মাটিগাড়ার থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় ঘোষকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিলেন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপন্ন জয়রামন। পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি মাটিগাড়ার শিবমন্দির এলাকায় একটি দোকান ঘরকে ঘিরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল, সংঘর্ষ হয়। ঘটনায় পুলিশ জড়িত সন্দেহে গোঁসাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তথা সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া ফলেন রায়কে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু তাঁকে পুলিশের গাড়ি থেকে তাঁর পরিবারের লোকজন এবং অনুগামীরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ঘটনায় মাটিগাড়া থানার ভূমিকা নিয়ে পুলিশ মহলে বিরক্তি প্রকাশ করেন পুলিশ কমিশনার। তিনি বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, এর জেরেই শুক্রবার সঞ্জয়বাবুকে মাটিগাড়া থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ‘পুলিশ লাইনে’ পাঠানো হয়েছে। তাঁর পরিবর্তে মাটিগাড়া থানার দায়িত্ব আপাতত একজন প্রশিক্ষণরত ‘এসিপি’কে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১-২ দিনের মধ্যে নতুন কোনও অফিসারকে মাটিগাড়া থানার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, “মাটিগাড়ার ওসিকে সরানো হয়েছে। তার জায়গায় প্রশিক্ষণে থাকা এক এসিপিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, মাটিগাড়া থানা এলাকায় রাজনৈতিক গোলমাল ছাড়াও সম্প্রতি পরিবহণ নগরীর সামনে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলি এবং বোমাবাজিও হয় বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে মাটিগাড়ার শিবমন্দিরের ঘটনাটি ঘটে। সেখানে সংঘর্ষের মামলায় অভিযুক্ত শাসক দলের নেতাকে ধরার পরে তাঁকে গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। পাশাপাশি, দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল হওয়ার পর একপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও তা ঠিকঠাক হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় শাসক তৃণমূলের জেলা এবং মাটিগাড়ার একাংশ নেতা কর্মী মাটিগাড়া থানার কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এমনকি, থানায় গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভও দেখান। সেই সময় অবশ্য ওসি সঞ্জয়বাবু সুনির্দিষ্ট ধারা মামলা করে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। এদিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
পুলিশ কমিশনারেটের কয়েকজন পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, সম্প্রতি মাটিগাড়া এলাকায় নির্মীয়মাণ একটি বাড়ির মাটি খোঁড়ার সময় পুরানো আমলের একটি নৌকা উদ্ধার হয়। সেটির বয়স এবং প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য নিয়ে এখনও খোঁজখবর চলছে। এ ক্ষেত্রেও থানার ভূমিকা নিয়ে এলাকার একাংশ বাসিন্দা প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা জানান, নৌকাটি উদ্ধারের পর থানার পুলিশকর্মীরা ওই বাড়িতে তালা দিয়ে চলে যান বলে অভিযোগ। বিষয়টি পুলিশ কমিশনারেটের শীর্ষ কর্তারা জানতেন না। তদন্তে গিয়ে শিলিগুড়ির মহকুমা শাসককে দীর্ঘক্ষণ বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। অনেক খোঁজখবর করে মাটিগাড়া থানা থেকে তালার চাবি এনে তালা খোলা হয়।
মাটিগাড়ার একাংশ বাসিন্দার অভিযোগ, পরিবহণ নগরীতে ভিনরাজ্যের ট্রাক থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ থানায় জানালেও কাজ হয়নি। জাতীয় সড়কের পাশে একটি শপিং মলের সামনে কিছু যুবক বেআইনিভাবে পার্কিং জোন তৈরি করে টাকা আদায় করলেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছিল না। শাসক তৃণমূলের পাশাপাশি কংগ্রেস, সিপিএমের নেতারাও মাটিগাড়া থানার ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। তার জেরেই এই ঘটনা বলে পুলিশ সূত্রের খবর। |