|
|
|
|
ফাঁকা আবাসনে দুষ্কর্ম বারবার, নেই ব্যবস্থা
সুশান্ত বণিক • আসানসোল |
নিয়মিত আনাগোনা করে দুষ্কৃতীরা। নেশার আসর তো বসেই, চলে আরও নানা রকম অসামাজিক কাজকর্মও। আসানসোলে নানা পরিত্যক্ত আবাসনে এ সব দুষ্কর্মের কথা পুলিশকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ আশপাশের বাসিন্দাদের। তাঁদের ক্ষোভ, বড় কোনও ঘটনা ঘটে গেলে পুলিশ নড়েচড়ে বসে। কয়েক দিন তৎপরতা দেখা যায়। কিন্তু তার পরে সেই এক অবস্থা।
রবিবার রাতে আসানসোলের কল্যাণপুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আবাসন থেকে এক বালিকার পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। রেলপাড় এলাকার ওই বালিকা ১৮ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিল বলে জেনেছে পুলিশ। যে রকম আবাসন থেকে ওই বালিকার দেহ মেলে, সেই ধরনের পরিত্যক্ত আবাসন আরও বেশ কিছু রয়েছে। কোনওটিরই জানলা-দরজা নেই, কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। অবাধে সেখানে যাতায়াত করা যায়। এলাকাবাসী জানান, প্রায় দু’দশক ধরে এই অবস্থায় পড়ে রয়েছে আবাসনগুলি। তবে সেগুলি কোন সংস্থার তা পুলিশ জানে না। কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশকুমার চাডভে জানান, তাঁরা পূর্ত দফতরকে চিঠি দিয়ে আবাসনগুলি কাদের তা জানতে চাইবেন। তবে পুলিশের একটি সূত্রে জানায়, সেগুলি পুলিশ আবাসন হিসেবে তৈরি হয়েছিল, কিন্তু ব্যবহার হয়নি। এডিসিপি বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” রবিবার বালিকার দেহ মেলার পরই স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, ফাঁকা আবাসনগুলিতে মদ, জুয়ার ঠেক বসে, রাতের অন্ধকারে মহিলাদের আনাগোনাও টের পাওয়া যায়। একেবারে পাণ্ডববর্জিত এলাকা হওয়ায় সমাজবিরোধীদের আখড়া হয়ে উঠেছে এই সব আবাসন, দাবি তাঁদের। |
|
কল্যাণপুরে এই পরিত্যক্ত আবাসন থেকেই মিলেছে বালিকার দেহ। ছবি: শৈলেন সরকার। |
আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তে নানা পরিত্যক্ত আবাসনে অসামাজিক কাজ-কারবারের অভিযোগ নতুন নয়। আগেও বেশ কিছু অপরাধমূলক ঘটনায় তা সামনে এসেছে। বার্নপুরে ইস্কোর এক আবাসনের পাশের বড় নালা থেকে বছর দুই আগে উদ্ধার হয় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী পুষ্পা ঠাকুরের দেহ। এই ঘটনার পরে পরিত্যক্ত আবাসনগুলি ভেঙে দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছিলেন এলাকাবাসী।
রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএলেরও এলাকায় একাধিক পরিত্যক্ত ফাঁকা আবাসন আছে। সেগুলিতেও অসামাজিক কার্যকলাপ একটি নিত্য ঘটনা বলে অভিযোগ। অপহরণের পরে পরিত্যক্ত ফাঁকা আবাসনে এনে লুকিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটেছে অতীতে। আসানসোলের বরাচক, ধেমোমেন, নরসমুদা, চিনাকুড়ি, শীতলপুর, পাটমোহনা এলাকায় এ ধরনের বহু আবাসন আছে বলে জেনেছে পুলিশ। সেলের গ্রোথ ডিভিশনের কুলটি কারখানারও একাধিক পরিত্যক্ত আবাসন দুষ্কৃতীদের ডেরা হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। ২০০৩ সালে কারখানা বন্ধ হওয়ার পরে শ্রমিক-কর্মীদের বেশির ভাগ আবাসন ছেড়ে চলে গিয়েছেন। সেগুলিই এখন দুষ্কৃতীদের আখড়া। কুলটির নিউ কলোনি, শিমুলগ্রাম এলাকার নানা আবাসনেও দেদার সমাজবিরোধীদের আনাগোনা বলে এলাকাবাসী জানান। কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, আবাসনগুলি প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীদের লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তা হলেই এই ধরনের সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে। ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, জবরদখল আবাসনগুলি খালি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এ সব পরিত্যক্ত ফাঁকা আবাসন নিয়ে চিন্তায় পুলিশও। এডিসিপি (সেন্ট্রাল) জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিত্যক্ত আবাসনগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, “আবাসন ফাঁকা পড়ে থাকলেই বিপদ বাড়বে। আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তাদের পরিত্যক্ত আবাসন ভেঙে দেওয়ার কথা বলব।” এডিসিপি-র দাবি, অসামাজিক কাজকর্মের খবর পেলেই পুলিশ ওই সব এলাকায় হানা দেয়। কল্যাণপুরের ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। শহরের অন্যতম অভিজাত এলাকার কাছেই ফাঁকা আবাসনে বালিকার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুরসভাও। ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে ফাঁকা আবাসন ভেঙে ফেলার আবেদন জানানো হবে।
দুষ্কর্মের পরেই শুরু হয়েছে নড়াচড়া। কাজের কাজ কতটা হল, সময় বলবে। |
|
|
|
|
|