নারী নির্যাতন রোধে প্রচার নাটক-স্লোগানে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
বিয়ে হয়েছিল বছর খানেক আগে। কিন্তু দাবিমতো পণের টাকা না দিতে পারায় শ্বশুরবাড়িতে ১৯ বছরের মেয়েটিকে চরম অত্যাচার সহ্য করতে হত। অ্যাপেন্ডিসাইটিস্ ধরা পড়ার পরেও চিকিৎসা না করিয়ে মারধর করে বাপেরবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মুনমুন মান্নাকে। সেরে উঠে আর গড়বেতায় শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যাননি। বেলপাহাড়ির শুকজোড়ায় বাপের বাড়িতেই আছেন। মহিলা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সুচেতনা’-র সহায়তায় স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মুনমুন। স্বামীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। এখন খোরপোষের মামলা লড়ছেন মুনমুন। |
|
পোস্টারে প্রতিবাদ। —নিজস্ব চিত্র। |
শিলদার পুতুল দাসের বিয়ে হয়েছিল মাত্র ১৬ বছরে। পেশায় মুচি গরিব বাবা পাত্রপক্ষের চাহিদামতো নগদ টাকা ও যৌতুক দিতে পারেননি। বিয়ের পরই পণের দাবিতে পুতুলের উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু হয়। বাপেরবাড়িতে ফিরে আসেন পুতুল। তিনিও ‘সুচেতনা’র সাহায্য নিয়ে মামলা ঠুকে স্বামীর কাছ থেকে খোরপোষ আদায় করে ছেড়েছেন।
শুক্রবার বাল্য বিবাহ ও পারিবারিক হিংসা প্রতিরোধে আয়োজিত ঝাড়গ্রামের এক সভায় নিজেদের কথা শোনালেন দুই ‘প্রতিবাদী’ তরুণী। জানালেন স্বনির্ভর হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন। বাল্য বিবাহ ও নারী নিগ্রহ প্রতিরোধে স্লোগান লেখার প্রতিযোগিতারও আয়োজন ছিল। তাতে যোগ দেন কলেজ ছাত্রী, অঙ্গনওয়াড়িকর্মী ও স্বসহায়ক দলের সদস্যরা। সবশেষে ছিল সচেতনতা মূলক নাটক ‘তিনটি মেয়ের গল্প’।
শহরের বেসরকারি অতিথিশালায় ওই সভায় এসেছিলেন ঝাড়গ্রামের এসডিপিও বিবেক বর্মা, রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাইচাঁদ মাসান্ত, সাহিত্যিক শৈলজানন্দ হাঁসদা। ‘সুচেতনা’র সম্পাদিকা স্বাতী দত্ত পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, রাজ্যে গত এক বছরে নথিভুক্ত নারী নির্যাতনের সংখ্যা ২৯,১৩৩টি। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ অগস্ট পর্যন্ত জঙ্গলমহলের তিনটি ব্লকের ৩৬টি গ্রামে সমীক্ষা চালিয়ে তাঁরা ২১৪টি নারী নির্যাতনের ঘটনা পেয়েছেন। জঙ্গলমহলের চারটি ব্লকে গত এক বছরে ৩৮৬টি বাল্যবিবাহের ঘটনাও জানা গিয়েছে। |
|
নারী নিগ্রহ ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে ঝাড়গ্রামে সেমিনার। |
পুলিশের সহযোগিতায় ৪৭টি বাল্যবিবাহ আটকানো গিয়েছে। বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি বেলপাহাড়ি ও সাঁকরাইল ব্লকে। পুলিশ-প্রশাসনের আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়ে স্বাতীদেবী বলেন, “বেলপাহাড়ি, গোপীবল্লভপুর ও সাঁকরাইলের প্রতি ৫টি পরিবারে একজন করে মহিলা পণজনিত কারণে অথবা মদ্যপ স্বামীর দ্বারা দৈনিক অত্যাচারিত হন। আশ্রয় হারানোর ভয়ে তাঁরা পুলিশে অভিযোগ করতে চান না।” এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) বিবেক বর্মার আশ্বাস, “পুলিশ সব সময় জনগণের পাশে রয়েছে। তবে মানুষের চেতনার উন্মেষ না ঘটলে এই সব অপরাধ একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয়।” |
|