নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
প্রশাসনিক সদিচ্ছার অভাব। যার ফলে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ময়ূরেশ্বর থানার ষাটপলশা সমবায় হিমঘর। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় আলু চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন ওই সমবায় হিমঘরের সদস্যভুক্ত চাষিরা। তাঁদের ক্ষোভ, প্রশাসন একটু উদ্যোগী হলেই অনেকদিন আগেই হিমঘরটি চালু করা যেত। কিন্তু বার বার আবেদন করা সত্বেও প্রশাসনের তরফে কোনও সদর্থক ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি বলে ক্ষোভ চাষিদের।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৭৮ সালে ষাটপলশা সংলগ্ন বড়ডিবুর মৌজায় প্রায় ২০ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে তিন হাজার মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন এই সমবায় হিমঘরটি চালু হয়। হিমঘরের অংশীদার হন ২৫০০ জন চাষি। তাঁদের লগ্নির পরিমাণ ছিল লক্ষাধিক টাকা। ২৫ টাকা দিয়ে শেয়ার কিনেছিলেন স্থানীয় কৃষিজীবী খেলাফত হোসেন, অজিত শেখরা। হিমঘরের জন্য জমি দিয়ে ৬ হাজার টাকা মূল্যের অংশীদারিত্ব পেয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ, আনন্দ ঘোষরা। কিন্তু ১৯৯৯ সালে লোকশানের ধাক্কায় হিমঘরটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন বেশ কিছু চাষি। তাঁরা বলেন, “কোনও লাভের আশায় আমরা শেয়ার কিনিনি। নিজেদের একটি হিমঘর হবে আমাদের শেয়ার কেনা। লভ্যাংশ বলতে সদস্য হিসেবে আলু সংরক্ষণের ভাড়া বাবদ প্যাকেট প্রতি ১ টাকা করে ছাড় পেতাম। সেই সুযোগটুকুও হারাতে হয়েছে।” তাঁদের আক্ষেপ, “বার বার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরেও হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে।” |
ঝোপজঙ্গলে ভরে গিয়েছে ষাটপলশা সমবায় হিমঘর। ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি। |
হতাশ হয়ে পড়েছেন হিমঘরের কর্মীরাও। চালু অবস্থায় ওই হিমঘরে কর্মরত ছিলেন ১২ জন। কাজ হারিয়ে অনটনে দিন কাটাচ্ছেন অধিকাংশ কর্মী। আবার কেউ কেউ মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ম্যানেজার শিশিরকুমার ঘোষ, কোষাধ্যক্ষ বৈদ্যনাথ মণ্ডলরা বলেন, “হিমঘর চালু করা জন্য আমরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সদস্য সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে খুলছে খুলবে আশ্বাস শুনতেই চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে গিয়েছি।” অথচ হিমঘরটি চালু হলে এলাকার চাষিরা উপকৃত হবেন। কারণ, জেলার অন্যতম আলু উৎপাদক এলাকা হিসেবে পরিচিত ষাটপলশা। এখানে ব্যক্তি মালিকানায় একটি হিমঘর থাকলেও সমবায় হিমঘরটি বীজ সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত ছিল বলে চাষিদের দাবি। তাঁদের কথায়, হিমঘর বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে নিজেরা বীজ সংরক্ষণের বদলে এখন চড়া দামে বাজার থেকে কিনে আলু চাষ করছি।”
সমবায় দফতর সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, ওই হিমঘরের বিদ্যুৎ বিল বাবদ বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা। ২০০৪ সালে বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে কিস্তিতে বকেয়া বিল পরিষোধের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে হিমঘর চালু করার জন্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে আধুনিকীকরণ করা হয়েছিল। চাষিদের অভিযোগ, তার পরে আর কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। দেখভালের অভাবে মাঝখান থেকে একের পর এক যন্ত্র লোপাট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ওখানে অসামাজিক কাজকর্ম চলে।
সম্প্রতি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা দুবরাজপুরের চাষিমঙ্গল সমবায় হিমঘরটি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তাই ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতির কাছে ষাটপলশার হিমঘরটি চালু করারও দাবি জানিয়েছেন এলাকার চাষিরা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্যাণী দাস আশ্বাস দিয়েছেন, “হিমঘরটি চালু করার ব্যাপারে জেলা সমবায় দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।”
জেলা সমবায় সমিতি সমূহের উপনিয়ামক দীপক ঘোষ অবশ্য বলেন, “ওই সমবায় সমিতির ব্যাপারে ব্লক সমবায় পরিদর্শককে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের পদাধিকারী-সহ প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেত বলা হয়েছে। ওই কমিটির নির্দেশ পাওয়ার পরই সমবায় সমিতিটি চালু করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |