আজ ডার্বির দামামা
প্রার্থনা আর টিমগেম অস্ত্র আর্মান্দোর
“...জিতলে সব কৃতিত্ব তোমাদের, সব প্রশংসা তোমাদের। হার নিয়ে ভেবো না। ওর সব দায় আমার...।”
সকাল সওয়া আটটা। শুনশান যুবভারতী। ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে এক গোয়ান কোচের গলা, ‘পেপ টকে’র টুকরো-টাকরা। চিডি-মোগারা মনযোগী ছাত্রের ভূমিকায়।
অ্যাড্রিনালিন ঝরবে?
উগা ওপারাকে বেশ উত্তেজিত দেখায়। “নতুন কোচ আত্মবিশ্বাসটাই বাড়িয়ে দিলেন। ওডাফা বন্ধু হতে পারে। কিন্তু মাঠে তো রুজিরুটির প্রশ্ন। ওকে ছাড়ব না।” সুদানি-দৈত্য জেমস মোগা কিছুটা দার্শনিক, ‘আমি’ নয় ‘আমরা’ তত্ত্বে বিশ্বাসী, “প্রথম দলে না থাকলেও কোনও দুঃখ নেই। আসল তিন পয়েন্ট।”
একান্নবর্তী সংসারের এই মেজাজটা এত দিন কোথায় ছিল?
আর্মান্দো কোলাসোকে পাওয়া গেল সাড়ে দশটা নাগাদ। অভিষেক ম্যাচই তো আপনার ডার্বি! চাপে আছেন? ভারতীয় ফুটবলের ‘এল মায়েস্ত্রো’-র পাল্টা এল দু’সেকেন্ডে, “তো? ডার্বি তো কী? হেরে গেলে কি পৃথিবীটা থেমে যাবে?”
পৃথিবী থেমে যাবে না ঠিক। কিন্তু এটাও ঠিক রবিবাসরীয় যুবভারতীতে তাঁর অভিষেকে যদি রাজকীয় না হয়, তা হলে? গোয়ান কোচ টেনশনে থাকলেও সেটার আন্দাজ দেবেন না। কিন্তু তাঁকে নিয়ে টেনশনের চোরাস্রোত বইছে বঙ্গসমাজের শিরা-উপশিরায়। আদ্যন্ত লাল-হলুদ সমর্থক সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেই বসলেন, “বড় ম্যাচেই নতুন কোচ তো। একটু চিন্তা হচ্ছে।” রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু-র মনে আশঙ্কা কম, আশাবাদ বেশি। বললেন, “টিভিতে খেলা দেখব। আর্মান্দো দুর্দান্ত কোচ কাম ম্যানেজার। সুভাষ ভৌমিক, মর্গ্যানের মতো। ক্লিক করে যেতে পারেন।”
ডেম্পোকে আই লিগ দিয়েছেন পাঁচ বার। ছিলেন জাতীয় কোচও। কিন্তু ফুটবলের মক্কায় এত দিন ছিলেন না। রবিবার মনের এই খচখচানি দূর হতে চলেছে আর্মান্দো কোলাসোর। কিন্তু সেটা যে আবার ডার্বি!
যদিও অন্তহীন চাপের সঙ্গে চোয়াল-চাপা যুদ্ধ আর্মান্দোর জীবনে নতুন নয়। ছোট্ট বয়সে বাবা ভিনসেন্ট সালভাদর যখন প্রয়াত হন, তখন থেকেই আর্মান্দো বুঝেছেন প্রতিকূল পরিস্থিতি কাকে বলে। বাড়িতে মা ক্ল্যারিনা আর ডন বস্কো স্কুলে ফাদার বেনেডিক্ট, ফাদার সাইমনরা বলতেন, “নেতিবাচক চিন্তা করবে না। বিপক্ষকে সম্মান করলেও ভয় পাবে না। যদি হেরেও যাও, তা হলেও লড়ে হেরো।”
শোনা গেল, ওডাফাদের হারাতে এগুলোই ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমে আর্মান্দোর ‘ভোকাল টনিক’। ঠিক? শুনে হাসেন ময়দানের প্রথম গোয়ান কোচ। “দলের ফিটনেস লেভেলটা একটু ভাবাচ্ছে।” ওডাফাকে আটকাবার প্ল্যান কী? ডার্বিতে প্রথম খেলতে নামা সবুজ-মেরুন রক্ষণের দুই সাইড ব্যাক কি আপনাদের টার্গেট? আর্মান্দো মুচকি হেসে বলে গেলেন, “ওডাফার জন্য কোনও প্ল্যান নেই। ওসব আপনাদের কথা।”
কিন্তু সেটা বহির্জগতের জন্য। ড্রেসিংরুমে বরং তিনি অনেক চেনা। সকাল-সকাল এ দিন ড্রেসিংরুমে ফুটবলারদের নিয়ে প্রার্থনায় বসলেন, যা নতুন। একটু পর বেরিয়ে এল তাঁর বহুচর্চিত ম্যান ম্যানেজমেন্ট স্কিলের কয়েকটা ঝলকানি যখন চিডিদের বার্তা দিলেন ‘‘কে দলে আছে কে নেই, তা নিয়ে মুখ ভার কোরো না। সকলেরই সুযোগ আসবে। শুধু জিততেই হবে, সেটা মনে রেখো।’’
