প্রেরণার নাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো!
ডার্বি মহাযুদ্ধের চব্বিশ ঘণ্টা আগে দলকে তাতাতে পর্তুগাল অধিনায়কের দেখানো রাস্তাতেই হাঁটছেন ওডাফা ওকোলি।
সুইডেনের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচ খেলতে নামার আগে ড্রেসিংরুমে ফুটবলারদের উজ্জীবিত করতে গিয়ে সিআর সেভেন বলেছিলেন, “আজ ভয়ডরহীন হয়ে ম্যাচ খেলতে হবে। আমাদের জিততেই হবে। ওয়ান, টু, থ্রি--- পতুর্গাল, পতুর্গাল, পতুর্গাল...”। মোহনবাগান অধিনায়কও যেন সেই মন্ত্রেই চাগিয়ে তুলতে চাইছে নিজের দলকে... ওয়ান, টু, থ্রিমোহনবাগান, মোহনবাগান, মোহনবাগান।
শনিবার অনুশীলনের শেষে ড্রেসিংরুমে টিমমেটদের ওডাফা বললেন, “ভয় না পেয়ে নিজেদের খেলাটা খেলে যাও। সাফল্য আসবেই...।” বিশেষত শৌভিক ঘোষ, প্রীতম কোটাল, রোউইলসনের মতো জুনিয়রদের সাহস জোগাতে সারা দিনই কিছু না কিছু টিপস দিয়ে গেলেন। ভাগ করে নিলেন নিজের বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতা। আর বাড়ি ফেরার আগে শৌভিকদের জন্য ওডাফার শেষ পরামর্শ, “একেবারে চাপ নিও না। অন্য ম্যাচ যে ভাবে খেলো, সে ভাবেই নিজেদের সেরাটা দাও। শুধু মাথায় রেখো এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেতেই হবে।”
রবিবার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে করিম বেঞ্চারিফার দলের প্রথম একাদশের মধ্যে পাঁচ জনেরই ডার্বিতে অভিষেক হতে চলেছে। রিজার্ভ বেঞ্চে যাঁরা থাকছেন, তাঁদেরও অনেকে এখনও পর্যন্ত ডার্বি খেলেননি। তবু ফুরফুরে মেজাজে সবুজ-মেরুন শিবির। মোহন-অধিনায়কের টিপস পেয়েই বোধহয় জীবনের প্রথম ডার্বির আগে ভয়-টয় সব উধাও রোউইলসন-কাতসুমিদের মন থেকে। প্রত্যেককেই বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। |
‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ বলতে যা বোঝায়, ওডাফা ঠিক তাই করে চলেছেন। শৌভিক যেমন বলছিলেন, “ওডাফা আমাদের সব সময় গাইড করে দিচ্ছে। মাঠে এবং মাঠের বাইরে। এ দিনই যেমন অনুশীলনের পর ড্রেসিংরুমে ডেকে আমাকে বলল, ম্যাচটা উপভোগ করে খেলো। তা হলে চাপ থাকবে না।” বাগানের আর এক সাইড ব্যাক প্রীতম বললেন, “ওডাফা পিঠে হাত রেখে যে ভাবে ভরসা জোগাচ্ছে, উৎসাহ দিচ্ছে, তাতে আমি একেবারে টেনশন ফ্রি।” তবে মুখে যা-ই বলুন, প্রথম ডার্বিতে নামার আগে শনিবার বিকালে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে পুজো দিতে ভুল হল না প্রীতমের।
সকালে মোহনবাগানের অনুশীলনে গিয়ে দেখা গেল কিংশুক, আইবররা একটু ভুল করলেই ধমক দিচ্ছেন ওডাফা। আবার কাছে ডেকে ভুলটা ঠিক কোথায় হচ্ছে বা কেন হচ্ছে সেটাও বুঝিয়ে দিচ্ছেন। অনুশীলন পর বলে দিলেন, “অনেকেই আমাদের দলের জুনিয়র ফুটবলারদের নিয়ে নানা কথা বলছেন। ভাবছেন, ওরা কিছুই করতে পারবে না। মোহনবাগানের জুনিয়র ব্রিগেড কিন্তু নিজেদের প্রমাণ করার জন্য পুরো তৈরি।”
ডার্বির উত্তপ্ত আবহের সঙ্গে প্রীতম, শৌভিক, রোউইলসনরা যাতে মানিয়ে নিতে পারেন তার জন্য প্রায় গত এক সপ্তাহ ধরে আলাদা ক্লাস নিয়েছেন করিম। ম্যাচের ভাল বা খারাপ পরিস্থিতিতে গ্যালারিতে ঠিক কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে সে সম্পর্কে আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছেন মরক্কান কোচ। সমর্থকরা খারাপ ভাষায় কথা বললেও মাথা ঠান্ডা রেখে শুধুমাত্র ম্যাচে কী ভাবে মনোযোগ দিতে হবে সেই কোচিংও দিয়েছেন। করিম সাংবাদিক সম্মেলনেও বললেন, “রবিবার আমার দলের প্রায় ছয়-সাত জনের ডার্বিতে অভিষেক হবে। তারা যাতে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচের চাপটা নিতে পারে সে ভাবেই ফুটবলারদের তৈরি করেছি।”
মোহনবাগানের বড় কর্তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ, কেউ বা দেশের বাইরে। এই পরিস্থিতিতে ক্লাবের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবাশিস দত্ত ম্যাচের আগের দিন সকালে ওডাফাদের উৎসাহ দিতে হাজির হন ক্লাব তাঁবুতে। ড্রেসিংরুমে করিম-সহ সব ফুটবলারদের ডেকে নিয়ে বলেন, “যে কোনও দলের সাফল্যের রহস্য একতা। এটা ধরে রাখতে পারলেই সাফল্য আসবে।”
সুইডেনকে হারিয়ে রোনাল্ডো বলেছিলেন, “আমরা সবাই মিলে লড়াই করেছি। তাই সাফল্য পেয়েছি।” রবিবার ম্যাচের পর কি ওডাফার মুখ থেকে একই কথা শোনা যাবে?
জানার জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক ঘণ্টা। |