গত পাঁচদিন ধরে বন্ধ বাস চলাচল। ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা-বকখালি রুটের যাত্রী থেকে শুরু করে বকখালিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে বাস মালিক ইউনিয়নের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ভাড়া না বাড়ায় এমনিতেই তাঁদের লোকসান হচ্ছে। তার উপর ওই একই রুটে চলা বেআইনি মোটরভ্যান, অটো, ম্যাজিক গাড়ি চলাচলের ফলে লোকসান আরও বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের পক্ষে বাস চালানোই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের কাছে দরবার করেও লাভ না হওয়ায় যাত্রীদের অসুবিধা হবে জেনেও বাধ্য হয়েই তাঁদের এ পথ বেছে নিতে হয়েছে।
নামখানা থেকে বকখালি পর্যন্ত দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। বর্তমানে ও রাস্তায় দু’টি রুটের ২৩টি বাস ভোর সাড়ে ৪টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলাচল করে। ২০০৯ থেকে ওই রুটে নামখানা থেকে হাসপাতাল মোড়ে, নামখানা থেকে শাসমল বাঁধ মোড় হয়ে মৌসুনি খেয়াঘাট, নামাখানা থেকে আট মাইল মোড় হয়ে পাতিবুনিয়া, নামখানা থেকে পোস্ট অফিস মোড় হয়ে দুর্গাপুর পর্যন্ত মোটরভ্যান, অটো ও ম্যাজিক গাড়ি চলাচল শুরু করে। নামখানা থেকে বকখালি পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পথের মধ্যে ১০-১২ কিলোমিটার রাস্তায় ওই সব যান চলাচল করায় বাসে যাত্রীসংখ্যা কমে গিয়েছে। এর ফলে তাঁরা আর্থির ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে দাবি বাস মালিকদের। উপায়ান্তর না দেখে তাঁরা প্রসাসনের দ্বারস্থ হন।
গত ৮ অক্টোবর নামখানা পঞ্চায়েত সমিতিতে বাস মালিকদের সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও এবং পুলিশের বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়। নামখানা থেকে বকখালি পর্যন্ত ওই রাস্তায় কোনও মোটরভ্যান, অটো বা ম্যাজিক গাড়ি চলাচল করবে না। বাস মালিকদের অভিযোগ, প্রশাসনিক ওই সিদ্ধান্ত একেবারেই মানা হয়নি। যথারীতি ওই রাস্তায় মোটরভ্যান, অটো, ম্যাজিক গাড়ি সবই চলছে। ফলে তাঁদের কোনও লাভই হয়নি। এর প্রতিবাদেই তাঁরা গত ১৮ নভেম্বর থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন।
নামাখানা-বকখালি বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক পুলক মাইতির দাবি, “প্রায় দু’হাজার মোটর ভ্যান, ৪০-৫০টি অটো, ম্যাজিক গাড়ির দাপটে আমাদের ব্যবসা শিকেয় উঠেছে। তেল কেনার টাকাও উঠছে না। তবু যাত্রীদের কথা ভেবেই এতদিন বাস চালানো হচ্ছিল। কিন্তু আর পারা যাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকেও জানানা হয়েছে।” নামাখানার বিডিও তাপস পাল বলেন, “যে বৈঠক হয়েছিল সেখানে বাস মালিকেরা ওই রাস্তা থেকে মোটরভ্যান, অটো, ম্যাজিক গাড়ি তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। আমরা পুলিশকে ব্যবস্থাও নিতে বলেছিলাম।” অন্যদিকে ওই রুটের দু’টি থানার বক্তব্য, দু’হাজার মোটরভ্যান চলে বলে বাস মালিকদের তরফে যে দাবি করা হয়েছে তা ঠিক নয়। তার চেয়ে কম চলে। তবে এ ব্যাপারে তাঁরা কড়া ব্যবস্থা নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মোটরভ্যান আটক করা হয়েছে।”
তবে বাস মালিকদের বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে ওই রুটে বিভিন্ন এলাকার ছাত্রছাত্রী থেকে নিত্যযাত্রী সকলেই প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েছেন। পাশাপাশি বকখালি বেড়াতে আসা পর্যটকদেরও নাকাল হতে হচ্ছে। আগে থেকে না জানার ফলে তাঁরা নামখানায় এসে বিপাকে পড়ছেন। একই সঙ্গে বককখালি থেকে কলকাতায় ফেরার পথেও নাজেহাল হতে হচ্ছে পর্যটকদের।
বকখালি হোটেলস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক স্মৃতিকণ্ঠ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বকখালিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৩টি হোটেল রয়েছে। পুজোর সময় টানা বৃষ্টির জন্য ব্যবসার ভীষণ ক্ষতি হয়েছে। শীতে মরসুম শুরুর মুখে গত কয়েকদিন ধরে বাসবন্ধের জেরে ফের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। এ ভাবে ব্যবসা প্রচণ্ড মার খাচ্ছে। সমস্যা মেটাতে প্রশাসন তাড়াতাড়ি হস্তক্ষেপ না করলে আমাদের প্রভূত ক্ষতি হবে।” |