আসানসোল রেলপাড়
যাতায়াতে ভরসা শুধু সরু টানেল, ক্ষোভ
রেললাইনের এক পাশে রেলপাড় এলাকা, অন্য পাশে মূল শহর। দু’দিকের মধ্যে যোগাযোগের সহজ উপায় তিন জায়গায় রেললাইনের তলার সুড়ঙ্গ পথ বা টানেল। কিন্তু সেখান দিয়ে বড় গাড়ি যাতায়াত করতে পারে না। ফলে, রেললাইনের এক দিক থেকে অন্য দিকে যেতে বড় গাড়িকে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। দীর্ঘ দিন ধরে শহরের এই দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম করার দাবি জানিয়েও ফল না হওয়ায় ক্ষুব্ধ আসানসোলবাসী।
আসানসোল শহরের উত্তর অংশে এই রেলপাড় এলাকায় বহু মানুষের বাস। স্টেশন লাগোয়া এই এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারে উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে বারবার। আসানসোলের নাগরিক সংগঠনের সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, আসানসোল রেল শহর হিসেবেও পরিচিত। এখানে প্রধান বাসস্ট্যান্ড থেকে বিনোদনের পার্ক, সবই রেলের জমিতে। অথচ, রেলের একটি বড় অংশের কর্মী যে এলাকায় বাস করেন, সেই রেলপাড়ের কোনও উন্নয়ন হয়নি। সব থেকে খারাপ অবস্থা যোগাযোগ ব্যবস্থার।
চলে না বড় বাস বা লরি। ছোট করতে হয় মিনিবাস।
রেলপাড়ের সঙ্গে বাকি শহরের সড়কপথে যোগাযোগে ভরসা তিনটি রেল টানেল। তার মধ্যে কুরেশিমহল্লার টানেলটি একমুখি। স্টেশনের পাশে ও দোমহানি কলোনি এলাকায় দু’টি মুখের টানেলগুলিই মূলত ব্যবহার করেন শহরবাসী। কিন্তু সেখানেও সমস্যার অন্ত নেই। স্টেশনের কাছের টানেলটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই রাস্তা দিয়ে শহরের ৮টি ওয়ার্ডে যাতায়াত করা যায়। এই টানেলের নীচে রয়েছে রেলের একটি নিকাশি নালা রয়েছে। একটু বেশি বৃষ্টি হলে সেই নর্দমা উপচে টানেল জলে ভরে যায়। ফলে, ঘণ্টা দুয়েক কার্যত হিমসিম খেতে হয় পথচারীদের। দেড় কিলোমিটার দূরে দোমহানি টানেল বা কয়েক কিলোমিটার ঘুরে ধাদকা বা কল্যাণপুর দিয়ে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।
রেলপাড় এলাকা আসানসোলের ২৩ থেকে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ভোট এলে নেতারা প্রচারে এসে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়ে যান। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। ২৮ নম্বর ওর্য়াডের প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর মহম্মদ কুরবান, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম নেত্রী শিবানী চট্টোপাধ্যায়দের দাবি, প্রবল বর্ষণের দিন দুর্ভোগের একশেষ হয়। আশঙ্কাজনক রোগীকে তিন কিলোমিটারের পরিবর্তে প্রায় ছয় কিলোমিটার ঘুরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কলেজ, পুরসভা, প্রায় সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, আদালত, জীবনবিমা, আয়কর, বানিজ্যকর, সব কিছুর অফিসই আসানসোল দক্ষিণ এলাকায় তথা শহরের প্রাণকেন্দ্রে। এমনকী, রেলপাড়ে খেলার কোনও স্টেডিয়াম পর্যন্ত গড়া হয়নি। প্রধান রেল টানেল দিয়ে কোনও বড় যান চলাচল করতে না পারায় নির্মাণকাজে প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনতে হয় ঘোরা পথে। ফলে, পরিবহণ খরচও বেশি লাগে। বারবার পুরসভাকে রেলের কাছে দরবার করে বিষয়টি নিষ্পত্তির উগ্যোগী হওয়ার আবেদন জানিয়েও কোনও প্রতিকার হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
বাস-লরি গলে না, টানেলের জন্য ছোট করতে হয় মিনিবাসও।
ওই টানেল দিয়ে লরি বা বড় বাস চলাচল করতে পারে না। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, ওই টানেলের জন্য মিনিবাসের উচ্চতা এক ফুট কমাতে হয়। আসানসোল পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা রেলপাড়ের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের যদিও দাবি, তাঁরা বহু বার রেলকে চিঠি দিয়ে সমস্যা মেটানোর আবেদন জানিয়েছেন। শেষে রেল একটি বৈঠকে জানায়, উড়ালপুল তৈরির ক্ষমতা তাদের নেই, তবে গার্ডার ব্রিজ তৈরি করা হবে।
আসানসোলের মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটক অবশ্য জানান, রেল এই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হলে পুর কর্তৃপক্ষ পাশে থাকবে। রেলের এক ঠিকাদার সুধাময় ঘাঁটি জানান, বীরভূমের রামপুরহাটে একই রকম সমস্যা ছিল। সেখানে গার্ডার ব্রিজ করে সমস্যা মেটানো হয়েছে। টানেলের নীচে আর একটি নর্দমা গড়লেই জল জমার সমস্যাও মিটবে বলে জানান তিনি। সুধাময়বাবুর দাবি, “নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতিতে (কন্ট্রোল ব্লাস্টিং) কাজ করে ওই টানেল বাড়ানো সম্ভব। রেল প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগান দিলে আমি পারিশ্রমিক ছাড়া সেই কাজ করে দিতে রাজি আছি বলে রেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মু বলেন, “এই দুই এলাকার মধ্যে যোগাযোগের জন্য একটি সেতু জরুরি। সেখানে গার্ডার সেতু গড়ার ভাবনা-চিন্তা রয়েছে।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.