গত আট মাসেও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চালু হচ্ছিল না মনোরোগীদের জন্য অন্তর্বিভাগ। অথচ মঙ্গলবার মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র দুই সদস্যের প্রতিনিধি দলের পরিদর্শনে আসার খবর পেয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তড়িঘড়ি চালু করে দেওয়া হল সেই ওয়ার্ড। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসা জনা সাতেক রোগী- রোগিনীকে ভর্তি করিয়ে নেওয়া হল ওয়ার্ডে। তবে ভর্তি করানোর কয়েক ঘন্টা পরও ওয়ার্ডে কোনও চিকিৎসক আসেননি বলে অভিযোগ।
পরিদর্শক দল আসার খবর পেয়েই যে ওয়ার্ড শুরু করা হল, তা স্বীকার করেছেন হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাসও। তিনি বলেন, “মনোরোগীদের ওয়ার্ড আগামী ২৮ নভেম্বর চালু হবে বলে ঠিক ছিল। তবে এ দিন এমসিআই-এর প্রতিনিধি দল আসবেন বলে আমাদের কাছে আগাম খবর ছিল না। ১০ টা নাগাদ বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। সেই মতো এ দিন থেকেই মনোরোগীদের জন্য ওই অন্তর্বিভাগ চালু করা হল।” তিনি জানান, গত মার্চ মাসে মনোরোগীদের অন্তবির্ভাগ চালুর সিদ্ধান্ত হয়। তোড়জোড় করতে করতেই ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দেয়। মনোরোগীদের অন্তর্বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে ডেঙ্গির ওয়ার্ড খোলা হয়। তাই মনোরোগীদের ওয়ার্ড চালু করতে দেরি হল।
মঙ্গলবারই ওয়ার্ড চালু করার বিষয়টি পরিদর্শন দলের সদস্যদেরও জানানো হয়েছে। মনোরোগীদের বিভাগ পরিদর্শনের দায়িত্বে ছিলেন মুকেশ সামানি। তিনি বলেন, “মনোরোগ বিভাগের সমস্ত বিষয়ই খোঁজ নিচ্ছি।”
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোরোগের চিকিৎসা বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি চালুর ক্ষেত্রে অন্তর্বিভাগ থাকা বাধ্যতামূলক। কলেজ কর্তৃপক্ষ তার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এমসিআই আসার আগেই কেন ওয়ার্ড চালু করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বেলা ১১ টা নাগাদ এ দিন মনোরোগের বহির্বিভাগে সুমন বর্মন, নেপাল দাস, প্রফুল্ল দেবনাথ, করুণা দেবনাথদের চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছিলেন পরিবারের লোকেরা। নিউরোলজি-নেফ্রলজি-কার্ডিওলজির ভবনে দোতলায় দুটি ঘরে ২৪ টি শয্যা সাজিয়ে সেখানে তাঁদের ভর্তি করে নেওয়া হয়। কাগজে ‘সাইকিয়াটিক ওয়ার্ড’ লিখে ঢোকার দরজার উপরে দেওয়ালে তা সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। মহিলাদের ওয়ার্ডে ২ জন নার্স রয়েছেন। তাঁরাই দেখভাল করছেন। মনোরোগ বিভাগে পাঁচজন চিকিৎসক রয়েছে।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে আসা সাধন রায়ের মা কল্পনা দেবী বলেন, “বেলা ১১টার সময় ছেলেকে ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। মাথায়, ঘাড়ে ব্যথা। ভর্তি করানোর পর ঘন্টা দুয়েক কেটে গেলেও চিকিৎসক আসেননি।” অম্বিকানগরের রেখা দেবনাথ জানান, মা করুণা দেবনাথ, বাবা প্রফুল্লবাবুর বয়স হয়েছে। অনেক সময় তারা বেশি কথা বলছেন। ঘর থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে যান। তাই চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। তাঁদের দু জনকেই এ দিন ভর্তি করিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু ভর্তির পর অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেলেও চিকিৎসক আসেননি কেন? হাসপাতাল সুপারের দাবি, চিকিৎসক হয়তো বহির্বিভাগে কোনও কাজে গিয়েছিলেন। |