চিনের সঙ্গে সেনাস্তরে কথাতেও জোর ভারতের
চিনা সেনার ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে ঘাঁটি গেড়ে বসার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে আর শুধুমাত্র ঠান্ডা ঘরের কূটনৈতিক বৈঠকের উপরে নির্ভর করতে চাইছে না নয়াদিল্লি। আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় ভারত এ বার সরাসরি চিনা সেনা (পিপলস লিবারেশন আর্মি বা ‘পিএলএ’)-র সঙ্গেই ‘ব্যাক-চ্যানেল’ কথাবার্তা শুরু করে দিল।
সরকারি সূত্রের খবর, সম্প্রতি কূটনৈতিক কর্তাদের উপস্থিতিতে দু’দেশের শীর্ষস্তরের সেনা প্রতিনিধিদের মধ্যে একদফা আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই তা আবার এবং বারবার বলে জানা গিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে ৪,০৫৬ কিলোমিটার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাকে শান্ত রাখার জন্য এই কৌশল কার্যকরী হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
দক্ষিণ-পূর্ব লাদাখে চিনা সেনার অনুপ্রবেশ এবং ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকার বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক স্তরে সব রকম আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই ভারত যে সমস্যার সমাধান করতে চায়, সে কথাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল শীর্ষ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজের কাজ হয়নি। ভারতীয় গোয়েন্দাদের অনুমান, এই সব অনুপ্রবেশগুলির ক্ষেত্রে সব সময় যে বেজিংয়ের শীর্ষ সরকারি নেতৃত্বের সুপরিকল্পিত নির্দেশ থাকছে, এমন নয়। সীমান্তের কাছে স্থানীয় পিএলএ কম্যান্ডারের নির্দেশেও এই ধরনের পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আর সেই কারণে পিএলএ-কে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে, সমস্যা ও অভিযোগগুলির দ্রুত আদানপ্রদান ও নিষ্পত্তি করে নেওয়াটাকেই কার্যকরী বলে মনে করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক মাপকাঠি অনুযায়ী সীমান্ত সমস্যা মেটানোর জন্য বিশেষ প্রতিনিধিস্তরের প্রক্রিয়া যেমন চলছিল, তেমনই চালানো হবে বলে স্থির হয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রকের মতে, চলতি বছরটি চিনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অভিনব। অভিনব এই কারণেই যে, এই বছর নয়াদিল্লি এবং বেজিং-এর প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। বহুবিধ বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য চুক্তি, যৌথ বিবৃতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বহুপাক্ষিক মঞ্চেও আন্তর্জাতিক রণনীতি ও বাণিজ্যনীতি নিয়ে একমত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং চিনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং।
কিন্তু আপাত ঐক্যের এই ছবির পাশাপাশি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিনা সেনার অনুপ্রবেশের ঘটনা প্রায় গোটা বছর জুড়ে আতঙ্কিত করে রেখেছিল ভারতকে। লাদাখে সেনা পাঠানো এবং ২১ দিন ধরে তাদের বসিয়ে রাখার সদুত্তর সে ভাবে চিনা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে এখনও পায়নি নয়াদিল্লি। দেবসাংয়ের ওই ঘটনা ছাড়াও সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব লাদাখে চুমার পোস্ট এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা টপকে চলে আসে পিএলএ। সেখানে ভারতের নজরদারি ক্যামেরা খুলে নিয়ে এলাকাটি তছনছ করে যায়। পরে ফ্ল্যাগ মিটিং-এর পর ক্যামেরাটি ফেরত পায় ভারতীয় সেনা।
তবে আশার কথা, একাধিক মঞ্চে সীমান্ত সমস্যা মেটানোর আগ্রহও দেখিয়েছে চিন। সে দেশের সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, অন্য সমস্ত দেশের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে সমস্যা মিটে গিয়েছে চিনের। বাকি রয়েছে শুধু ভারত। সে দেশের ‘ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর ডিরেক্টর গাও ঝিকাই বলেছিলেন, “রাশিয়া-সহ চিনের ১৪টি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টির সঙ্গেই সীমান্ত বিবাদ মিটিয়ে ফেলা গিয়েছে। এক মাত্র বাকি রয়েছে ভারত। ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেওয়া এই জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে ভারত এবং চিনকে পদক্ষেপ করতে হবে।”
আস্থার সেই পথেই এখন পা বাড়ানোর আগ্রহ দেখাচ্ছে দিল্লি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.