|
|
|
|
ভুয়ো দলিলে লোন, সাসপেন্ড ব্যাঙ্ক-কর্মী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
জমির ভুয়ো দলিলের বিনিময়ে চাষিদের ব্যাঙ্ক-লোন দেওয়ার অভিযোগে সাসপেন্ড হলেন ফিল্ড-অফিসার। ঘটনাটি ঘটেছে ঘাটাল শহরের এক প্রথম শ্রেণির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কে। সব মিলিয়ে ব্যাঙ্ক-লোন কাণ্ডে প্রায় কোটি টাকার প্রতারণার কথা প্রকাশ্যে আসতেই সংশ্লিষ্ট মহলে আলোড়ন উঠেছে। ওই ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজার সঙ্ঘমিত্রা দাস বলেন, “গত সপ্তাহে অভিযুক্ত ফিল্ড অফিসার প্রণব সাইকিয়াকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।” ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার নিরঞ্জন সোয়াইন জানান, “প্রাথমিক ভাবে ২৮ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, ২০০৯-এর শেষ দিকে আসামের বাসিন্দা প্রণব সাইকিয়া ঘাটাল শাখায় যোগ দেন। ২০১১ সালে তিনি ব্যাঙ্কের এগ্রিকালচার ফিল্ড অফিসার পদে উন্নীত হন। তারপর একে একে তিনি প্রায় ৫০০ কৃষককে ব্যাঙ্ক-লোন দিয়েছেন। অভিযোগ, সেগুলির অধিকাংশই ‘দালাল’-সহ অনেকের মাধ্যমে চাষিদের পাইয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার লোন নিয়ে তা শোধও করেছেন। তাই আসল বা ভুয়ো লোনের প্রকৃত সংখ্যা বা পরিমাণ জানা যায়নি। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় ফিল্ড অফিসার প্রণব সাইকিয়া সাসপেন্ড হয়েছেন। সঙ্গে ভুয়ো কাগজ জমা দিয়ে লোন নেওয়ার অভিযোগে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ চন্দ্রকোনার পলাশা গ্রামের গোকুল মাল, তপনকুমার কারফা, বাজকার রণজিত্ মণ্ডল-সহ ২৮ জনের নামে এফআইআর দায়ের করেছেন।
বিষয়টি কী ভাবে জানাজানি হল? সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই ব্যাঙ্কের ভিতরে দালালদের আনাগোনা বাড়ছিল। এ রকম প্রথম শ্রেণির এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দালালদের আনাগোনা বাড়তে থাকায় কর্মরত কর্মী-অফিসাররা ক্ষুব্ধ ছিলেন। একই অবস্থা চলতে থাকে জুন মাসে নতুন ম্যানেজার সঙ্ঘমিত্রা দাস আসার পরও। বিষয়টি লক্ষ্য করে সঙ্ঘমিত্রাদেবী দালালদের ব্যাঙ্কে ঢোকা বন্ধ করে দেন। ওই মাসেই ম্যানেজারকে এক গ্রাহক মৌখিক ভাবে ভুয়ো লোনের বিষয়টি জানান। পরে একজন লিখিত ভাবে ম্যনেজার-সহ ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট সব মহলে তা জানান। তারপরই কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। তদন্ত শুরু হতেই ওই ফিল্ড অফিসারকে জেলার অন্যত্র বদলি করা হয়। জানা গিয়েছে, প্রথমে ব্যাঙ্কের অফিসার এবং ভিজিলেন্স টিম তদন্ত করে ওই ফিল্ড অফিসারের আমলে সমস্ত ফাইল দেখে অন্তত ৩০ জনের ভুয়ো দলিলের খোঁজ পান। এরপর গত সপ্তাহে ওই ফিল্ড অফিসার প্রণব সাইকিয়াকে সাসপেন্ড করেম ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। প্রতারণার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে ব্যাঙ্কের আইনজীবীর ভূমিকা নিয়েও। নিয়মানুযায়ী, এই সমস্ত লোন দেওয়ার আগে জমির দলিল ঠিকঠাক কি না-তা দেখবার জন্য ব্যাঙ্কেই এক আইনজীবী থাকেন। ওই আইনজীবী জমির দাগ নম্বর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে গিয়ে সমস্ত নথি খতিয়ে দেখেন। আইনজীবীর সবুজ সঙ্কেত মিললেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ লোন মঞ্জুর করেন। স্বাভাবিক ভাবেই ওই ‘খতিয়ে দেখা’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঘাটাল থানার পুলিশ ব্যাঙ্কের অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন। তবে ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। |
|
|
|
|
|