|
|
|
|
ডেবরা |
হোমের ঘরে আবাসিক কিশোরের ঝুলন্ত দেহ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
সমাজকল্যাণ দফতর স্বীকৃত জুভেনাইল হোম থেকে এক কিশোরের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পর উত্তেজনা ছড়িয়েছে ডেবরায়। মৃত সব্যসাচী মাইতি (১৭)-র বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের দেনানে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল সার্ভিস’ পরিচালিত ওই হোম থেকে সোমবার রাতে সব্যসাচীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এক মামলার সূত্রে ওই কিশোর বন্দি আত্মহত্যা করেছে বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান। মৃত কিশোরের পরিবারের তরফেও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
সোমবার রাতে হোমের ঘরে সিলিং ফ্যানে গামছার ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় সব্যসাচীর দেহটি মেলে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার এসেছিলেন সব্যসাচীর বাবা শীতল মাইতি। তিনি বলেন, “ছেলে নেশা করত। সেই সূত্রে অসুস্থও ছিল। গত ১৪ নভেম্বর শেষ যখন ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম, তখনও অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। আত্মহত্যা করেছে বলেই মনে হচ্ছে।” হোমের সম্পাদক ত্রিদীপ দাস বেরারও বক্তব্য, “নানা বদ অভ্যেস ছিল সব্যসাচীর। অসুস্থও ছিল। সেই অবসাদেই আত্মঘাতী হয়েছে।” জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক গোটা ঘটনার তদন্ত করবেন বলে জানিয়েছেন দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম দত্ত।
ডেবরার চককুমারের এই হোমটি দুই মেদিনীপুর জেলার একমাত্র শিশু-কিশোর বন্দিদের হোম। ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে হোমটি চলছে। তিনতলা ভবনে মোট ৫০ জন শিশু-কিশোর থাকতে পারে। শুধু বিচারাধীন বা সাজাপ্রাপ্ত শিশু-কিশোর বন্দি নয়, পথশিশুদেরও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। বছর দেড়েক আগে হোমের আবাসিক পথশিশু আফতাবের মৃত্যুর পর দেহ মাটিতে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পরে মাটি খুঁড়ে হাড়গোড় উদ্ধার হয়। স্থানীয় মানুষজন হোমে ভাঙচুর চালান। ময়নাতদন্তের পরেই ওই বালকের দেহ মাটিতে পোঁতা হয়েছিল বলে তখন দাবি করেছিলেন হোম কর্তৃপক্ষ।
হোমে নিম্নমানের খাওয়াদাওয়া, মারধরের অভিযোগ ওঠে হামেশাই। এখনও পর্যন্ত ১২ জন কিশোর এই হোম থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। হোমের পাশেই বাড়ি রাধারানি দাসের। তিনি বলেন, “মাঝেমধ্যেই বাচ্চাদের চিত্কার, কান্না শুনতে পাই। জানতে গেলে হোমের কর্মীরা গালমন্দ করেন।” হোমের সম্পাদক ত্রিদীপ দাস বেরার দাবি, হোম চালানোর জন্য সরকারি ভাবে যথেষ্ট অর্থ না পাওয়ায় সমস্যা হয়। তিনি আরও বলেন, “যে সব বাচ্চারা এখানে থাকে, তাদের অধিকাংশই নেশাগ্রস্ত। তাঁদের সামলানো যথেষ্ট মুশকিল। কেউ জানলার লোহার শিক কেটে পালিয়ে গেলে আমরা কী করব? আমাদের কাগজপত্রে কোনও ত্রুটি নেই।”
এ দিনও সব্যসাচীর মৃত্যুর পরে স্থানীয়রা হোম কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরে সমাজকল্যান দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম দত্ত বলেন, “ওই হোমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। বছর খানেক আগে হোমটির লাইসেন্স বাতিলের জন্যও রাজ্য স্তরে জানিয়েছি। তবে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি।” গত মার্চে কোলাঘাটের বাবুয়া গ্রামের বছর ষোলোর কিশোরীর সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিল বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাবালক সব্যসাচী। প্রথমে সব্যসাচীর বাবা শীতল মাইতি কোলাঘাট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। তারপর এপ্রিলে শীতলবাবু মেয়েটির বিরুদ্ধে সব্যসাচীকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। তখন কিশোরীর বাবাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে সব্যসাচী তমলুক জেলা আদালতে গিয়ে গিয়ে জানায়, সে স্বেচ্ছায় ওই কিশোরীর সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। এরপরই নাবালক অবস্থায় বিয়ে করার অপরাধে বিচারক সব্যসাচীকে হোমে রাখার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে সব্যসাচী ডেবরার এই জুভেনাইল হোমেই ছিল। |
|
|
|
|
|