মাত্র একটি করে ওয়ার্ডে ভোট। কিন্তু তাতেই বদলে যেতে পারে পুরসভার ভাগ্য। আজ, শুক্রবার কোচবিহার ও মালবাজার পুরসভায় উপনির্বাচনের দিকে তাই তাকিয়ে সব দলই।
কোচবিহারে পুরসভার মোট ২০টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের রয়েছেন ১০ জন। বামেদের ৯ জন। তাই উপনির্বাচনে শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডটি বামেরা দখল করলে তৃণমূল পুরসভায় ক্ষমতা হারাবে। মালবাজারেও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনের উপরে পুরসভার ভাগ্য ঝুলে রয়েছে। মালবাজার পুরসভার মোট আসন সংখ্যা ১৫। বামেদের হাতে রয়েছে ৭টি আসন। কংগ্রেসের দখলে রয়েছে ৪টি আসন, তৃণমূলের হাতে ৩টি। পুরসভা বামেদের দখলেই রয়েছে। আজ, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে উপনির্বাচন। এই আসনটি তৃণমূল বা কংগ্রেস পেয়ে গেলে পুরসভায় বামেরা ক্ষমতা হারাবে। ২০০৯ সালে বামেরা ৮টি আসন পেয়েছিল এই পুরসভায়। এই ১৫ নম্বর ওয়ার্ডটি পেয়েছিল সিপিআই। কিন্তু সেই কাউন্সিলর চাকরি পেয়ে গিয়ে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় সেখানে এখন উপনির্বাচন হচ্ছে।
কোচবিহারের উপনির্বাচন একই সঙ্গে পুরপ্রধান বীরেন কুণ্ডুর কাছে চ্যালেঞ্জও। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে বীরেনবাবুর চ্যালেঞ্জ, এই ওয়ার্ডটি দখল করে তৃণমূলের ক্ষমতা আরও বাড়াতে। বামেদের সঙ্গে লড়াই তো রয়েইছে, তেমনই বিজেপি ও কংগ্রেসও শহরের রাজনৈতিক মানচিত্রে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে জয়ের চেষ্টায় খামতি রাখছে না। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে কোচবিহার পুরসভা কংগ্রেসের দখলে ছিল। গত পুরভোটে কংগ্রেস ৮ টি ও তৃণমূল ৩ টি আসন জিতে বোর্ড গড়ে। কয়েকমাস আগে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী কংগ্রেস কাউন্সিলর মারা যান। তার পরপরই গত অগস্টে পুরপ্রধান বীরেনবাবু বাকি কাউন্সিলরদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেসের দখলে থাকা ওয়ার্ড বীরেনবাবু তৃণমূলে এসে জেতাতে না পারলে পুরসভার ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। |
তেমনই খোদ পুরপ্রধানেরও নিজের জনপ্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন চিহ্নের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চেয়ারম্যানের ‘ছায়াসঙ্গী’ বলে পরিচিত দীপক ভট্টাচার্যকে বীরেনবাবুর সুপারিশেই টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। বাড়ি বাড়ি ঘুরে জোর প্রচার চালিয়েছেন বীরেনবাবুর ‘বেণুদা’। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী দীপকবাবুর কথায়, “পুরবোর্ডের উন্নয়ন আর রাজ্য সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রচার চালিয়েছি।” জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত লিখে রাখুন।”
কিন্তু বসে নেই বামেরা। ওই উপনির্বাচনকে তারা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের বাড়ি বাড়ি প্রচার ঘিরেই। বিধানসভা, লোকসভা তো বটেই গত পুরভোটেও এ ভাবে বামপ্রার্থীর সমর্থনে অন্তত কোচবিহার শহরে তাঁকে দেখা যায়নি। ফব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ অবশ্য বলেন, “হার জিৎ বড় ব্যাপার নয়। যেখানেই সুযোগ আছে জনসংযোগের সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইছি। তাই কোচবিহার শহরেও এবার বাড়ি বাড়ি গিয়েছি।” কংগ্রেস ও তৃণমূলের ভোট ভাগের অঙ্কেই বামেদের সিপিএম প্রার্থী শুভব্রত সেনগুপ্তের জয় অবশ্য একশো শতাংশ নিশ্চিত বলে দাবি করছেন দলের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা। মহানন্দবাবুর কথায়, “কংগ্রেস ও তৃণমূলের ভোট কাটাকাটি হবেই। তাছাড়া ওই ওয়ার্ডে নিকাশি, আলো, পথঘাট কোনও পরিষেবাই নেই।”
কংগ্রেসের আশা ওই আসন তাদের দখলেই থাকছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরীর কথায়, “তৃণমূল তৃতীয় স্থানে যাবে। বামেরা দ্বিতীয় হবে। হঠাৎ দলবদল করা লোককে কেউ সমর্থন করবেন না। আমরাই জিতছি।” পোস্টার ব্যানারে ছয়লাপ প্রচার বিজেপিরও।
মালবাজারে সিপিআই এবং তৃণমূলের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াই হচ্ছে। ৮৫৪ ভোটারের মহিলা প্রার্থীর জন্যে সংরক্ষিত এই ওয়ার্ডটিতে সিপিআই এর প্রার্থী হলেন প্রভা সোনার এবং তৃণমূলের প্রার্থী যূথিকা বসু। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব নিজেও এখানে প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন। এদিকে নিজেদের আসন ধরে রাখতে সিপিআই এর পাশাপাশি সিপিএমও প্রচার করেছে। মালবাজারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অরিন্দম সরকার জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইতিমধ্যেই মালবাজারে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কোচবিহারেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যে ওয়ার্ডে ভোট সেই ওয়ার্ডেই ১৬ নভেম্বর থেকে রাসমেলার আসর বসেছে। টানটান লড়াইয়ে রাসচক্রের মতো পুরবোর্ডের ভাগ্যচক্রের দোলা নিয়েও এখন জল্পনা তুঙ্গে। |