সম্পাদকীয় ১...
নেপালের জনাদেশ
নেপালের গণ-পরিষদ তথা জাতীয় সংসদের নির্বাচনে যখন সওয়া কোটি ভোটদাতার সত্তর শতাংশের অধিক ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে হাজির হন, তখনই মনে হইয়াছিল, একটি প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানের জন্য তাঁহারা কতটা বদ্ধপরিকর। গত পাঁচ বৎসর ধরিয়া সেই সংবিধান রচনায় টালবাহানা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে বীতশ্রদ্ধ হইয়া তাঁহারা যে এ বার একটা বলিষ্ঠ রায় দিতে মরিয়া, ভোটদানের বিপুল উৎসাহ এবং মহিলাদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্যে তাহারও ইঙ্গিত ছিল। কেবল দেওয়ালের লিখন পড়িতে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি মাওবাদীরা সমর্থ হন নাই। তাই কাঠমান্ডুর নির্বাচনকেন্দ্র হইতে মাওবাদী সর্বাধিনায়ক প্রচণ্ড তথা পুষ্পকমল দহালের শোচনীয় পরাজয়ের সংবাদে মাওবাদীরা কেবল মুহ্যমান হইয়া পড়েন নাই, ভোটগণনা পর্যন্ত বাতিল করার আর্জি জানাইয়াছিলেন।
তাঁহাদের আর্জি অবশ্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নীলকান্ত উপ্রেতি সংগত ভাবেই খারিজ করিয়া দেন। কেননা পরাস্ত মাওবাদীরা ছাড়া আর কেহই নির্বাচনে ‘অনিয়ম’-এর অভিযোগ তোলে নাই। যে হাজার-হাজার পর্যবেক্ষক এ বারের নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করিতে হাজির ছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার-সহ অর্ধশতাধিক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকও ছিলেন। সকলেই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলিয়া শংসাপত্র দিয়াছেন। ফলপ্রকাশের আগে পর্যন্ত, অর্থাৎ গণনা শুরুর সময়েও ভোট লইয়া মাওবাদীদের কোনও অভিযোগ শুনা যায় নাই। বরং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাইয়ের কেন্দ্রে মাওবাদী সমর্থকদের ব্যাপক কারচুপি এবং ব্যালট বাক্স পাচারের অভিযোগ উঠিয়াছিল। কিন্তু শীর্ষ দলনেতা প্রচণ্ডের পরাজয়েই মাওবাদীরা জনসাধারণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার বার্তাটি সম্যক উপলব্ধি করেন। আর তাহার পরেই ভোট বাতিল করার বায়না। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে দাঁড়াইয়া বামপন্থীদের ‘ভোট বয়কট’-এর কৌশলের আড়ালে মুখরক্ষার প্রয়াসের কথা প্রসঙ্গত অনেকের মনে পড়িতে পারে। তবে সেই বয়কটও ভোটগ্রহণের দিনেই ঘোষিত হয়, গণনা ও ফলপ্রকাশের পর নয়। নেপালের অন্য মাওবাদী নেতাদের কথা ছাড়িয়া দিলেও স্বয়ং প্রচণ্ডও যে জয় সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন না, তাহার প্রমাণ একই সঙ্গে দুইটি আসন হইতে তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অন্য আসনটিতে তিনি জয়ীও হন। সে ক্ষেত্রে ‘অনিয়ম’-এর অভিযোগ অবান্তর।
৬০১ আসনের গণ-পরিষদে ২৪০টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়, যাহাতে মাওবাদীরা মাত্রই ২৬টিতে জয়ী। শীর্ষ স্থানে উঠিয়া আসিয়াছে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেসআসন ১০৫। দ্বিতীয় স্থানে নেপালি কমিউনিস্ট পার্টি (সংযুক্ত মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী), আসন ৯১। বিভিন্ন মধেসি পার্টি মোট ১২টি আসনে জয়ী। অতঃপর আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় পড়া ভোটের গণনায় ৩৩৫টি আসনের ফল নির্ণয় হইবে এবং ২৬টি আসন মনোনীত হইবে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হিসাবে কমিউনিস্টদের ফল সর্বাপেক্ষা ভাল হওয়ার সম্ভাবনা, যাহার অর্থ এ বারও গণ-পরিষদে কোনও দল একক ভাবে গরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হইবে না। সংবিধান রচনার অনারব্ধ কাজ এবং দৈনন্দিন শাসনপ্রণালী চালাইবার বিষয়টিতে অনিশ্চয়তা ফিরিয়া আসার আশঙ্কা। যদি একটি জোট সরকার গড়িয়া ওঠে, তবে পারস্পরিক কোন্দলে তাহা অচিরেই অকার্যকর হইয়া পড়িবে না তো? নেপালি কংগ্রেস ও কমিউনিস্টদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে সংবিধান প্রণয়ন ও শাসন পরিচালনার যুগপৎ কৃত্য পালন করা উচিত। দেশবাসী মাওবাদীদের প্রত্যাখ্যান করিয়া সেই বার্তাই দিতে চাহিয়াছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.