বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা যাতে ঠিকঠাক পরিষেবা পান, তার জন্য নজরদারি শুরু করল জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ড দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোনও না কোনও অতিরিক্ত জেলাশাসককে।”
স্বাভাবিক ভাবেই সব মহলে প্রশ্ন উঠেছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ বা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা কি তবে কাজে ঢিলে দিচ্ছেন? প্রশাসন কি তাঁদের কাজে সন্তুষ্ট নন?
কয়েক দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মন্ত্রী ও আমলাদের একাংশকে সতর্ক করেন, কাজ ফেলে না রাখার জন্য। কাজ না করলে যে সরতে হবে, সেই ইঙ্গিতও স্পষ্ট ছিল। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ রীতিমতো রেগে মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই বলেন, ‘‘যাঁরা কাজ করছেন না, তাঁরা ছেড়ে দিন। না হলে আমরা অন্য ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।” |
হাসপাতাল পরিদর্শনে অমিত দত্ত। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক। —নিজস্ব চিত্র। |
ডিএম সৌমিত্র মোহনও হাসপাতালের হাল নিয়ে বৈঠকে বিরক্তি প্রকাশ করেন। ওই দিনই ঠিক হয়, অতিরিক্ত জেলাশাসকদের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হবে।
গত কয়েক দিন হাসপাতালে ঘুরে বেশ কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করে ফেলেছেন এডিএম-রা। যেমন
• নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসক গরহাজির থাকছেন,
• ডাক্তার থাকলেও রোগী বা তাঁর আত্মীয়েরা তাঁদের দেখা পান না,
• হাসপাতাল চত্বর অপরিষ্কার,
• দালালদের ভিড়,
• ন্যায্যমূল্যে ওষুধের দোকান থাকলেও রোগীরা সচেতন নন,
• নিরাপত্তার সমস্যা,
• পার্কিংয়ের সমস্যা ইত্যাদি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “লেবার রুমে পর্যন্ত পুরুষদের অবাধ প্রবেশ। বুঝুন অবস্থা! রোগীদের জিজ্ঞাসা করতেই এক-এক করে সব বেরিয়ে আসছে।”
প্রকাশ্যে অবশ্য কেউই সরাসরি কারও অযোগ্যতা বা নিষ্ক্রিয়তার কথা বলছেন না। মন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, “পরিষেবার উন্নতির জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসকরা প্রতিনিয়ত নজরদারি রাখবেন।” নজরদারির প্রয়োজন হচ্ছে কেন, তার স্পষ্ট উত্তর অবশ্য মেলেনি। তবে হাসপাতালের দায়িত্ব যাঁদের হাতে ন্যস্ত, তাঁদের বক্তব্যেই পরিষ্কার যে সব ঠিকঠাক চলছিল না।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুশ্রী রায়ের বক্তব্য, “আমরা ০% কাজ করেছি এটা যেমন ঠিক নয়, ১০০% করে ফেলেছি, তা-ও বলব না। সব সময়ে পরিষেবার মান উন্নত করার সুযোগ রয়েছে।” ডেপুটি সুপার তাপসকুমার ঘোষের দাবি, “দ্রুত উন্নতির জন্য জেলা প্রশাসন হস্তক্ষেপ করেছে। তাতে কাজও হচ্ছে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণবকুমার রায়ের মতে, “প্রশাসনের সাহায্যে হাসপাতালের মানোন্নয়ন হলে সব দিক থেকেই ভাল।”
শুধু জেলা নয়, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের উপরে বীরভূম, বাঁকুড়া-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ নির্ভরশীল। প্রতি দিন হাজার-হাজার মানুষ চিকিসার জন্য আসেন। নানা ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগও জানান। স্বপন দেবনাথ বলেন, “নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি সংস্থা এবং হাসপাতালের কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।” ডাক্তারদের অনুপস্থিতির কথা অধ্যক্ষ মানতে না চাইলেও মন্ত্রী বলেন, “চিকিৎসকদের ঠিকঠাক আসতে বলা হয়েছে। বাকি সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে।” |