নতুন মোড় নিল ফুটবল বিশ্ব তোলপাড় করা ম্যাচ গড়াপেটা বিতর্ক। ‘ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির’(এনসিএ) তদন্তের ভিত্তিতে গ্রেফতার দুই ব্যক্তিকে এ দিন কোর্টে পেশ করা হল। চান শঙ্করণ এবং কৃষ্ণা সাঞ্জে গণেশন নামক এই দু’জনের বিরুদ্ধে বুকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অভিযোগ উঠেছে।
শঙ্করণ ও গণেশন দু’জনকেই এ দিন স্ট্র্যাফোর্ডশায়ার আদালতে পেশ করা হয়। এনসিএর তদন্তে ফাঁস হয়েছে যে, শঙ্করণ ও গণেশন ম্যাঞ্চেস্টার থেকে ম্যাচ গড়াপেটার চক্রান্ত চালাতেন। বিভিন্ন দেশের বুকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত একাধিক ম্যাচ গড়াপেটা করেন তাঁরা। বিশেষ করে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ডের নিচু ডিভিশনের ম্যাচ। এই দু’জনের মধ্যে গণেশনের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। এ দিন পাঁচ মিনিটের শুনানির পরে আদালত ঘোষণা করে, পরবর্তী শুনানি হবে ১৩ ডিসেম্বর বার্মিংহ্যামের ক্রাউন কোর্টে। শঙ্করণ ও গণেশনের আইনজীবী পল জেনকিন্স জানিয়েছেন যে, কয়েক দিন পরেই জামিনের জন্য আবেদন করতে পারবেন দোষীরা। ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যমে যা খবর, তাতে সর্বাধিক দশ বছরের জেল হতে পারে দোষীদের।
|
|
|
“আমার বিশ্বাস ইপিএল ৯৯.৯ শতাংশ
পরিষ্কার। যখন সবাই গোল করার পরে
ফুটবলারদের উচ্ছ্বাস দেখে, তখনই
বোঝা যায় এই লিগ কলঙ্কমুক্ত।”
আর্সেন ওয়েঙ্গার
|
“কেউ যে ফুটবল ম্যাচ গড়াপেটা করতে
পারে,
এই ব্যাপারটা বিশ্বাস করা খুব কঠিন।
আমার
তো মাথায়
আসে না মাঠে নেমে কেউ
কী ভাবে গড়াপেটা করে।
আমি বিশ্বাস করি
যে, ফুটবল আবেগের খেলা।” হোসে মোরিনহো |
|
শঙ্করণ এবং গণেশন ছাড়াও ম্যাচ গড়াপেটা কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও চার জনকে। যাঁদের নাম এখনও গোপন রেখেছে এনসিএ। তারা জানিয়েছে, এই কাণ্ডে জড়িত আরও এক জন আছেন, যাঁকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার তদন্তের ভিত্তিতে প্রাক্তন বোল্টন ফুটবলার দেলরয় ফ্যাসেকেও গ্রেফতার করা হয়। যা শুনে ফ্যাসের প্রাক্তন বোল্টন ম্যানেজার স্যাম অ্যালারডাইস বলেন, “ডেলরয় ম্যাচ গড়াপেটা করেছে শুনে আমি খুব অবাক হয়েছি। আশা করছি সত্যিটা খুব তাড়াতাড়ি জানা যাবে।”
গড়াপেটা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরপরই উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছে ফুটবলবিশ্ব। সন্দেহের তির এড়াতে পারেনি বিশ্বের বেশ কিছু নামী লিগ। তবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গড়াপেটার কালো ছায়া নেই বলে দাবি করছেন আর্সেনালের কিংবদন্তি ম্যানেজার আর্সেন ওয়েঙ্গার। “আমার বিশ্বাস প্রিমিয়ার লিগ ৯৯.৯ শতাংশ পরিষ্কার। যখন সবাই গোল করার পরে ফুটবলারদের উচ্ছ্বাস দেখে, তখনই বোঝা যায় এই লিগ কলঙ্কমুক্ত,” বলেছেন ওয়েঙ্গার। সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, “শুধু প্রিমিয়ার লিগ কেন, ইংল্যান্ডের ছোট ডিভিশনেও সবাই ফুটবল ভালবাসে। আর যারা ফুটবল ভালবাসে, তারা এ রকম করতেই পারে না।”