কী ভাবে? জানা গেল, গোলে অভিজিৎকে রেখে তাঁর চার ব্যাক, নওবা-উগা-অর্ণব-সৌমিক। মিডফিল্ডে সেই সাহেব কোচের পথ ধরেই মেহতাব-খাবরা-লালরিন্দিকা-কেভিন লোবো। সামনে সুয়োকা-চিডি। অর্থাৎ প্রথম দলে নেই মোগা।
সবুজ-মেরুন স্বপ্ন
• ওডাফা-কাতসুমির যুগলবন্দি। তরুণ ব্রিগেডের গতি।
• জমাট ডিফেন্স। শেষ ছ’ ম্যাচে খেয়েছে মোটে তিন গোল।
লাল-হলুদ শৌর্য
• চার বিদেশিই তৈরি খেলার জন্য।
• টিমের ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতা।
• পাঁচ বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন কোচ।
মোহনবাগানের আতঙ্ক
• রক্ষণে ইচের না থাকা।
• প্রথম একাদশে অনেকেরই প্রথম ডার্বি।
ইস্টবেঙ্গলকে ভাবাচ্ছে
• বিগত কয়েক ম্যাচে রাইট ব্যাক নওবার পড়তি ফর্ম।
• কলকাতায় আর্মান্দোর প্রথম ডার্বি।
আর বাগানের নৌকো ডোবাতে লাল-হলুদ রণকৌশল? তা-ও অনুশীলন থেকে পরিষ্কার। কাতসুমিদের ডেম্পো ম্যাচ দেখেছেন আর্মান্দো। জানেন মোহনবাগান আক্রমণ তুলে আনে দু’ভাবে। এক, কাতসুমি মিডল থার্ড থেকে বল ধরেই সর্পিল গতিতে উইংয়ের দিকে সরে ড্রিবল করতে করতে হানা দেয় বিপক্ষ রক্ষণে। দুই, ডেনসন দেবদাস সরাসরি বল তুলে দেয় ওডাফাকে লক্ষ করে।
বিপক্ষের এই জোড়া গেমপ্ল্যান চুরমার করতে আর্মান্দোর ছক ৪-১-৩-২। মাঝমাঠে সেই ছকে বিশেষ দায়িত্ব পাচ্ছেন হরমনজ্যোৎ খাবরা ও ডিকা। আর্মান্দোর পরিচিত সেই ডেম্পো-ঘরানা খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে? জানা গেল, খাবরা আক্রমণের সময় উঠবেন পালা করে। আক্রমণে বল বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়ম করে ‘শাফল’-ও করবেন লোবো, ডিকাদের সঙ্গে। মিডফিল্ড থেকে ডাউন দ্য মিডল বল এলে ‘সিজার্স মুভ’ করবেন সুয়োকা-চিডি। মাঠ বাড়িয়ে তৈরি করবেন বাগান রক্ষণের ফাঁকফোকর। মোহনবাগান আক্রমণে এলে মেহতাবের পাশে এসে মাঠ ‘ছোট’ করবেন খাবরা-ডিকা। আবার ডান দিক ফ্রিকিক পেলে বাগান বক্সে বিষাক্ত ইনসুইঙ্গার ভাসাবেন মেহতাব। বাঁ দিক থেকে পেলে ডিকা। শুনে কোনও ট্রেভর জেমস মর্গ্যানকে মনে পড়ছে? মোগাকে নিয়ে স্ট্র্যাটজিটাও শোনা গেল। বড় চেহারার সুবিধে নিতে পরের দিকে নামানো।
নব্বইয়ের দশকে এসএস হাকিমের অবস্থাটাও অনেকটা আজকের আর্মান্দোর মতোই ছিল। মহমেডানে এসে তাঁকে প্রথমেই নামতে হয়েছিল ডার্বিতে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। এবং জিতেছিলেন। নাগপুরের বাড়ি থেকে ফোনে আব্দুল খালেক বলছিলেন, “আমি গোলটা করেছিলাম। সে দিন হাকিম স্যর পারলে, আর্মান্দো কেন পারবেন না?”
মহমেডানের স্বল্পমেয়াদী কোচ ছাড়াও এসএস হাকিমের একটা পরিচয় আছে। উনি বিখ্যাত রহিম সাহেবের পুত্র।
শুধু মোহনবাগান নয়, আর্মান্দো কোলাসোকে বোধহয় রবিবাসরীয় যুবভারতীতে রহিম সাহেবের উত্তসুরির বিরুদ্ধেও নামতে হবে!

আজ টিভিতে

(টেন অ্যাকশন, বিকেল ৫টা)




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.