বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন এসে গিয়েছে হাতে। দু’টি প্রশাসনিক পদ তৈরি না হওয়ায় নানা কলেজকে অধীনে আনার প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। তবে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরে আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত হয়ে গেলে তাদের কাজকর্মের অনেক সুবিধা হয়ে যাবে বলে মনে করছেন আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বেশ কিছু কলেজ কর্তৃপক্ষ।
জুলাইয়ে নতুন পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের একটি অব্যবহৃত তিনতলা ভবনে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। পড়ানো হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অঙ্ক। আপাতত আটটি শ্রেণিকক্ষ আছে। মোট ১২০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত কলেজগুলির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা এখানে পড়াচ্ছেন। উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায় জানান, পুজোর ঠিক পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদনের চিঠি এসেছে। উপাচার্য বলেন, “এত অল্প সময়ের মধ্যে অনুমোদন পাব ভাবিনি। সাধারণত এত তাড়াতাড়ি মেলে না। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব আরও এক ধাপ বাড়ল।”
উপাচার্য জানান, বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার ৩৪টি কলেজকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কলেজগুলিকে প্রথমে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন বাতিল করতে হবে। তার পরে অনুমোদন নেওয়ার জন্য নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। পুজোর পরেই এই প্রক্রিয়া শুরুর কথা ছিল। তবে কিছু প্রথাগত সমস্যা থাকায় তা শুরু করা যায়নি জানিয়ে উপাচার্য বলেন, “আমাদের এখনই পরীক্ষা নিয়ামক, এক জন কলেজ সমূহের পরিদর্শক নিয়োগ করতে হবে। এই দু’টি পদ তৈরি না হলে কলেজের অনুমোদন দেওয়া যাবে না।” তিনি আরও জানান, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পদ দু’টিতে নিয়োগ করবেন তাঁরাই। আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। |
নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনার প্রক্রিয়া দ্রুত হোক, চাইছেন আসানসোল, দুর্গাপুরের নানা কলেজ কর্তৃপক্ষও। সেক্ষেত্রে তাঁদের বেশ কিছু সুবিধা হবে বলে দাবি। বেশ কয়েকটি কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে সব ব্যাপারে সুবিধা হবে বলে তাঁদের ধারণা, সেগুলি হল:
• বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কোনও কাজ থাকলে যাতায়াতের সময় অনেক বাঁচবে। বর্ধমানে গিয়ে কাজ সেরে ফিরতে যা সময় লাগত, আসানসোলের ক্ষেত্রে তার তুলনায় সময় অনেক কম লাগবে।
• স্নাতকোত্তর স্তরে বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী বাড়ির কাছাকাছি পড়াশোনার সুযোগ পাবে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত আসনের জন্য সুযোগ না পেয়ে অনেককে ভিন্ জেলা বা ভিন্ রাজ্যে যেতে হত। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলে অনেক পড়ুয়াকে সেই সমস্যায় পড়তে হবে না।
• বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজ সংখ্যা ৮৬। বড় বিশ্ববিদ্যালয় বলে সেখানে প্রশাসনিক কাজকর্মের চাপ বেশি। নিজেদের অভাব-অভিযোগ বা সমস্যার কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আলাদা ভাবে জানানো বা প্রতিকার পাওয়া সময়সাপেক্ষ বলে কলেজ কর্তৃপক্ষগুলির দাবি। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজের সংখ্যা কম হলে এই সমস্যা তুলনায় কম হবে বলে তাঁদের আশা।
• অল্প সংখ্যক কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে পরীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়ায় খানিকটা সুবিধা হবে। ফলও তাড়াতাড়ি বেরোবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দুর্গাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মধুমিতা জাজোরিয়া মতে, “নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসার পরে প্রথম কিছু দিন সমস্যা হতে পারে। তবে বছর কয়েক পরে আমাদের ভালই হবে।” আসানসোল গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলী সরকার বলেন, “নির্দেশ এলেই আমরা অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেব।”
ভিন্ন মত যে নেই, তা অবশ্য নয়। রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজের অধ্যক্ষ নৃপঙ্কর হাজরা মনে করছেন, কলেজের সুনামের জন্যই দূরদূরান্ত থেকে পড়ুয়ারা আসেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েরও সাত দশকের বেশি পুরনো। ভাল পড়ুয়ারা সে কথা ভেবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত কলেজগুলিতে ভর্তি না-ও হতে পারেন বলে তাঁর আশঙ্কা। তবে নৃপঙ্করবাবু বলেন, “প্রথম দিকে এই সমস্যা থাকলেও পরে তা পুরোপুরি কেটে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।” উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায় অবশ্য সাফ জানান, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এগুলো কোনও সমস্যা নয়। |