ভাইয়ের খুনের সাক্ষ্য দেওয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই ভদ্রেশ্বরের ব্যবসায়ী সুভাষ সাউকে দুষ্কৃতীরা খুনের চেষ্টা করে বলে অনুমান তদন্তকারী অফিসারদের। কেননা, সুভাষবাবুর পরিবারের লোকজন সে কথাই পুলিশকে জানিয়েছেন। তবে, এই ঘটনায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
ভদ্রেশ্বরের চাঁপদানি বাজারে সুভাষবাবুর বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের দোকান রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ক্রেতার ভিড়ে ঠাসা ওই বাজারে হনুমান টুপি পরা তিন দুষ্কৃতী এসে দোকানে ঢুকে সুভাষবাবুকে লক্ষ করে গুলি চালাতে শুরু করে। একটি গুলি লাগে তাঁর মাথায়। অন্য দু’টি গুলি কাঁধে ও হাতে। পালানোর সময় এক দুষ্কৃতীকে স্থানীয় লোকজন ধরে ফেলেন। গণপ্রহারে সে মারা যায়। বাকি দুই দুষ্কৃতী পালায়।
গত বছর ডিসেম্বরে সুভাষবাবুর দোকানের কাছেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন তাঁর ভাই রাজু। তিনি দাদার সঙ্গেই দোকান সামলাতেন। দাবিমতো দুষ্কৃতীদের তোলা না দেওয়ায় তাঁকে খুন করা হয় বলে এলাকারই এক দুষ্কৃতীর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুভাষবাবু। পুলিশ অভিযুক্ত এক ভাইকে গ্রেফতার করলেও অন্য জনকে এখনও ধরতে পারেনি। আগামী সোমবার থেকে চন্দননগর আদালতে সেই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা।
এসডিপিও (চন্দননগর) সৈকত ঘোষ বলেন, “শীঘ্রই আমরা আততায়ীদের ধরে ফেলব। মনে হচ্ছে, ভাইয়ের খুনের মামলায় সুভাষবাবু যাতে সাক্ষ্য দিতে না পারেন, সেই কারণেই তাঁকে খুনের চেষ্টা করা হয়। সব দিক খোলা রেখেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি।”
ভাইয়ের খুনের মামলা প্রত্যাহারের জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই সুভাষবাবু হুমকি-ফোন পাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর কাকা প্রদীপ সাউ। সুভাষবাবুর দোকানের পাশেই তেলেভাজা বিক্রি করেন তিনি। প্রদীপবাবু বলেন, “কিছু দিন ধরেই ভাইয়ের খুনের মামলা প্রত্যাহারের জন্য সুভাষের কাছে ফোন আসছিল। সুভাষ অবশ্য ওই হুমকিকে গুরুত্ব দেয়নি। মনে হচ্ছে, সেই কারণেই ওকে খুনের চেষ্টা করা হল।”
সুভাষবাবু বর্তমানে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। গণপিটুনিতে হত দুষ্কৃতীর নাম শুক্রবার রাত পর্যন্ত জানতে পারেনি পুলিশ। তবে, ভরা বাজারে যে ভাবে সুভাষবাবুকে খুনের চেষ্টা করা হয়, তাতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ী মহলে।
কয়েক দিন আগে হুগলির কৃষ্ণপুর বাজারে দু’দল দুষ্কৃতীর গুলির লড়াইয়ে এক দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়। গুলিতে জখম হন এক ছাত্রী ও এক শিক্ষক। ওই ঘটনায় চন্দননগর থেকে গ্রেফতার করা হয় এক দুষ্কৃতীকে। তার পরে ভদ্রেশ্বরের এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মানুষ। |