যে যার গড় অটুট রাখলেন উদয়ন-বীরেন
ক জনের দল বদল করায় তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েন। অন্য জন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ধরাশায়ী ফলের জন্য দলের অন্দরেই চাপের মুখে ছিলেন। কোচবিহার ও দিনহাটা পুরসভার উপনির্বাচনে অবশ্য এলাকায় এখনও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখলেন সেই ‘দাপুটে’ নেতারা। তাঁদের একজন কোচবিহার পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান বীরেন কুন্ডু। যিনি গত অগস্টে সমস্ত কংগ্রেস কাউন্সিলরকে নিয়ে দলবদল করে বিতর্কে জড়ান। কংগ্রেসের একটি গোষ্ঠীই বীরেনবাবুর বিরুদ্ধে ‘ব্যক্তিগত স্বার্থে’ দলবদলের অভিযোগও তুলেছিল। অন্যজন দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহ। এলাকার বাসিন্দাদের কাছে যিনি ‘বাবনদা’ নামে বেশি পরিচিত। পঞ্চায়েত ভোটে নিজের খাসতালুকে দলের বিপর্যয়ের জন্য তাঁকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
মালবাজারে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
এবার পুরসভার উপনির্বাচনের ফলাফলে গতবারের থেকেও নিজেদের দলের প্রার্থীদের জয়ের ব্যবধান বাড়ায়। তাই ওই দুটি এলাকায় ‘বীরেন-বাবন’-এ ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির কথাই নিতুতলার কর্মী-সমর্থকদের আলোচনায় উঠে এসেছে। উদয়নবাবু নিজের প্রভাব ধরে রাখতে পারলেও মালবাজার পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হওয়ায় একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারাল বামফ্রন্ট। সোমবার ওই ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে তৃণমূলের যূথিকা বসু ১৮ ভোটে হারিয়ে দিয়েছে সিপিআই প্রার্থী প্রভা সোনারকে। যূথিকা দেবী পান ৩৬১টি ভোট। এদিন বিকেলেই কলকাতায় রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস ভবনে গিয়ে মালবাজার পুরসভার দুই কাউন্সিলর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তাঁরা হলেন মালবাজার টাউন কংগ্রেস সভাপতি তথা কাউন্সিলর সুলেখা ঘোষ এবং কাউন্সিলর উৎপল ভাদুড়ি। এ দিন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা গ্রহন করেন তাঁরা।
কোচবিহার পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ছিল ১০টি। তাদের মধ্যে বীরেন কুন্ডু সহ ৭ জন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসেন। বামেদের দখলে ছিল ৯টি ওয়ার্ড। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থীর মৃত্যুতে খালি হওয়া ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওই আসনের ফল পুরবোর্ডের ভাগ্য বদলে দিতে পারত। কংগ্রেসের দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে বীরেনবাবুর ‘ব্যক্তিগত স্বার্থে’ দলত্যাগ প্রভাব ফেলবে বলেও কংগ্রেসের একাংশে প্রচার ছিল। ফলাফল ঘোষণার পর অবশ্য দেখা যায়, কংগ্রেস প্রার্থী তৃতীয় স্থান পেয়েছেন। হাত প্রতীকে পান্নালাল সরকার পান ১১৮ টি ভোট। ওই আসনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের শুভব্রত সেনগুপ্তকে ১৪৭ ভোটে হারিয়ে জিতেছেন তৃণমূলের দীপক ভট্টাচার্য। দীপকবাবু ৪৯১টি, শুভব্রতবাবু ৩৪৪টি ভোট পেয়েছেন। বিজেপির সুব্রত দত্ত পেয়েছেন ৪২টি ভোট। গতবার ওই আসনটি কংগ্রেস ৫৯ ভোটে জিতেছিল।
বীরেনবাবু বলেন, “উন্নয়নের পক্ষে, মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শে ও কাজে মুগ্ধ হয়ে আমাদের দলবদলের সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল, সমস্ত অপপ্রচার রুখে এই ভোটে মানুষ তারও জবাব দিলেন।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “যেখানে যার বোর্ড রয়েছে, উপনির্বাচনে মানুষ তাদের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। কারও ব্যক্তিগত ক্যারিশমার ব্যাপার নেই।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, পুরসভার বিরোধী দলনেতা মহানন্দ সাহার অবশ্য সাফাই, “অন্য ওয়ার্ডকে বঞ্চিত করে শুধু ওই ওয়ার্ডে ভোটের জন্য উন্নয়নের কাজ হয়েছে। তাতেই ওই ফল হয়েছে। তারপরেও গতবারের তুলনায় আমাদের প্রাপ্তভোট আড়াই শতাংশ বেড়েছে।”
জয়ের পরে কোচবিহারে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
দিনহাটা পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী স্বপ্না ভৌমিক তৃণমূলের জুলি সাহাকে ৪৬৫ ভোটে হারিয়ে ‘বড়’ জয় পেয়েছেন। গত নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লক ৭৪ ভোটের ব্যবধানে আসনটি জিতেছিল। এ বার ফরওয়ার্ড ব্লকের স্বপ্না ভৌমিক ৭১২টি, তৃণমূলের জুলি সাহা ২৪৭টি ভোট পান। কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন যথাক্রমে ৩৯টি ও ১৪টি ভোট। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “গতবার ৭৪ ভোটের ব্যবধানে জেতা ওই আসনে এটা সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় বড় জয়। পঞ্চায়েতেও মিথ্যা মামলায় জর্জরিত করা না হলে, পুলিশের ভূমিকা এ বারের মত হলে খারাপ ফল হত না।” কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দিনহাটায় ওই ফলের কারণ খতিয়ে দেখা হবে।”
মালবাজারে ২০০৯ এর পুর নির্বাচনে বামেরা ৮টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়। তৃণমূল ৩টি এবং কংগ্রেস ৪টি আসন দখল করে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বাম প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সরকারি চাকরি পেয়ে যাওয়ায় কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফা দেন। সে কারণে ওই ওয়ার্ডে উপনির্বাচন হয়। উপনির্বাচনে হারের পর বামেদের আসন কমে দাঁড়াল ৭। এ দিন তৃণমূল প্রার্থীর জয় এবং দুই কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তাদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬। রাজ্য যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মালবাজারের অন্য দুই কংগ্রেস কাউন্সিলরও শীঘ্রই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তাতে শীঘ্রই তৃণমূল একক ভাবেই মালবাজার পুরবোর্ড গঠন করবে।”
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর সুলেখা ঘোষ জানান, কংগ্রেসে প্রাপ্য সম্মান না পেয়ে দল ছেড়েছেন। উৎপলবাবু বলেন, “কিছু পাওয়ার জন্যে তৃণমূলে আসিনি। এলাকার উন্নয়নের জন্যই এসেছি।” জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসু বলেন, “কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের দলত্যাগ মানুষ ভাল ভাবে নেবেন না। তারা গেলেও কর্মী-সমর্থকেরা আজও কংগ্রেসকেই সমর্থন করেন। কাউন্সিলরদের থেকেও ওই কর্মী সমর্থকেরা আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
তবে মালবাজারের টাউন তৃণমূল সভাপতি অপু সরকার বলেন, “নৈতিক পরাজয় স্বীকার করে বামেদের বোর্ড থেকে সরে আসা উচিত। অন্যথায় আমরা অনাস্থা আনব।” সিপিআই-এর মালবাজার আঞ্চলিক পরিষদের সম্পাদক আনিসুর রহমান উপনির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়ে বলেন, “আগামীতে সাংগঠনিক ত্রুটিগুলি শুধরে নিতে হবে আমাদের।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.