ওষুধ ব্যবসায়ীদের অলিখিত ‘বয়কটে’ উত্তরবঙ্গের বাজার থেকে কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ওষুধ। সম্প্রতি, ওই সংস্থা তাদের প্রায় সব ওষুধের দাম-ই কমিয়ে দেওয়ায় পাইকারি থেকে খুচরো বিক্রেতা সকলেরই লভ্যাংশ কমে গিয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। সে কারণেই একাংশ ব্যবসায়ী ওই সংস্থার ওষুধের ওপর রাজ্য জুড়েই অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যার জেরে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ বাসিন্দারা।
সংস্থার প্রস্তুতকারী একটি ওষুধের ব্র্যান্ড নাম কার্যত অ্যান্টাসিডের সমার্থক হয়ে গিয়েছে। ওষুধ ব্যবসায়ীদের মতে, জ্বর, অ্যালার্জি বা কাটাছেঁড়ার ওষুধ বলতে বিপুল সংখ্যক সাধারণ বাসিন্দারা ওই সংস্থার বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামের সঙ্গেই পরিচিত। পাশাপাশি বিভিন্ন টিকা সহ জীবনদায়ী ওষুধ তো রয়েইছে। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের সাধারণ বাসিন্দাদের মত একাংশ ব্যবসায়ীরাও অভিযোগ করেছেন গত দেড় মাস ধরে ওই সংস্থার অন্তত দেড়শ রকমের ওষুধ বাজারে আসছে না। সংস্থার উত্তরবঙ্গের অন্যতম পাইকারী এজেন্ট জানিয়েছেন, প্রতি মাসে উত্তরের ৬ জেলায় সংস্থার অন্তত সাড়ে ৩ কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি হয়। গত দেড় মাস ধরে ব্যবসায়ীদের এই ‘অলিখিত বয়কটে’ ক্রেতাদের বিপুল চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।
অভিযোগ, ওষুধ বিক্রয়কারী এবং পাইকারি কারবারে যুক্ত ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের নির্দেশেই ব্যবসায়ীরা কেউ ওই সংস্থার ওষুধ বিক্রি করছেন না। অভিযোগ, ব্যবসায়ী সংগঠনের নির্দেশেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা যেমন ওই সংস্থার ওষুধ সরবরাহ করা বন্ধ করে দিয়েছেন, তেমনিই খুচরো ব্যবসায়ীরাও সংগঠনের নির্দেশ মেনে দোকানে ওষুধ মজুত করছেন না। যদিও সংগঠনের জেলা পদাধিকারীরা অবশ্য এ বিষয়ে কেউ কোনও রকম মন্তব্য করতে চাননি।
রাজ্যে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তুষার চক্রবর্তী বলেন, “কোনও সংস্থার ওষুধ বয়কট করার বিষয়ে সংগঠনগত ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” তবে উত্তরবঙ্গ জুড়ে একটি সংস্থার ওষুধ অমিল হয়ে পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোনও একটি সংস্থা ওষুধের দাম কমিয়ে লভ্যাংশের হার তলানিতে নিয়ে গিয়েছে। সে কারণে শুনেছি অনেক ব্যবসায়ী মুনাফা না হওয়ায় সেই সংস্থার ওষুধ বিক্রি করছেন না। তবে ওই সব ওষুধের বিকল্প ওষুধও বাজারে রয়েছে।”
ব্যবসায়ীদের একাংশ জানিয়েছেন, ওই সংস্থার চারটে জীবনদায়ী ওষুধ ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ দোকানে না রাখার নির্দেশ এসেছে প্রভাবশালী মহল থেকে। শিলিগুড়ির এক ব্যবসায়ীর কথায়, “ক্রেতাদের ক্ষোভের মুখে আমাদের পড়তে হয়েছে। কিন্তু সংগঠনের নির্দেশ অমান্য করলে, একঘরে হয়ে পড়তে হবে। তাই নির্দেশ না মানা ছাড়া উপায় নেই।” জলপাইগুড়ির আরেক ব্যবসায়ীর কথায়, “গত এক মাসে ক্রেতাদের সামলাতে লুকিয়ে-চুরিয়ে কিছু ওষুধ বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন ওই ওষুধগুলির জোগানই মিলছে না।”
কী বলছেন ক্রেতারা? জলপাইগুড়ি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা সমিতির আইনি উপদেষ্টা রবীন গুণ বলেন, “আমি নিজেও চিকিৎসকের পরামর্শে ওই সংস্থার একটি ওষুধ নিয়মিত খাই। গত দেড় মাস ধরে সেটি কোনও দোকানে পাচ্ছি না। প্রশ্নটি হল আইনের। ক্রেতাদের এ ভাবে বঞ্চিত করা যেতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবব।” |