দুর্ঘটনায় মৃত্যু সুদীপ্তর, জানাল তদন্ত রিপোর্টও
বাতিস্তম্ভে ধাক্কা খেয়েই এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হল বিচারবিভাগীয় তদন্ত রিপোর্টে। কলকাতার মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে রিপোর্টটি জমাও পড়েছে। ওই ছাত্রনেতার বাবা অবশ্য এ দিনও জানিয়েছেন, তিনি সিবিআই তদন্ত চান।
গত ২ এপ্রিল পুলিশের হেফাজতে বাসে চেপে প্রেসিডেন্সি জেলে যাওয়ার পথে ওই ছাত্র নেতার মৃত্যু হয়। এসএফআই অভিযোগ করেছিল, পুলিশের লাঠির আঘাতে সুদীপ্ত মারা যান। এ নিয়ে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নামে এসএফআই। ৪ এপ্রিল রাজ্য জুড়ে ছাত্র ধর্মঘটও করে তারা।
শনিবার লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “আমরা গোড়া থেকেই বলে আসছি, পুলিশের মারে সুদীপ্ত মারা যাননি। বিচারবিভাগীয় তদন্তেও তা-ই উঠে এসেছে।” লালবাজার সূত্রের খবর, বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ৯৮ পাতার তথ্য এবং বেশ কিছু ছবি পেশ করা হয়েছিল।
সুদীপ্তের মৃত্যুতে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃত্যুর পরের দিন ওই ছাত্র নেতার ময়নাতদন্ত যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসএসকেএম হাসপাতালে যান। সুদীপ্তর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্য চাওয়া হলে রাজ্য সরকার তা দিতে প্রস্তুত বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান। তবে সুদীপ্তর বাবা প্রণব গুপ্ত সরকারি সাহায্য নিতে অস্বীকার করেন।
ওই ছাত্র নেতার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় লালবাজারের কর্তারা বিচারবিভাগীয় তদন্ত করান। সেই তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী সুদীপ্ত নিজে। কারণ চলন্ত বাসের পাদানিতে ঝুলে তিনি প্রেসিডেন্সি জেলে যাচ্ছিলেন। ওই অবস্থায় রাস্তার বাঁ দিকে থাকা বাতিস্তম্ভে তাঁর মাথা ঠুকে যায়। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
কলকাতার মেট্রোপলিটান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট অভ্রনীল নিয়োগী পাঁচ পাতার যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, গত ২ এপ্রিল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আইন অমান্য আন্দোলনকারীদের অনেককেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সুদীপ্ত যে বাসে চেপে প্রেসিডেন্সি জেলে যাচ্ছিলেন, তাতে ৬০ জন এসএফআই কর্মী-সমর্থক ছিলেন। বাসে দু’টি দরজা ছিল। প্রথম দরজায় ছিলেন কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল আব্বাস আলি এবং পিছনের দরজায় ছিলেন কনস্টেবল বিশ্বজিৎ মণ্ডল। ওই দরজার পাদানিতেই সুদীপ্ত ঝুলছিলেন। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্সি জেলের সামনে থ্যাকারে রোডে বিশ্বজিৎকে বাস থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। রাস্তায় পড়ে গিয়ে ওই কনস্টেবল ফের উঠে দাঁড়ান এবং সুদীপ্তদের বাসের পিছনে দৌড়তে থাকেন। সেই সময় তিনি শুনতে পান, বাস থেকে কয়েক জন চিৎকার করে বলছে, ‘পড়ে গেল, পড়ে গেল’।
তার পরেই বিশ্বজিৎবাবু দেখতে পান, এক যুবক বাতিস্তম্ভের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। বাসের আরোহীদের চিৎকারে বাস চালকও তত ক্ষণে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেন। তার পরে বাস থেকে এক দল যুবক হুড়মুড়িয়ে নেমে আসেন। তাঁরা বিশ্বজিতের দিকে তেড়ে যান। ওই কনস্টেবল পালাতে শুরু করলে ওই যুবকেরা ‘ওকে ধর, মেরে ফেল’ বলে চিৎকার করে তাঁকে ধাওয়া করেন। নিমেষে বিশ্বজিৎকে ধরে ফেলে ওই যুবকেরা। তাঁকে মারধরও করা হয়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসএসকেএম হাসপাতালের যে চিকিৎসক সুদীপ্তর দেহের ময়নাতদন্ত করেন, তিনিও রিপোর্টে (ওই ছাত্র নেতাকে) শারীরিক নিগ্রহের কথা বলেননি।
বিচারবিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে সুদীপ্তর বাবা প্রণব গুপ্ত শনিবার বলেন, “ওই রিপোর্ট আমি দেখিনি। তবে আমি সিবিআই তদন্ত চাই। মামলা করছি। বিচারক কী নির্দেশ দেন, দেখি।
এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস বলেন, “বাসের চালক বলেছিলেন, বাসে লাঠিচার্জ হয়েছিল। কিন্তু সে সব না শুনে গোড়া থেকেই দুর্ঘটনার তত্ত্ব দেওয়া হয়। আর পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন যে ভাবেই হোক যদি এক জন মারা যান, তা হলে তার দায় তো পুলিশকেই নিতে হবে। বিচারব্যবস্থা, মানবাধিকার কমিশন সবাই তো পুলিশি গাফিলতির কথাই বলেছে।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.