ম্যাচ গড়াপেটা ওয়েঙ্গারের কাছে নতুন কিছু নয়। ১৯৯২-’৯৩ মরসুমে ওয়েঙ্গার যখন ফরাসি ক্লাব মোনাকোর ম্যানেজার ছিলেন, তখন ম্যাচ গড়াপেটার জন্য শাস্তি পায় মার্সেই। কিন্তু ওয়েঙ্গার মনে করছেন, প্রায় দু’দশক আগের ওই ঘটনার সঙ্গে বর্তমান কেলেঙ্কারির কোনও মিল নেই। তাঁর কথায়, “মার্সেই ঘটনাটা ফুটবলবিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল। কিন্তু মনে রাখবেন, ফুটবল তখন এতটা পরিষ্কার ছিল না। আজ পরিস্থিতি বদলেছে। আর আমি বিশ্বাস করি না যে ফ্রান্সে এখনও ম্যাচ ফিক্সিং হয়।”
গড়াপেটা প্রসঙ্গে ওয়েঙ্গার পাশে পেয়েছেন এমন এক ব্যক্তিত্বকে, যিনি ক্লাব ডাগআউটে তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি— চেলসি ম্যানেজার হোসে মোরিনহো। গড়াপেটা নিয়ে মোরিনহো বলেছেন, “কেউ একটা ফুটবল ম্যাচ গড়াপেটা করতে পারে, এই ব্যাপারটা বিশ্বাস করা খুব কঠিন। আমার তো মাথায় আসে না মাঠে নেমে কেউ কী ভাবে গড়াপেটা করে। আমি সব সময় বিশ্বাস করি যে, ফুটবল আবেগের খেলা।” এখানেই না থেমে মোরিনহো আরও বলেছেন, “ফুটবল অন্য সব পেশার চেয়ে একদম আলাদা। আমাদের পেশায় সবাই খেলাটাকে ভালবাসে। অনেক পেশা আছে যেখানে ইচ্ছে ছাড়াই কাজ করতে হয় অনেককে। কিন্তু যারা ফুটবলকে নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে নেয়, তারা সবাই-ই খেলাটাকে ভালবাসে।” |
গড়াপেটানামা |
• সমস্যা কতটা গভীর?
ইংল্যান্ডে ছ’জনের গ্রেফতারি হয়তো হিমশৈলের চূড়াটুকুই। বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিপদ হিসেবে ‘গড়াপেটা’কে চিহ্নিত করেছে ফিফা আর উয়েফা। গড়াপেটায় জড়িত প্রমাণ হলে আজীবন নির্বাসনের শাস্তি ঘোষণা ফিফার।
• কী ভাবে অপারেশন?
এক বা একাধিক প্লেয়ার বা রেফারিকে নির্দিষ্ট একটি রেজাল্টের দিকে ম্যাচ নিয়ে যেতে বাধ্য করা। ম্যাচের প্রথম পাঁচ মিনিটেই হলুদ কার্ড দেখে টোপ গেলার সঙ্কেত প্লেয়ারের। • কেন প্লেয়াররা প্রলুব্ধ হয়?
কম ঝুঁকিতে প্রচুর অর্থ উপার্জনের লোভ। যাঁদের গোটা মাসে পাঁচ হাজার পাউন্ড উপার্জন তাঁদের একটা ম্যাচেই সাত হাজার পাউন্ড আয়ের টোপ। |
বিশ্বের কোথায় জাল ছড়িয়ে? |
• ব্রাজিল (হুইসল কেলেঙ্কারি— দুই রেফারির বিরুদ্ধে গড়াপেটার অভিযোগে তদন্ত)।
• ইতালি (ক্যালসিপোলি কেলেঙ্কারি— গড়াপেটার অভিযোগে গ্রেফতার ৪০)।
• সিঙ্গাপুর (গড়াপেটাকারীদের নেটওয়ার্ক-কেন্দ্র, সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার ১৪)।
• ফিনল্যান্ড (ফিনিশ লিগে এক গড়াপেটাকারীর ১১ প্লেয়ারকে ঘুষ)।
• নাইজিরিয়া (দু’বছর আগে আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে আয়োজিত ফ্রেন্ডলি ম্যাচ সন্দেহের তালিকায়)।
• চিন (সাংহাই শেনহুয়া ক্লাবের ২০০৩-এর খেতাব কেড়ে নিয়ে ৩৩ জনের উপর নিষেধাজ্ঞা)।
• অস্ট্রেলিয়া (চার ব্রিটিশ প্লেয়ারের বিরুদ্ধে গড়াপেটার তদন্ত)।
• তুরস্ক (২০১১-এ বড়সড় কেলেঙ্কারিতে জড়ায় ফেনেরবাখ ক্লাব)। |
|