছে শিখেছেন?
তিগমাংসু: মণি স্যার ইজ সো ইভলবড ভিস্যুয়ালি। একটা শট নেওয়ার থাকলে, সেটা নিতেই হবে। কোনও কমপ্রোমাইজ করেন না। আমি ভিস্যুয়ালি অত ‘ইভলবড’ না। চেষ্টা করি কমপ্রোমাইজ না করে এক শিল্পীর কাছ থেকে তাঁর শ্রেষ্ঠ পারফরমেন্সটা নিতে। সইফকে যখন এই ছবিতে নিই, ও আমার বন্ধু ছিল না। কিন্তু ‘পান সিংহ তোমর’ দেখেছিল। ওর ভাল লেগেছিল। আমার ওপর বিশ্বাস ছিল। শুধু শ্যুটিংটা সিংক সাউন্ডে করিনি। কারণ সেটা করলে ওর অভিনয়টার পারফেকশন আনার চেয়ে বেশি জরুরি হত উচ্চারণে পারফেকশন আনা।
পত্রিকা: কলকাতায় শ্যুটিং করে গেলেন। অভিজ্ঞতা কেমন?
তিগমাংসু: বাড়িয়ে বলব না। কলকাতা গিয়েছিলাম বেশ সম্ভ্রম নিয়ে। দশ বছর বয়েসে কলকাতায় যখন যাই, তখন মনে আছে, লাইট হাউসে ‘অপারেশন ডে ব্রেক’ আর রাজেশ খন্নার ‘আশিক হুঁ বাহারোঁ কা’ দেখেছিলাম। পুরী গিয়েছিলাম ওখান থেকে। এ বার গেলাম কাজে। দুলাল লাহিড়ি, মৌমিতা গুপ্ত, শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, সর্বাণী চট্টোপাধ্যায়, দেবযানী ঘোষ আর ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায় কাজ করলেন আমার ফিল্মে। অভিজ্ঞতা বেশ ভাল।
পত্রিকা: এর পর কী করবেন?
তিগমাংসু: ছুট্টি। একটানা কাজ করেছি। এ বার পরিবারের জন্য সময় দেব। |
|
|
|
|
|