পর্যাপ্ত জল রয়েছে, সমস্যা হবে না রবি চাষে
হিংলো জলাধার থেকে দুবরাজপুর ব্লকের একটা বড় অংশ এবং দুবরাজপুরের হেতমপুর ও লোবা পঞ্চায়েত এলাকায় পৌঁছে যায় সেচের জল। বিশেষত বর্ষার শেষ দিকে মাঠের ফসল বাঁচাতে প্রতি বছর ওই জলাধারের জলের উপর নির্ভর করেন আনেক চাষি। এ বার শেষ বেলায় পিলিন ও নিম্পচাপের যৌথ উদ্যোগে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতে কয়েকটি উপকার হয়েছে। এক শেষ বেলায় জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য হিংলো জলাধারের জল ব্যবহার করতে হয়নি কৃষকদের। আর সেচের জন্য জল ছাড়তে না হওয়ায়, জলাধারে প্রচুর জল মজুত রয়েছে। সেচ দফতরের হিসেবে এই মুহূর্তে জল মজুত রয়েছে ১০ হাজার একর ফিট। যেটা সামনের রবিশস্য চাষে সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারবে। এসডিও (হিংলো সেচ) সাধন গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জলাধারের জল থেকে এ বার কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার একর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব।
জমিতে থাকা আর্দ্রতা, বৃষ্টির জলে ভরে থাকা পুকুর ডোবা এবং সেচ খাল থেকে পর্যাপ্ত জল পেলে ভাল চাষ হবে রবি শস্যের এমনটাই মনে করছেন এলাকার চাষি ও কৃষি দফতরের আধিকারিকেরাও। খয়রাশোল ব্লকের উপ-কৃষিঅধিকর্তা দেবব্রত আচার্য এবং দুবরাজপুর ব্লকের কৃষি সম্প্রসারণ আধিকারিক গোঁসাই দাস বিশ্বাসেরা বলছেন, “খয়রাশোল বা দুবরাজপুরে যে পরিমাণ জমিতে রবি শস্যের চাষ হয়, এ বার তার থেকে ২০ শতাংশ বেশি জমিতে চাষ হবে বলে আশা করছি।”
তাঁদের যুক্তি, এ বার জমিতে আর্দ্রতা বেশি থাকায় মুসুর, খেসারি, ছোলার মতো ডাল শস্যের চাষ করতে যেমন বেগ পেতে হবে না চাষিদের, অন্য দিকে সর্ষে, গম, আলুর মতো ফসল যেগুলিতে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন, জলের আভাব না থাকায় সেক্ষেত্রেও সমস্যা হবে না। আর হিংলো জলাধার থেকে জল পাওয়া গেলে সেটা আরও সুবিধের। খয়রাশোলের চাষি জয়ন্ত ঘোষ, ভাদুলিয়ার রামকৃষ্ণ পাল, পাইগড়ার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়, দুবরাজপুরের দোবান্দা গ্রামের শেখ মীর মহম্মদ ও লোবার ঝিরুল গ্রামের রণবীর চৌধুরীরা জানালেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা সর্ষে, আলু, ছোলা, মুসুরের মতো ফসল লাগিয়েছেন। মাঠে এখনও ধান রয়েছে। ওই ধান উঠে গেলে আরও ফসল চাষ করবেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন। ওই সব চাষিদের কথায়, “অন্য বারের থেকে এ বার বেশি পরিমাণ রবিশস্য চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হিংলো জলাধার থেকে জল পাওয়া গেলে অনেক সুবিধা হবে।”
ধুলো উড়িয়ে মাঠ থেকে বাড়ির পথে চলেছে একটার পর একটা ধান বোঝাই গরুর গাড়ি। বছরের এই সময়টায় বীরভূমের এক পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু পিলিন ও নিম্নচপের জেরে যে বৃষ্টি হয়েছিল, তার জেরে এখনও বেশ কিছু ধানখেতের মাটি এখনও নরম। গরুরগাড়ির চাকা বসে যাচ্ছে মাঠে নামলেই। তাই ধান কাটার কাজ পুরোদমে চললেও গরুরগাড়িতে করে ধান বাড়িতে তোলার কাজ সারতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে।
কিন্তু জমিতে আর্দ্রতা বেশি থাকায় ধান ঘরে তুলতে সামান্য সমস্যা হলেও লাভই বেশি মনে করছে কৃষি দফতর। কারণ, এই জমিতে রবি চাষে বাড়তি সুবিধা পাবেন চাষিরা। বিশেষত ডাল জাতীয় শস্য চাষে। এমনকী যেখানে সেচের সুবিধা নেই সেখানেও। তবে কৃষি আধিকারিকদের পরামর্শ, যেহেতু অন্য বারে ধান উঠে যাওয়ায় সর্ষে চাষ এই সময়ে প্রায় হয়ে যায়। এ বার সেখানে বেশ কিছুটা বিলম্ব হল। তাই সর্ষে চাষের বীজ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কৃষি দফতরের পরামর্শ মেনে চললে সঠিক পরিমাণে ফসল পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকবে না।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ ডিসেম্বর থেকে দফায় দফায় হিংলো জলাধার থেকে জল ছাড়া হবে। তবে হিংলো জালাধার থেকে জল পাবেন বলে শুধু চাষিরা খুশি হবেন এমনটা কিন্তু নয়। কারণ, প্রতি বার জয়দেব কেন্দুলী মেলায় আসা লক্ষাধিক পুণ্যার্থী আজয় নদে মকরস্নান সারেন। সেই জল আসে হিংলো জলাধার থেকেই। অজয়ে সেই সময় জল এমনিতে এতাটাই কম থাকে। তাতে মাথা ডুবিয়ে স্নান প্রায় অসম্ভব। কাজেই হিংলো থেকে ছাড়া জলের উপরেই কোনও রকমে ভরসা করেন পুণ্যার্থীরা। এ বার পর্যাপ্ত জল থাকায় কিছুটা বেশি পরিমাণ জল সেই সময় ছাড়তে পারবেন বলে আশাবাদী সাধনবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.