নিউ টাউন থাকছে নিউ টাউনেই। বাম সরকারের আমলে নিউ টাউনের নাম ‘জ্যোতি বসু নগর’ রাখা হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্য বিধানসভায় মঙ্গলবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, জ্যোতি বসু নগর নয়, নিউ টাউন নামই থাকবে নিউ টাউনের। আর তাতেই প্রতিবাদ জানিয়ে এ দিন বিধানসভার দ্বিতীয়ার্ধের অধিবেশন থেকে ওয়াক-আউট করেন বামেরা। এমনকী, বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যায় রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে বাম বিধায়কদের এক প্রতিনিধি দল দরবারও করেন।
সরকার পক্ষ এ দিন সভায় ‘নিউ টাউন কলকাতা ডেভলপমেন্ট অথরিটি (সংশোধনী) বিল ২০১৩’ আনে। সভা শুরু হতেই সূর্যবাবু অভিযোগ তোলেন, সরকার ‘জ্যোতি বসু নগর’ নামটাই তুলে দিয়েছে সংশোধনী থেকে। এরই প্রতিবাদে তাঁরা সভা থেকে ওয়াকআউট করছেন। কংগ্রেস প্রথম থেকেই সভা বয়কট করছে। ফলে বিরোধীশূন্য সভায় সংশোধনী বিলটি পাশ হয়। এই সংশোধনী রাজ্যপালের অনুমতি পাওয়ার পরই নিউ টাউন এলাকায় বাড়ি-ঘরের সমীক্ষা, কর আরোপের কাজ শুরু হবে। বিশুদ্ধ পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো ইত্যাদির কাজ শেষ হতে আরও ১০ বছর লাগবে বলে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান।
পরে সূর্যবাবু অভিযোগ করেন, “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই বর্তমান সরকার আগের বিলটি প্রত্যাহার করেছে। এটা সংবিধানসম্মত কি না, তা জানতে আমরা রাজ্যপালের কাছে যাব। কারণ, আমাদের সরকার আইনমাফিক নিউ টাউনের নামকরণ করেছিল।” রাজভবনে যাওয়ার আগে সূর্যবাবু বলেন, “নামকরণ আইনসঙ্গত ভাবেই হয়েছিল। তৃণমূল গা-জোয়ারি করে নামটা বাদ দিচ্ছে।” প্রতিবাদ জানিয়ে এ দিন সভার বাইরে দীর্ঘক্ষণ বাম বিধায়করা বিক্ষোভ দেখান।
পুরমন্ত্রী পাল্টা বলেন, ‘‘বিরোধী বামেরাই রাজনীতি করার উদ্দেশেই এই অভিযোগ করছেন।” সংশোধনী বিলটি নিয়ে সভায় ফিরহাদ বলেন, “নগরের নামকরণই আইনসম্মত ভাবে করা হয়নি, পরিচালন কর্তৃপক্ষের নামকরণ করব কী করে? এই আইনে শেষ যে সংশোধনী আনা হয়েছিল, সেটি রাজ্যপালের সম্মতিই পায়নি।” তিনি জানান, সংশোধনী আনা হয়েছে নিউ টাউন এলাকার পরিচালন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ নিউ টাউন কলকাতা ডেভলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) আইনের দু’টি ধারা নিয়ে। পরে সভার বাইরে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, এ দিন বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা কমিটির সভায় এই বিষয়ে আলোচনার সময়ে নামকরণ নিয়ে বামেরা চাপ দিয়েছেন। কিন্তু তা মানা যায়নি। কারণ ব্যাখ্যা করে পার্থবাবু বলেন, “২০১১-র ২৩ মার্চ বাম সরকার নামকরণের সংশোধনী এনেছিল। কিন্তু ১ এপ্রিল বিধানসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় সেটি রাজ্যপাল ফেরত পাঠান।”
এ দিন সংশোধনী নিয়ে আলোচনার সময় নিউ টাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত জানান, নতুন শহরের এলাকার মধ্যে ছ’টি পঞ্চায়েত এলাকা রেখে দেওয়া হয়েছে। ফলে নিউ টাউনে সর্বোচ্চ বাড়ি ১৮ তলা হলেও পাশেই জ্যাংড়া-হাতিয়াড়ায় পঞ্চায়েতের অনুমোদন নিয়ে ২৭ তলা পর্যন্ত বহুতল তৈরি হয়েছে। পঞ্চায়েত এলাকায় কৃষির কোনও চিহ্নই নেই বলে তিনি দাবি করেন। সেখানে জমির চরিত্র বদল না-করেই বাড়ি-ঘর তৈরি হচ্ছে। যার জন্য নিউ টাউনের সার্বিক পরিকল্পনা বাধা পাচ্ছে। বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু, জগদ্দলের পরশ দত্তের বক্তব্য, নিউ টাউনে নিকাশি ব্যবস্থা, জলের ব্যবস্থা, এমনকী জমির আইনসঙ্গত হাতবদল, দাম ইত্যাদি ঠিক না-করেই আগের সরকার শহর গড়ছিল। পুরমন্ত্রী জানান, ছ’টি পঞ্চায়েত এলাকার জমি নিয়েই নিউ টাউনের জন্য ল্যান্ড ইউজ ডেভেলপমেন্ট পরিকল্পনা তৈরি করছে হিডকো। |