পুজোর মরসুমে লম্বা ছুটি। এই ছুটিকে ঠিক ভাবে কাজে লাগানোর উৎকৃষ্ট উপায় হল ভ্রমণ। দুর্গাপুজোর ক’টা দিন তাই বাড়িতে কাটিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ২২ জনের দল, গন্তব্য ভূস্বর্গ।
বর্ধমান থেকে জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেসে ৪৩ ঘণ্টার যাত্রা শেষে পৌঁছলাম জম্মু। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ৪৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে কাটরা। শুরু হল সফর। হোটেলে এক দফা বিশ্রাস সেরে সন্ধ্যায় চড়াই-উৎরাই রাস্তায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বৈষ্ণোদেবী এবং মাতাজির মন্দির দর্শন। সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে হয়ে গেল পর দিন সকাল ৮টা।
পরের গন্তব্য শ্রীনগর। পাহাড়ের তলা দিয়ে গিয়েছে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ জহর টানেল। তার এক দিকে জম্মু, অন্য দিকে কাশ্মীর। সন্ধ্যায় ডাল লেকের ধারে হোটেলে পৌঁছলাম। পর দিন সকালে দর্শন হল ২৫৬টি সিঁড়ি ভেঙে সম্রাট অশোকের পুত্র নির্মিত শঙ্করাচার্যের মন্দির। এই মন্দিরে যাওয়া-আসার পথে পাহাড়ের উপর থেকে শ্রীনগর শহরের বিস্তীর্ণ রূপ দেখে মুগ্ধ হতে হয়। |
শ্রীনগরে ডাল লেকে শিকারায় ভ্রমণ। ছবি লেখকের সৌজন্যে। |
এর পরে পরপর শালিমার বাগ, নিশাত বাগ, মোগল গার্ডেন দেখে মন ভরে গেল। বিকেলে সুসজ্জিত শিকারায় চেপে ডাল লেক ভ্রমণ যেন এক অন্য অভিজ্ঞতা। ডাল লেকের ধারে জলে ভাসমান কাঠের বাহারি বাড়ির মতো অসংখ্য সুসজ্জিত হাউসবোর্ড। ছোট ছোট নৌকা করে দৈনন্দিন সামগ্রীর বিকিকিনি চলছে লেক জুড়ে।
পর দিন সকালে সোনমার্গের উদ্দেশে যাত্রা। পথে শ্রীনগর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ক্ষীর ভবানী মন্দির। তা দেখে পৌঁছলাম সোনমার্গ। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর তুষারাবৃত পাহাড় দর্শন সত্যিই রোমাঞ্চকর। শ্রীনগরের হোটেলে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেল। পর দিন সকালে আবার বেরিয়ে পড়া। এ বার গন্তব্য শ্রীনগর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে গুলমার্গ। পথের দু’পাশে চিনার, দেবদারু, ফারসবুজের সমারোহ। গুলমার্গে রোপওয়ে চড়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে যেন মনে হয় পটে আঁকা মায়াময় ছবি।
শ্রীনগরে রাত কাটিয়ে সকালে পহেলগাঁওয়ের দিকে চলা শুরু। রাস্তায় আপেল বাগানে ঘোরা হল। বিকেলে পহেলগাঁও থেকে গেলাম ১৬ কিলোমিটার দূরে চন্দনবাড়িতে। এই চন্দনবাড়ি থেকেই শুরু হয় অমরনাথ যাত্রা। পহেলগাঁওয়ের ঠান্ডা আবহাওয়া ভালই টের পেলাম।
সব শেষে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ঘরে ফেরার পালা। এখনও চোখে লেগে রয়েছে ডাল লেকের মনোরম দৃশ্য। ১২ দিনের এই সফর বাকি জীবনের পাথেয় হয়ে থাকল।
|