নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
কেন পেল? পেয়ে কী করল? কেন পেল না?— মূলত এই তিন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এক দিনের সফরে তিনটি জেলার নির্বাচিত তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখলেন ‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারন্যাশনাল চিলন্ড্রেন্স ইমারজেন্সি ফান্ড’ (ইউনিসেফ)-র প্রতিনিধিদল। রাজ্য সরকারের ‘নির্মল বিদ্যালয় অভিযান’, ‘শিশুমিত্র’ পুরস্কার প্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলির বৈশিষ্ট্য খুঁজে দেখাই ছিল ইউনিসেফ-এর প্রতিনিধি দলের উদ্দেশ্য।
গত বছর থেকে রাজ্যের ৭২৮টি চক্র জুড়ে চালু হয় নির্মল বিদ্যালয় অভিযান। সেই সঙ্গে বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো, পড়াশুনোর মান, হাতে-কলমে শিক্ষা, পরিচ্ছন্নতা-সহ নানা দিক বিবেচনা করে দেওয়া শুরু হয় ‘শিশুমিত্র’ পুরস্কার। নিয়ম অনুযায়ী, সারা রাজ্যের প্রতিটি চক্রের একটি বিদ্যালয়কে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ভাবেই নির্মল বিদ্যালয়ের আওতায় আসা বাছাই করা পাঁচটি স্কুলকে মনোনীত করা হয় শিশুমিত্র পুরস্কারের জন্য।
ইউনিসেফ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর রাজ্যের ৭২৮টি সার্কেলের মধ্যে ৬০ শতাংশ পয়েন্ট পাওয়ায় ৬৯৩টি বিদ্যালয়কে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার ও প্রতি জেলা থেকে দু’টি করে মোট ৪০টি বিদ্যালয়কে শিশুমিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। নির্মল অভিযানের আওতায় আসা বিদ্যালয়গুলিকে ৫ হাজার টাকা ও শিশুমিত্র পাওয়া বিদ্যালয়গুলিকে ২৫ হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। এতে উৎসাহ বাড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়াদের। ইউনিসেফের কলকাতা শাখার প্রতিনিধি পলাশ সরঙ্গীর কথায়, “এই অভিযানের যাবতীয় বিষয় রাজ্য সরকার দেখভাল করে। আমরা শুধুমাত্র টেকনিক্যাল দিকগুলি দেখি।” |
শুক্রবার সেই পরিকাঠামোগত দিকগুলি পর্যবেক্ষণ করতে দিল্লি থেকে এক দিনের সফরে আসেন ইউনিসেফের প্রতিনিধি ললিতা সচদেব ও রুচি মোহান্তি। তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন কলকাতার প্রতিনিধি পলাশ সরঙ্গী ও এসএম নাভে, ব্যাটারি প্রস্তুতকারক সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াইএফ রবি প্রমুখ। এ দিন বেছে নেওয়া হয় ২০১৩ সালে দু’টি পুরস্কারপ্রাপ্ত খড়্গপুরের রূপনারায়ণপুর প্রাইমারি স্কুল, হাওড়ার এককবরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২০১২ সালে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মেচেদা প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। তিনটি স্কুলে গিয়েই দেখা হয় পুরস্কার পেয়েও খড়্গপুরের স্কুলটির উন্নয়ন জারি রয়েছে কি না, মেচেদার স্কুল কেন শিশুমিত্র পুরস্কার পেল না। হাওড়ার বিদ্যালয়টিই বা কী কারণে দু’টি পুরস্কার পেল। ইত্যাদি বিষয়গুলি।
ধরা যাক রূপনারায়ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা। স্কুলে ঢুকলেই দেখা যাবে সামনে সাজানো ফুলের বাগান। সুসজ্জিত স্কুলের দেওয়ালে শীতের সকাল, বেশ কিছু ঘুড়ি ওড়ানোর চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যা দেখে পড়ুয়াদের শীত-সহ অন্য ঋতুর ধারণা, সংখ্যা জ্ঞান জন্মাচ্ছে। শৌচালয় থেকে শ্রেণিকক্ষ সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা বজায় রয়েছে। এ ভাবেই এগিয়ে চলেছে স্কুলটি। প্রধান শিক্ষক বীরেন পাল বলেন, “তফসিলি জাতি অধ্যুষিত এই এলাকার পড়ুয়ারা নিজেরা নানা জিনিস শিখছে। বাড়িতে গিয়ে তাঁরাই অন্যদের তা শেখাচ্ছে। এটাই সাফল্যের।”
পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদার বিদ্যালয়েও দেখা গিয়েছে পরিচ্ছন্নতা, শৃঙ্খলাবোধ। হাওড়াতে আবার সদ্য সাজানো বিদ্যালয়ে রয়েছে সমস্ত উপকরণই। সেই উদাহরণগুলিকেই সরেজমিনে দেখেন ইউনিসেফের প্রতিনিধিদলটি। দিল্লি থেকে আসা ওই প্রতিনিধি দলের প্রধান ললিতা সচদেবা জানান, “পরিকাঠামোর উন্নতি সংক্রান্ত নানা দিক জানতে আমরা এসেছিলাম। দিল্লি ফিরে বিস্তারিত আলোচনা করব।”
|