আর্থিক ঘাটতির কথা মাথায় রেখে আপত্তি করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। কিন্তু কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রক মনে করে নাব্যতা বাড়াতে নদীর বুক থেকে পলি ও আবর্জনা তোলা তথা ড্রেজিংয়ের জন্য কলকাতা বন্দরকে আর্থিক ভর্তুকি দেওয়াটা জরুরি। এ বার যোজনা কমিশনওজোরালো সওয়াল করল ড্রেজিংয়ের খরচ জোগানোর পক্ষে। জাহাজ মন্ত্রক এবং যোজনা কমিশনের সুপারিশ, কেন্দ্র কলকাতা বন্দরকে চার বছরে ১,৫০১ কোটি টাকা অর্থ সাহায্য করুক এই খাতে। সূত্রের খবর, শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাবে এ বার চূড়ান্ত সম্মতি দিতে চলেছে মনমোহন সিংহের সরকার।
কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, কলকাতা বন্দরকে ড্রেজিংয়ের জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে। গত জুন ও জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এ ব্যাপারে প্রস্তাব রাখা হয়। কিন্তু তখনও জাহাজ মন্ত্রকের প্রস্তাবে আপত্তি করে অর্থ মন্ত্রক। সেই পরিস্থিতিতে প্রস্তাবটি প্রথমে সচিব স্তরের একটি কমিটির বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। পরে সেপ্টেম্বর মাসে সেই প্রস্তাবটি বিবেচনা করে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয় যোজনা কমিশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলিকে নিয়ে গঠিত একটি কমিটিকে। ওই সচিব স্তরের কমিটিই সুপারিশ করেছে, কলকাতা বন্দরকে আর্থিক দিক থেকে মজবুত রাখতে হলে কেন্দ্রকে ড্রেজিংয়ের জন্য অর্থ সাহায্য করতে হবে। বন্দরটিকে তার নিজের আয়ের টাকা থেকে ড্রেজিংয়ের জন্য খরচ করতে হয় তবে তা, আর লাভজনক সংস্থা থাকবে না।
কমিটির তাই সুপারিশ করেছে, চার বছরে কলকাতা বন্দরকে মোট দেড় হাজার কোটি টাকা দেওয়া হোক। এর মধ্যে গত আর্থিক বছর অর্থাৎ ২০১২-১৩-র জন্য জন্য ৩৯৬ কোটি ও চলতি আর্থিক বছরের জন্য ৪০৪ কোটি টাকা দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। এর পরের দুই আর্থিক বছরে যথাক্রমে ৩৬০ কোটি ও ৩৪০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে কমিটি।
সচিবদের কমিটির এই সুপারিশে সমর্থন জানিয়েছে যোজনা কমিশনও। তবে তাদের একটি শর্ত রয়েছে এ ব্যাপারে। তা হল, অর্থ সাহায্য করা হলে তার অডিটের দায়িত্ব দিতে হবে তৃতীয় একটি পক্ষকে।
কলকাতা বন্দরের কেন এই অর্থ সাহায্য প্রয়োজন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা ব্যাখ্যা করেছে যোজনা কমিশনও। তাদের বক্তব্য, কলকাতা বন্দর দেশের একমাত্র নদীবন্দর। ভরা জোয়ারের কারণে রোজ পলিমাটি এসে জমছে হুগলি নদীর বুকে। নদীর দুপাশে ঘন জনবসতি থাকাতেও নদীতে জমছে আবর্জনা। ফলে এখানে ধারাবাহিক ভাবে ড্রেজিং চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ভর্তুকির সমর্থনে যোজনা কমিশন আরও যে যুক্তিটি দেখিয়েছে তা হল, ইলাহাবাদ থেকে হলদিয়া পর্যন্ত গঙ্গা-ভাগীরথী-হুগলি নদীপথকে জাতীয় নদীপথ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই পথের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও কেন্দ্রকেই নিতে হবে। নয়তো যারা এই বন্দরকে পণ্য পরিবহণে ব্যবহার করে তাদের কাছ থেকে ড্রেজিংয়ের খরচ উসুল করতে হবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে। এর মধ্যে সেল, ইন্ডিয়ান অয়েল-সহ অনেক সংস্থাই আবার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। ফলে কেন্দ্র অর্থ সাহায্য না করলে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মন্ত্রিগোষ্ঠীর এ-ও বক্তব্য, কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের বহু মাঝারি ও ছোট শিল্প সংস্থা পণ্য আমদানি-রফতানি করে, তাই ড্রেজিং না হলে এই সংস্থাগুলিও ক্ষতির মুখে পড়বে। ফলে ড্রেজিং খাতে ভর্তুকির দায় নিতে হবে কেন্দ্রকেই। কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, যোজনা কমিশন-সহ আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠীর এই সওয়ালের পর কলকাতা বন্দরের আর্থিক সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা এখন উজ্জ্বল হয়েছে। শীঘ্রই সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন মনমোহন সরকার। |