|
|
|
|
দিদিমণিরা বিয়ে রুখলেন,
ফের পরীক্ষায় বসল শাবানা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিয়ের ঠিক হয়েছিল বড় মেয়ের সঙ্গে। গররাজি তরুণী বাড়ি ছেড়ে পালান। কিন্তু পাত্র হাতছাড়া করতে চাননি বাবা। বছর চোদ্দোর মেজো মেয়ের সঙ্গেই পাত্রের বিয়ের দিন ক্ষণ ঠিক করে ফেলেন। স্কুলের দিদিমণিদের কানে ওঠে কথাটা। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় বারাসত থানার পুলিশকেও পাশে পান তাঁরা। শেষমেশ বারাসতের চন্দনপুরের কিশোরী শাবানা আজমির বিয়ে রোখা গিয়েছে ।
শাবানা পড়ে উদয়রাজপুরের হরিহরপুর গার্লস হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে। বিয়ের ঠিক হওয়ায় দিন কয়েক স্কুলে আসছিল না। কিন্তু পরীক্ষা চলছে। মেধাবী ছাত্রীটিকে দেখতে না পেয়ে শাবানার বোন পারভিনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলেন স্কুলের দিদিমণিরা। সেই কিশোরীও পড়ে একই স্কুলে। জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে শাবানার। মাকে ডেকে পাঠানো হয় স্কুলে। স্কুলের তরফে যোগাযোগ করা হয় ‘সংলাপ’ নামে হৃদয়পুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। খবর যায় বারাসত থানাতেও। বৃহস্পতিবার সংলাপের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে শাবানার বাড়িতে হাজির হয় পুলিশ। তত ক্ষণে বারাসতেরই কাজিপাড়া থেকে সপার্ষদ হাজির হয়েছে পাত্রপক্ষ। তবে থানা-পুলিশ দেখে পত্রপাঠ বাড়ির পথ ধরে তারা। শাবানার বাবা জুলফিকার পরে জানান, প্রাপ্তবয়স্ক না হলে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। নিয়মিত স্কুলে যাবে সে। শুক্রবার মায়ের সঙ্গে স্কুলে এসে বার্ষিক পরীক্ষাও দিয়েছে শাবানা।
পুলিশ জানিয়েছে, জুলফিকরের একাধিক বিয়ে। পরিচারিকার কাজ করে মেয়েদের পড়াশোনা চালান মা হোসনেআরা বিবি। শাবানার দিদির বিয়ে ঠিক করেন জুলফিকর। কিন্তু বড় মেয়ে সেই বিয়ে বন্ধ করতে না পেরে পালিয়ে যায় প্রতিবেশী যুবকের সঙ্গে। এরপরে শাবানার সঙ্গেই ওই পাত্রের বিয়ে ঠিক করেন জুলফিকরই। মেয়ে অবশ্য বিয়ে করতে চায়নি। কিন্তু তার ওজর-আপত্তিতে কান দেয়নি বাবা। সে কথা স্বীকার করে জুলফিকর এ দিন বলেন, ‘‘আমি ভুল করেছিলাম। দিদিমণিরা চোখ খুলে দিয়েছেন। মেয়ে যত দিন চায়, আমি পড়াব।’’
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশ গিয়ে বিয়ে বন্ধ করেছে ঠিকই, কিন্তু স্কুলের শিক্ষিকারা প্রথমে উদ্যোগী হয়েছিলেন। পরিবারটিও ঠিকঠাক বুঝেছে। এটাও জরুরি। ১৩-১৪ বছরের মেয়ের বিয়ে হলে পরবর্তীকে কী কী সমস্যা হতে পারে সেটাও সেই মা-বাবাকে বোঝানো জরুরি।’’
স্কুলের শিক্ষিকা দেবযানী চক্রবর্তী, পার্বতী সরকারেরা জানান, আমাদের এখানে স্কুলছুটের সংখ্যা অনেক। বেশির ভাগই দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসকারী পরিবার থেকে আসে। আমরা যতটা পারি সতর্ক থাকি। প্রধান শিক্ষিকা মণীষা সাহার কথায়, “শাবানা স্কুলে না আসায় আমরা ওর বোনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানতে পারি। তারপরে দিদিমণিরা ওর মাকে বোঝান। পরে সংলাপের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। পুলিশ ও ওই সংগঠনের সদস্যেরা সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছেন।”
বছর খানেক আগে এই স্কুলেরই শাবানা ইয়াসমিনেরও বিয়ের ঠিক হয়েছিল। দিদিমণিরা সে বারও বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে রুখেছিলেন। দেবযানীদেবী বলেন, “ও এখন পাশের স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। আমাদের স্কুল তো দশম শ্রেণি পর্যন্ত। ওই শাবানাকে এখন স্কুলড্রেস পড়ে যেতে দেখে বড্ড ভাল লাগে। মেয়েটি অদ্ভুত সম্ভ্রমের চোখে তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে।’’
মহিলা ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় দেশ জুড়ে প্রচার চালাতে দেখা গিয়েছে মুম্বইয়ের অভিনেত্রী শাবানা আজমিকে। সেই প্রচারের ঘনঘটা থেকে আলোকবর্ষ দূরে এই শাবানারা লড়ছে নিজেদের মতোই। |
|
|
|
|
|