|
|
|
|
মাওবাদী উপদ্রুত তকমা অসমের
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে অসমকে মাওবাদী অধ্যূষিত রাজ্য বলে ঘোষণা করা হল। সেই সঙ্গে, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে বলে রাজ্য সরকার দাবি করলেও, ফের এক বছরের জন্য অসমকে ‘ডিস্টার্বড এরিয়া’ বা ‘অশান্ত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই নির্দেশ রাজ্য সরকারের হাতে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই চাপ বাড়ল রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনের উপরে।
সম্প্রতি রাজ্যে মাওবাদী কার্যকলাপ, পরেশপন্থী আলফা ও এনডিএফবি সংবিজিৎ গোষ্ঠীর সন্ত্রাস, আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের তোলাবাজি বাড়ার কারণেই কেন্দ্র অসমে ‘অশান্ত এলাকা’র তকমা ও ‘আফস্পা’ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (উত্তর-পূর্ব) শম্ভু সিংহ রাজ্য সরকারের কাছে যে নির্দেশনামা পাঠিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে: ৪ ডিসেম্বর থেকে ফের এক বছরের জন্য অসম। অসম সীমাবর্তী অরুণাচলের ২০ কিলোমিটার এলাকা ও অসম-মেঘালয় সীমা ‘অশান্ত এলাকা’ হিসাবে চিহ্নিত হবে। আফস্পা আইনের তিন নম্বর ধারায়, ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর প্রথম বার অসমকে অশান্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে, এই প্রথম অশান্ত এলাকার সঙ্গে অসমকে ‘মাওবাদী উপদ্রুত’ বলেও ঘোষণা করা হল।
গত বছর ডিসেম্বরেই, অসম সফরে এসে গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ তিনসুকিয়া ও ডিব্রুগড় জেলাকে মাওবাদী অধ্যূষিত হিসেবে চিহ্নিত করে যান। গত ১১ মাসে গোলাঘাট, লখিমপুর, ধেমাজি, গোয়ালপাড়া-সহ বিভিন্ন জেলায় মাওবাদী প্রভাব আরও বেড়েছে। গুয়াহাটি, বরাক উপত্যকা থেকে ধরা পড়েছে বেশ কয়েকজন বড় মাওবাদী নেতা।
কেন্দ্রের দাবি: গোলাঘাট, ধেমাজি, লখিমপুর, তিনসুকিয়া এবং অরুণাচলের লোহিত জেলায় মাওবাদী অস্তিত্বের প্রত্যক্ষ প্রমাণ মিলেছে। শম্ভু সিংহের চিঠি অনুযায়ী, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগের বিষয়। জঙ্গিরা নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অগস্টের মধ্যে রাজ্যে ১২৭টি জঙ্গি হানার ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে ২ নিরাপত্তাকর্মী-সহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আলফার পরেশপন্থীরা মায়ানমার থেকে আসা-যাওয়া ও ঘাঁটি গড়ার জন্য অরুণাচলের লোহিত, চাংলাং ও তিরাপ জেলাকে ব্যবহার করছে। মেঘালয়ের ক্ষেত্রে জিএনএলএ, এএনভিসি জঙ্গিদের উপদ্রবে কেন্দ্র চিন্তিত। স্বরাষ্ট মন্ত্রকের মতে, জিএনএলএ আলফাকে সাহায্য করছে ও তাদের আশ্রয় দিচ্ছে।
অসমে সংগ্রামরত জঙ্গি ও আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিরা তোলাবাজি চালিয়ে ব্যবসায়ী, চা-বাগান মালিক ও সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে বলে খোদ সুশীল শিন্দেও অভিযোগ তুলেছেন। শম্ভু সিংহের চিঠিতেও তার প্রতিফলন ঘটেছে।
এ দিকে, আজ নয়াদিল্লিতে ডিজিপিদের সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময়, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেন, “উত্তর-পূর্বের আমজনতার নিরাপত্তা এখনও চিন্তার বিষয় হয়ে রয়েছে। সেখানে সন্ত্রাস, তোলাবাজি ও আন্দোলনের জেরে পরিস্থিতি অশান্ত। অবশ্য সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ও উপজাতি সংগঠনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা এগিয়েছে।” পাশাপাশি তিনি বলেন, “নামনি অসম, বড়োভূমি, কার্বি আংলং-এ জনজাতি সংঘর্ষ, হিংসার টানাপোড়েন অবিশ্বাস্য জটিল আকার নিয়েছে। মণিপুরে, মেঘালয়ে ভিন রাজ্যের মানুষদের নিশানা করা হচ্ছে। হাতে হাত মিলিয়ে, কঠোর ভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।” |
|
|
|
|
|