তাইল্যান্ড আবার অশান্ত। এ বার প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গলাক শিনাবাত্রা ও তাঁহার নির্বাচিত মন্ত্রিসভার ইস্তফার দাবিতে। ইঙ্গলাক তাইল্যান্ডের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তাঁহার ভাই তাকসিন শিনাবাত্রা ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ব্যাপক গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়া বিপুল গরিষ্ঠতা লইয়া তিনি ২০১১ সালে দেশের শীর্ষ পদে আসীন হন। ভাই তাকসিন দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে অভিযুক্ত মামলার রায়ে নির্বাসিত। প্রধানমন্ত্রী ভ্রাতাকে স্বদেশে ফিরাইবার উদ্যোগ করিতেছেন, অতএব তাকসিন-বিরোধীরা আন্দোলনে। তাইল্যান্ডের এই আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামিয়া রাজধানী অবরুদ্ধ করিয়াই ক্ষান্ত থাকেন না, বিভিন্ন সরকারি দফতরে হাজারে-হাজারে প্রবেশ করিয়া মন্ত্রালয়ের কাজকর্ম অচল করিয়া দেন। তাকসিন-সমর্থকরাও অতীতে একই পদ্ধতিতে আন্দোলন করিয়াছেন। আজ তাঁহার বিরুদ্ধবাদীরাও সেই পথই অনুসরণ করিতেছেন। পরিণাম: ব্যাংককে চরম অরাজকতা, রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশংকা।
প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গলাক রাজধানী-সহ দেশের বিভিন্ন শহর ও জনপদে জরুরি অবস্থা জারি করিয়াছেন। বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ করিয়াছেন, আন্দোলন প্রত্যাহার করিয়া সংসদীয় বিতর্কের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করিতে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের নবীন গণতন্ত্রগুলিতে ইদানীং তর্ক-আলোচনার শান্তিপূর্ণ পথের বদলে মারমুখী রাস্তার আন্দোলনের প্রতিই রাজনীতিকদের ঝোঁক বেশি। তাই একটি নির্বাচিত, গরিষ্ঠতাসম্পন্ন সরকার বা শাসক গোষ্ঠীকে তাহার পূর্ণাঙ্গ সাংবিধানিক মেয়াদ শাসন করিতে না দিয়া জন-আন্দোলনের চাপে আগেই ইস্তফা দিতে চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু ইঙ্গলাক কিংবা তাঁহার নির্বাসিত ভ্রাতার জনসমর্থনও নেহাত কম নয়। বস্তুত, গ্রামাঞ্চলের কৃষিজীবী এবং কল-কারখানার শ্রমজীবীদের মধ্যে এই সমর্থন ব্যাপক। তাকসিন-সমর্থকদের গত আন্দোলনের সময়েই তাহা দেখা গিয়াছিল। ‘লাল-জামা’ পরিহিত ওই সমর্থকরা সে সময় ব্যাংকক প্লাবিত করিয়াছিলেন। লাল-জামারা তাকসিন বিরোধীদের চলতি বিক্ষোভের সময়েও ব্যাংককে হাজির হইতেছেন। দুই পক্ষে সংঘর্ষের আশঙ্কা স্বভাবতই প্রবল। অতএব প্রবল সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও। বিক্ষোভকারীদের নেতা সুতেপ তাউগসুবান আশ্বাস দিতেছেন, তাঁহারা হুইস্ল বাজাইয়া, পতাকা নাড়িয়া, গান-বাজনা করিতে-করিতে বিভিন্ন মন্ত্রকের ভবনে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রবেশ করিতেছেন। কিন্তু হাজার-হাজার কিংবা লক্ষ-লক্ষ মানুষ কোনও বিক্ষোভ উপলক্ষে সমবেত হইলেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের সহিত সংঘর্ষের শঙ্কা থাকিয়া যায়, যাহার অনিবার্য পরিণাম লাঠি-চার্জ, গুলিবর্ষণ, রক্তপাত। সম্ভবত সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গলাকও পুলিশকে সংযত আচরণের কঠোর বার্তা দিয়াছেন। তথাপি আশঙ্কা হয়, তাইল্যান্ড আবার রক্তক্ষয়ের পথে অগ্রসর হইতেছে না তো! রাজার প্রতি সে দেশে এখনও বহু মানুষের আনুগত্য অবিসংবাদী। শিল্পপতি, ব্যবসায়িক উদ্যোগী, নাগরিক মধ্যশ্রেণিও নির্বাচিত তাকসিন সরকার অপেক্ষা সম্রাটকে অধিকতর শ্রদ্ধাভক্তি করেন। সমাজের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বগুলি এই ধরনের সংকটকালেই স্ফুট হয়। গণতন্ত্র সেই দ্বন্দ্ব নিরসনে অসমর্থ হইলে স্বৈরতন্ত্রের ছায়া ঘনায়। তাইল্যান্ডে আপাতত ছায়া ঘনাইয়াছে। |