সকাল দশটা। ডাউন হাসনাবাদ লোকাল থেকে নেমে অফিসের দিকে রওনা দিলেন সরকারি কর্মী বিনয় দাস। প্ল্যাটফর্মের ভিড় এড়িয়ে ১ নম্বর গেট দিয়ে বেরোনোর সময় আচমকা একটি বস্তায় পা আটকে গেল। হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে কোনও রকমে ধরে ফেললেন এক সহযাত্রীর হাত।
নিত্যযাত্রীরা বলছেন, রোজ সকাল-সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে-বেরোতে এমন হাজারো সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে। যাত্রীদের অভিযোগ, রেল ও প্রশাসন যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে নজর না দেওয়াতেই এই হাল। সম্প্রতি শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর জুড়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ শুরু হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে।
রেল সূত্রের খবর, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দিনে ৮৮৯টি লোকাল-সহ ৯৭৯টি ট্রেন চলে। এর মধ্যে আছে রাজধানী, দুরন্ত-সহ কয়েকটি ‘হাই প্রোফাইল’ দূরপাল্লার ট্রেনও। রেলের হিসেবে, দিনে গড়ে ২০ লক্ষ যাত্রী এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। সঙ্গে আরও লাখ দেড়েক দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রী রয়েছেন। রেলের এক কর্তার বক্তব্য, “টিকিট কাটার হিসেবে এই ২১ লক্ষের মতো যাত্রীর হিসেব রয়েছে। বিনা টিকিটের যাত্রীদের ধরলে সংখ্যাটা আরও বেশি।” |
রেলের একটি সূত্র বলছে, সকাল-সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়েই যাত্রীর চাপটা বেশি থাকে। এক-একটি লোকাল ট্রেনে প্রায় হাজার তিনেক লোক আসেন। এর সঙ্গে আছেন সব্জি-মাছ বিক্রেতা। ফলে একই সঙ্গে খান তিনেক লোকাল ট্রেন ঢুকলে বা ছাড়ার আগে প্ল্যাটফর্মে ঠাসাঠাসি ভিড় হয়। ওই সময়ে দুর্ঘটনাও ঘটে।
কেন এই পরিস্থিতি?
রেলের একাংশের বক্তব্য, প্ল্যাটফর্মের ভিতরে অবস্থা খারাপ নয়। কিন্তু স্টেশন চত্বর ও তার বাইরে অনিয়ন্ত্রিত হকার-বাজারের জন্য যাত্রীরা সমস্যায় পড়ছেন। তার উপরে শিয়ালদহ আদালতের দিকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ শুরু হওয়ায় সাবওয়ে বন্ধ। পার্কিং লটের বড় গেট দিয়ে বেরোনোর রাস্তাও অনেকটা আটকানো। রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের এক কর্তা বলেন, “ওই রাস্তা বন্ধ হওয়ায় বেশির ভাগ যাত্রীই এক নম্বর গেট (প্রফুল্ল দ্বার) দিয়ে যাতায়াত করছেন। ফলে চাপটাও বেড়েছে।” যদিও রেলের অন্য একটি অংশ বলছে, শিয়ালদহ থেকে সময় মতো লোকাল ট্রেন ছাড়ে না। তাই অনেক সময়েই প্ল্যাটফর্মে থিকথিকে ভিড় জমে যায়।
তবে যাত্রীদের বেশির ভাগের অভিযোগ, ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরে (প্রফুল্ল দ্বার) টিকিট কাউন্টারের লাইন তো রয়েইছে, তার উপরে প্ল্যাটফর্মের সিঁড়ি থেকে নামলেই ফুটপাথে সার দিয়ে ফুল, ফল, জলখাবারের হরেক দোকান। যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা, মালবাহী সাইকেল ভ্যান। “ঘিঞ্জি এলাকায় সরু রাস্তায় দোকান-বাজারের দাপটে চলাফেরা করাই দায়। স্টেশন থেকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড পর্যন্ত পৌঁছতে নাভিশ্বাস উঠে যায়,”মন্তব্য এক নিত্যযাত্রীর।
তা হলে কি এমনটাই ভবিতব্য শিয়ালদহের নিত্যযাত্রীদের? রেলের অবশ্য দাবি, নিত্যযাত্রীদের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্টেশন চত্বরের কাছ থেকে দু’টি বাসরুট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেলের এক কর্তা বলেন, “নবান্নে কর্মীদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে বাস রাখার কথা জানিয়েছিল। যাত্রীদের একটা বড় অংশের কথা মাথায় রেখেই তা-ও করা যায়নি।” কিন্তু এতেও যে যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্য বাড়েনি, সে কথাও মেনে নিয়েছেন ওই কর্তা। রেল সূত্রের খবর, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে কিছু স্থায়ী ব্যবস্থার ভাবনা-চিন্তা শুরু করা হয়েছে। শিয়াদহের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার সুচিত্ত দাস বলেন, “যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য নতুন কোনও পথ বার করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মেট্রোকেও দ্রুত কাজ শেষ করার অনুরোধ করা হয়েছে।” তবে এ সব পথে সমস্যার সমাধান হতে অন্তত দু’বছর লেগে যাবে বলে তিনি জানান। |