আগামী সপ্তাহে বিধানসভার প্ল্যাটিনাম জুবিলির সমাপ্তি অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে থাকবেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার। কিন্তু তার আগে বিরোধীদের চলতি অধিবেশন ও সমাপ্তি অনুষ্ঠান বয়কটের আশঙ্কার মেঘ জমেছে বিধানসভায়। কংগ্রেসের অধিবেশন বয়কট তো চলছেই। বামেরাও মঙ্গলবার দুই দফায় ওয়াক-আউট করেছেন। তাঁরাও চলতি অধিবেশন বয়কট করবেন কি না তা আজ, বুধবার বাম পরিষদীয় দলের বৈঠকের পরে সিদ্ধান্ত হবে বলে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র জানান।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বলতে এসে গত বুধবার বিধানসভায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, কেন্দ্র বা কংগ্রেস সম্পর্কে একতরফা ভাবে মুখ্যমন্ত্রী নিজের বক্তব্য জানালেও তাঁদের জবাব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এই অভিযোগে ওই দিনই কংগ্রেস বিধায়করা সভা বয়কট করেন। সভার পরে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও এ ব্যাপারে আলোচনার দাবি জানায় কংগ্রেস পরিষদীয় দল। সদুত্তর মেলেনি। সে কারণেই সোমবারও বয়কট চলে তাদের। এ দিন ফের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে স্পিকারকে বিধানসভার রীতি মেনে ৩১৯ ধারায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আলোচনার দিন স্থির করার অনুরোধ জানান কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব। স্পিকার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বলে কংগ্রেসের দাবি। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে আলোচনার দিনক্ষণ স্থির করে না জানানো পর্যন্ত কংগ্রেস বয়কটে অনড় থাকবে বলে এ দিন সোহরাব জানান।
তাঁদের দাবি না মিটলে আগামী ৪ থেকে ৬ ডিসেম্বর প্ল্যাটিনাম জুবিলির সমাপ্তি অনুষ্ঠানও তাঁরা বয়কট করতে পারেন বলে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া ইঙ্গিত দেন। সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আগে কোনও সদুত্তর না পেলে কি ওই অনুষ্ঠানও বয়কট করবে কংগ্রেস? মানসবাবুর জবাব, “স্পিকার আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কী সিদ্ধান্ত নেন, তার নিরিখেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” এ দিন সন্ধ্যায় কলকাতায় ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস-এর অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা করে মুখ্যমন্ত্রীর এই কেন্দ্র বিরোধিতা নিয়ে অভিযোগ জানান মানসবাবুরা। কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশের অভিমত, রাষ্ট্রপতি, লোকসভার স্পিকারের উপস্থিতিতে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বিরোধীরা কেন নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সেটা শাসক দলের পক্ষে বিশেষ ‘সম্মানে’র হবে না বলেই তাঁদের ধারণা। অবশ্য সভা বয়কটের মাধ্যমে বিরোধীদের রাজনৈতিক ফায়দা তোলা সম্ভব নয় বলেই শাসক দলের বিধায়কদের অভিমত। সভা বয়কট না করার জন্য কংগ্রেসকে এ দিন কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে স্পিকার এবং পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অনুরোধ জানিয়েছেন। স্পিকারের বক্তব্য, “আবেদন বিবেচনা করে দেখব। সভায় অংশ নিতেও আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ করেছি।” বিধানসভা সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী যে বিষয় নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, তা নিয়ে ফের সভায় আলোচনা যুক্তিগ্রাহ্য নয় বলে শাসক দলের তরফে কংগ্রেসকে বৈঠকে জানানো হয়েছে। পার্থবাবু বলেন, “বক্তব্য পেশের অনেক সুযোগ রয়েছে কংগ্রেসের। তা না করে সভা বয়কট করে নিজেদের দলটাকেই আরও ক্ষয়িষ্ণু করছে তারা!” |