দীর্ঘ আন্দোলনের পর উত্তর দিনাজপুরের রূপাহার থেকে ডালখোলা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ শুরু করলেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার রায়গঞ্জের সোহারই মোড় এলাকায় ওই কাজের সূচনা করেন কংগ্রেস সাংসদ কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি।
প্রায় আট মাস ধরে জাতীয় সড়ক বেহাল। সড়ক মেরামতির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে জেলার ব্যবসায়ী, পরিবহণ মালিকদের সংগঠন এবং সিপিএমও। সম্প্রতি, সড়ক মেরামতির জন্য ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। দেরিতে হলেও এ দিন থেকে সড়ক মেরামতির কাজ শুরু হওয়ায় খুশি সকলেই।
দীপাদেবী বলেন, “জেলায় চার লেনের রাস্তা তৈরির কাজে রাজ্যের জমি অধিগ্রহণের গাফিলতির জেরেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মেরামতির কাজ শুরু করতে দেরি হল। একই কারণে গত চার বছর ধরে রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কাজ আটকে রয়েছে। আমি গত ছয় মাস ধরে কেন্দ্রীয় জাতীয় সড়ক দফতরের মন্ত্রী অস্কার ফার্নান্ডেজ সহ কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রী ও আমলাদের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে সমস্যার কথা বুঝিয়ে সড়ক মেরামতির জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ করতে বাধ্য করেছি।” অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত, রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা রায়গঞ্জ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি লিয়াকত আলি, রায়গঞ্জ পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর পবিত্র চন্দ সহ প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। |
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মালদহ ডিভিশনের প্রকল্প অধিকর্তা মহম্মদ সইফুল্লা জানান, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থা দ্রুত সড়ক মেরামতির কাজ শেষ করবে। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা পরিষদীয় সচিব অমল আচার্যের কটাক্ষ, “রাস্তা মেরামতির সূচনা দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক জীবনে আমি দেখিনি। আসলে দীপাদেবীর কোনও প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক জ্ঞান না থাকায় তিনি রাজ্য সরকারের নামে অপপ্রচার করে দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করছেন। এ সব করে তিনি আগামী লোকসভায় সুবিধা করতে পারবেন না। অমলবাবুর দাবি, কেন্দ্রের মন্ত্রী হিসেবে দীপাদেবী সক্রিয় থাকলে কেন্দ্রের অধীন জাতীয় সড়ক দীর্ঘ দিন বেহাল থাকত না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সড়ক মেরামতির জন্য টাকা বরাদ্দ করেছে।”
গত এপ্রিল মাস থেকে রূপাহার থেকে ডালখোলা পর্যন্ত জাতীয় সড়ক বেহাল। জাতীয় সড়কে অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক জায়গায় পিচের চাদর উঠে গিয়ে জাতীয় সড়ক চষা জমিতে পরিণত হয়েছে। জাতীয় সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার জেরে নিত্যযাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ছেন। বাস, ট্রাক ও ট্রেকার সহ নানা গাড়ি বিকল হয়ে পড়ায় পরিবহণ মালিকেরা লোকসানের মুখে। পণ্য আনা নেওয়ার কাজ করতে না পেরে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে। জাতীয় সড়ক মেরামতির দাবিতে গত মে মাস থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার পথ অবরোধ করে সিপিএম সহ ব্যবসায়ী ও পরিবহণ মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন। পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত সোম ও রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশে নর সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী বলেন, দেরিতে হলেও জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি। দীপাদেবীকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক বীরেশ্বর লাহিড়ীর দাবি, তাঁদের টানা আন্দোলনের জেরেই জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ শুরু হল! তাঁরও কটাক্ষ, “আমরা জানি কোনও নতুন সড়কের উদ্বোধন হয়। মেরামতির কাজের সূচনা এই প্রথম দেখলাম।” |