সংস্কার ও সংরক্ষণ করে ভূকৈলাস রাজবাড়িকে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র করতে চায় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শুরু হয়েছে এই কাজ। বরাদ্দ হয়েছে ২ কোটি ৯ লক্ষ টাকা। এর প্রায় ৮৫ শতাংশ দিচ্ছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। পুরসভা দিচ্ছে ৩৪ লক্ষ টাকা।
এখন যেখানে ফোর্ট উইলিয়াম, এক সময়ে সেখানে জমিদারি ছিল রাজা জয়নারায়ণ ঘোষালের। গঙ্গার ধারে কেল্লা তৈরির সময়ে তাঁদের জমি দেওয়া হয় খিদিরপুরে। জঙ্গল কেটে ঘোষাল পরিবার বসতি বানান। তৈরি হয় বিশ্বের সর্ববৃহত্ শিবলিঙ্গ মন্দির। দুই মন্দিরে রক্ত কমলেশ্বর এবং কৃষ্ণ চন্দ্রেশ্বরের ১১ ফুট উঁচু বিগ্রহ। মন্দির দেখতে এসে সাধক রামপ্রসাদ জায়গাটির নাম দেন ভূকৈলাস। ১৭৮১-তে গোটা এলাকা ছিল ১০৮ বিঘা। তখন থেকে দেবোত্তর সম্পত্তি মূল মন্দিরের কুলদেবী পতিতপাবনীর নামে।
সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ হচ্ছে মূলত চার পর্যায়ে। এর মধ্যে নহবতখানা এবং জলাশয়-সংলগ্ন ছোট মন্দিরগুলির সংস্কারে ৩৪ লক্ষ টাকা দিচ্ছে পুরসভা। পুরসভার ডিজি সুব্রত শীল এ কথা জানিয়ে বলেন, “পুরসভার ঐতিহ্য সংরক্ষণ তহবিল থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে এই অর্থ। রং করলে এই পর্যায়ের কাজ পুরোটাই হয়ে যাবে।”
বাকি তিন পর্যায়ের টাকা দিচ্ছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। প্রশাসন সূত্রের খবর, মন্দিরের আলো, মন্দির এবং জলাশয়ের মাঝের অংশে ল্যান্ডস্কেপিংয়ের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। এই কাজের ৬০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। প্রাচীর নির্মাণ এবং সংস্কারের একাংশের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ৪২ হাজার টাকা। সম্প্রতি এই কাজ শুরু হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ে কার্ল মার্ক্স সরণিতে হবে একটি ফটক। এর জন্য এই দফতর ৪৩ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
খিদিরপুর বাবুবাজারে মন্দিরচত্বরে গিয়ে অবশ্য দেখা যায়, সংস্কারের কাজ অনেকটা বাকি। জলাশয়ের এক দিকে বাঁধানো চত্বরে জোড়া মন্দির। বাকি তিন ধারের পথে ইঁট বেছানো ঢালাই এবং টালি বসানোর কাজ বাকি। এই পথের দু’পাশে তিনটি করে অর্থাত্ ছ’টি ছোট মন্দির। ১০ ফুট উঁচু এবং প্রায় পাঁচ ফুট চওড়া মন্দিরগুলিতে প্রাথমিক রং করা হলেও ভিতরে অপরিস্কার।
ঠিক সামনের বাড়ির পাঁচ দশকের বাসিন্দা নির্মলেন্দু মজুমদার বলেন, “বহুকাল আগে ঘোষাল পরিবারের এক শরিক ওই জমিতে গাড়ি রাখার অনুমতি দেন। পর্যটনকেন্দ্র করতে গেলে আরও পরিকল্পনা দরকার। সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজের গতিও বাড়াতে হবে।”
ফাল্গুন মাসে বসে শিবরাত্রির মেলা। সেই সময়ে দূরের দর্শনার্থীরা আসেন। এখন রোজ সকাল ৬টা থেকে ৬ ঘণ্টা, আবার বিকেল ৪টে থেকে ৮টা মন্দির খোলা থাকে। তবে আশপাশের ঘন বসতিপূর্ণ এলাকার ভিড় প্রায় সারা দিনই ছড়িয়ে থাকে মন্দিরচত্বরে। মূল রাজবাড়ির প্রবেশপথে শ্বেতপাথরের ফলকে সংরক্ষণ-সংস্কারের তারিখ লেখা আছে ২০১২-র ১৪ জানুয়ারি। ফটক পেড়িয়ে ঢুকলেই ডান দিকে বর্জ্যের স্তূপ। ডান দিকের খোলা চত্বরে গাড়ি রাখার পেল্লাই গ্যারাজ যথেষ্ঠ দৃষ্টিকটূ।
কাজ শুরুর ২২ মাস বাদেও অগ্রগতিতে আশ্বস্ত নন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজেও। তিনি বলেন, “নানা সমস্যা ছিল। তবে কয়েক মাসের মধ্যে কাজ যথেষ্ট এগোবে।” আশাবাদী পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। তিনি বলেন, “দীর্ঘকাল অবহেলিত ছিল এই ঐতিহ্যপূর্ণ জায়গাটি। চেষ্টা হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব পর্যটনের মানচিত্রে এটিকে একটা গৌরবময় স্থান দেওয়ার।” |