খোসমেজাজে প্রতিদ্বন্দ্বীরা, ভোটও হয়েছে শান্তিপূর্ণ
ঞ্চানন ঠাকুর মহিলা কলেজের ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের মাঠে রীতিমতো আড্ডার মেজাজ। খোস গল্পে মেতেছেন যুযুধান তৃণমূল এবং সিপিএম প্রার্থী। এক বোতলের জলে গলাও ভেজাতে দেখা গেল দু’জনকেই। আবার বিকেলে ভোটের ঝক্কি ফুরাতেই রাসমেলায় যেতে না পারা নিয়ে একসুরে আক্ষেপও করলেন। এমনকী সৌজন্যের আবহে তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্টকে নিজের বাড়ি থেকে ‘ব্যথা’ কমানোর ওষুধ পর্যন্ত এনে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বসলেন সিপিএম প্রার্থী। মাঝেমধ্যে কংগ্রেস, বিজেপির প্রার্থীরাও ওই আড্ডার শরিক হয়েছেন।
সব মিলিয়ে কোচবিহার পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে উপনির্বাচন ঘিরে শুক্রবার এমনটাই দেখা গিয়েছে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে। একই রকম ভাবে মালবাজার পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে যুযুধান দুই শিবিরের প্রার্থী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের যূথিকা বসু এবং সিপিআই-এর প্রভা সোনারদেরও দেখা গিয়েছে খোস মেজাজে গল্প করতে। মালবাজার মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথ। বুথের বারান্দায়, সামনের মাঠে শীতের দুপুরে রোদ এসে পড়েছে। বুথের বারান্দায় পাশাপাশি রোদে বসে ভোট গ্রহণ দেখলেন তাঁরা। একই বেঞ্চে পাশাপাশি বসে। অনেকক্ষণ ধরেই নানা কথা চলল দু’জনের মধ্যে। কখনও কথার মাঝে উভয়েই হেসেছেন। ভোট দিতে এসে এই দৃশ্য নজরে পড়েছে ভোটারদেরও।
(বাঁ দিকে) মালবাজারের একটি বুথে লাইন। (ডান দিকে) কোচবিহারে একটি বুথে
বৃ্দ্ধাকে সাহায্য পুলিশের। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক, হিমাংশুরঞ্জন দেব।
যূথিকা বসু বললেন, “এক জন জিতবে, এক জন হারবে, এটাই তো ঠিক। যেই জয়ী হোক না কেন, উন্নয়নের কাজে আমরা দু’জনই একে অপরকে সাহায্য করব।” বয়সে যূথিকা দেবীর থেকে বছর দশেকের ছোট সিপিআই এর প্রার্থী প্রভা সোনার জানালেন, “দিদি একদম ঠিক কথাই বলেছেন।” যা দেখে কাছেই মাঠে বসে থাকা মালবাজারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অরিন্দম সরকার বলেই ফেলেন, “এই রকম রাজনৈতিক সৌজন্যই তো চাই। তাহলে আমরাও নিশ্চিন্ত।”
প্রার্থীরা খোস মেজাজে থাকলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের অনতিদূরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শিবিরগুলিতে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তা লক্ষ্য করা গিয়েছে। দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে সে সব শিবিরে উপস্থিত তাদের জেলার নেতারা। কোচবিহারে সিপিএমের শিবিরে দেখা গিয়েছে পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা, তৃণমূলের শিবিরে জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পুর প্রধান বীরেন কুণ্ডুদের। খোঁজখবর, হিসেব নিকেষের বিরাম নেই। দলের শিবিরে হাজির ছিলেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শ্যামল চৌধুরী।
রাসমেলা মাঠ, ম্যাগাজিন রোড, ম্যাগাজিন রোড বাইলেন, পঞ্চরঙ্গী ও লাগোয়া এলাকা নিয়ে কোচবিহার পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড। সিপিএম প্রার্থী শুভব্রত সেনগুপ্ত, তৃণমূলের দীপক ভট্টাচার্য দু’জনেই ম্যাগাজিন রোড বাইলেনের বাসিন্দা। প্রতিবেশী হিসাবে সুসম্পর্ক দু’জনের। সন্ধ্যের দিকে সুযোগ হলে অনেক সময়ই একসঙ্গে বসে আড্ডাও দেন তাঁরা। ভোটের লড়াইয়ে নেমে সেই সম্পর্ক দু’জনেরই কেউই নষ্ট করতে চান না। দীপকবাবু বলেন, “লড়াইটা ব্যালটের। জনতা যাকে চাইবেন, তিনি জিতবেন। তাই বলে দু’জনের সম্পর্ক নষ্ট হবে কেন?” মাথা নেড়ে সায় দেন পাশে দাঁড়ানো সিপিএম প্রার্থী শুভব্রতবাবু। তিনি বলেন, “বেণুদার সঙ্গে অনেক দিনের সুসম্পর্ক। একটা ভোটের জন্য তা নষ্ট করতে চাই না।”
শুভব্রতবাবুর ‘আত্মীয়’ কংগ্রেস প্রার্থী পান্নালাল সরকার, বিজেপির সুব্রত দত্তরা মাঝেমধ্যে ওই বৃত্তে ঢুকে পড়লেন। তালিকা মিলিয়ে বাকি থাকা ভোটারদের নিয়ে আলোচনা থেকে দুপুরের খাবার কোনও প্রসঙ্গই বাদ ছিল না। ভোট কেন্দ্রে পড়ে গিয়ে পায়ে যন্ত্রণা নিয়ে হাজির তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্ট ইনাস চৌধুরী। ভোটের পর তার জন্য নিজের বাড়ি থেকে ‘ব্যথা’ কমানোর ওষুধ এনে দেওয়ার আশ্বাস দিলেন শুভব্রতবাবু।
ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে অবশ্য তখনও চাপানউতোর। কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দাবি, “এমন পরিবেশে ভোট আমাদের সরকারের আমল বলেই সম্ভব হচ্ছে।” সিপিএম নেতা মহানন্দ সাহার অবশ্য জবাব, “এসব কথা ওদের মুখে মানায় না। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল কী করেছে, সবাই জানেন।” দিনহাটা পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বামেদের প্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের স্বপ্না ভৌমিক। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের জুলি সাহা। কংগ্রেসের প্রার্থী অঞ্জনা দাস, বিজেপির সোমা সাহাও রয়েছেন। দিনহাটা জ্ঞানদাদেবী হাই স্কুলে বুথ করা হয়। এলাকায় ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক উদয়ন গুহ এ দিন তৎপর ছিলেন দলীয় প্রার্থীর হয়ে ভোট করাতে।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.