অগ্নিকাণ্ডের দু’বছর, ফের খুলছে আমরি
গ্নিকাণ্ডের জেরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঠিক দু’বছরের মাথায় ফের খুলতে চলেছে ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতাল। গত সোমবারই এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছেন আমরি কর্তৃপক্ষ।
সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরে আপাতত শুধু আউটডোর পরিষেবা এবং শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু হচ্ছে। এর আগে গত ১৯ নভেম্বর আমরি-কে লাইসেন্স দিয়েছিল দমকল দফতর।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাসের কথায়, “আমরির দু’টি ভবন দোতলা পর্যন্ত চালু করার ব্যাপারে সোমবার স্বাস্থ্য দফতর ছাড়পত্র দিয়েছে।
আগে সেখানে ৫২টি আউটডোর চলত। আপাতত পেডিয়াট্রিক্স, গাইনিকোলজি, জেনারেল মেডিসিন, নিউরোলজি, ইউরোলজি-সহ ১৮টি আউটডোর চলবে। সেই সঙ্গে চালু হবে এক্স-রে, স্ক্যান, আলট্রাসোনোগ্রাফি এবং যাবতীয় ল্যাবরেটরির পরীক্ষা-নিরীক্ষা।”
আগামী মাসের গোড়াতেই ওই বিভাগগুলি খুলে যেতে পারে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
আমরি হাসপাতালের এক মুখপাত্র বলেন, “সোমবারই কাগজ হাতে এসেছে। আমরা খুশি। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকা হাসপাতালের অনেক কর্মীকে বসিয়ে মাইনে দিতে হচ্ছিল। কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছিল। অনেকগুলি দামি যন্ত্র অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল। অথচ সেগুলি কিনতে যে লক্ষ-লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তার সুদ গুনতে হচ্ছিল। আমরা যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালের পরিষেবা চালু করে দেব এবং পুরনো কর্মীদের মধ্যে যাঁরা আগ্রহী হবেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনব। সেই সঙ্গে ইন্ডোরে রোগী ভর্তির অনুমতির জন্য স্বাস্থ্য দফতরে নতুন করে আবেদন জানাব।”
২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর আগুন লাগে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের অ্যানেক্স-১ ভবনে। মৃত্যু হয় ৯১ জনের, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী।
মুখ্যমন্ত্রী ওই হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নিয়েছিলেন। আমরি-র মেন বিল্ডিং ও অ্যানেক্স-২ ভবনের ছাড়পত্র সাময়িক ভাবে বাতিল করে সেগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুড়ে যাওয়া অ্যানেক্স-১ ভবনের লাইসেন্স স্থায়ী ভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে যে দিন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ফের আমরি হাসপাতাল চালু করার লাইসেন্স দিল, তার ঠিক ১৪ দিন পরেই আমরি-অগ্নিকাণ্ডের ২ বছর পূর্ণ হবে।
গত দু’বছরে আমরি-র প্রধান ভবন (পি-৪ সিআইটি স্কিম, গড়িয়াহাট রোড), অ্যানেক্স-টু (১৭, পঞ্চাননতলা রোড) খুলতে চেয়ে স্বাস্থ্য দফতরে মোট ১১টি চিঠি দেন আমরি কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, প্রত্যেকটি চিঠিতেই স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের ওই তিনটি ভবন পরিদর্শনের অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি।
সেই স্বাস্থ্য দফতরই হঠাত্‌ গত ১৩ সেপ্টেম্বর ওই তিনটি ভবনে পরিদর্শক দল পাঠায়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পরিদর্শনের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘সরেজমিন সব দেখার পরে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরি হাসপাতালের ওই তিনটি ভবন খোলার ব্যাপারে আপত্তির কোনও কারণ দেখা যাচ্ছে না। সেগুলি চালু হতেই পারে।’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আমরি-র ঘটনার পরে দীর্ঘ দিন ওই গোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ না করে আটকে রাখায় শিল্পমহলে বিরূপ বার্তা পৌঁছেছিল। যে দু’টি শিল্প সংস্থা আমরি-র পরিচালন কমিটিতে রয়েছে, তারাও এ রাজ্যে ব্যবসা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে অবাঙালী ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছেছিল।
এ দিকে, রাজ্যে বিনিয়োগের রাস্তা পরিষ্কার করতে ‘শিল্পবন্ধু’ ভাবমূর্তি আনতে চাইছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারণেই তাঁর দফতর থেকে সবুজ সঙ্কেত আসা শুরু হয়। তাতেই হাসপাতাল খোলার পথ পরিষ্কার হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
ফলে ১৯ নভেম্বর মিলে যায় দমকলের ছাড়পত্র এবং ২৫ নভেম্বর মিলল স্বাস্থ্য দফতরের বহু প্রতীক্ষিত ছাড়পত্র। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়ে দিয়েছে, ফের চালু হওয়ার পরে আমরি হাসপাতালে ঠিক মতো নিয়ম মেনে কাজ হচ্ছে কি না, তা দেখতে মাঝেমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতর থেকে পরিদর্শকেরা যাবেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.