মাওবাদী থেকে মঙ্গলকাব্য, পটের উৎসব নয়া গ্রামে
ছরের পর বছর ওঁদের হাতেই ফুটে উঠছে রামায়ণ, মহাভারত, চণ্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গলের ছবি। গাছের পাতা, ফুল, ফলের রং দিয়ে সাজানো সেই পটের ছবিই পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়া গ্রামের শিল্পীদের দেশ-বিদেশে পরিচিতি দিয়েছে। যে সূত্রে বিস্তার বেড়েছে এই শিল্পের, সেই পট-মেলা এ বার চতুর্থ বর্ষে পড়ল। শুক্রবার ‘পটমায়া’ মেলার উদ্বোধন করলেন সস্ত্রীক নেপালের কনস্যুলেট রামেশ্বর পাউডেল।
গ্রামে ঢুকলেই মনপ্রাণ ভরে যায়। বাড়ির দেওয়াল থেকে উঠোন, সর্বত্র পটের ছোঁয়া। শিল্পীরা বাড়ির সামনেই নিজেদের আঁকা পটচিত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। পরিবারের খুদে সদস্য থেকে বাড়ির কর্তা, সকলেই এই শিল্পে সামিল। ইদানীং মাটির সরা বা হাল ফ্যাশনের শাড়িতেও জায়গা করে নিয়েছে পট। পটুয়া জয়া চিত্রকর, ইয়াকুব চিত্রকর, আনোয়ার চিত্রকররা সকলেই মুসলিম। কিন্তু শিল্পীর তো আলাদা জাত থাকে না। তাই খোল বাজিয়ে গেয়ে চলা পটের গানে সাবলীল ভাবেই ফুটে ওঠে রামায়ণ, মহাভারত, মঙ্গলকাব্যের কাহিনি। ‘পটমায়া’ উৎসবে আলাদা গান মেলারও আয়োজন রয়েছে। মঞ্চে হচ্ছে বাউল গান। মেলার সভাপতি বাহাদুর চিত্রকর বলেন, “আমাদের মেলা এ বছর চতুর্থ বর্ষে পড়ল। সরকার নজর দিলে এই মেলার জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।”
পট তৈরির কর্মশালা। —নিজস্ব চিত্র।
মেলা সভাপতিই জানালেন, সংগ্রহশালা, প্রতি বাড়িতে গ্যালারি, অতিথি নিবাস তৈরির জন্য গত বছর ৬ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এ বছর কাজ হওয়ার কথা। এ দিন মেলা উদ্বোধনের পর নেপালের কনস্যুলেট রামেশ্বর পাউডেল ও তাঁর স্ত্রী ঊষা পাউডেল গোটা গ্রাম ঘুরে বেড়ালেন। কেমন লাগছে? রামেশ্বর ও ঊষা যেন আপ্লুত। বললে, “খুব ভাল লাগছে। আমাদের নেপালে মঙ্গলীয়রা ‘থানকা’ করেন। তবে সেটা তিব্বতি ধাঁচের। এখানকার পটের সঙ্গে মৈথিলীর যোগ পাচ্ছি। খুব উৎকৃষ্ট মানের কাজ করছেন ওঁরা।” এ বারের মেলায় ৬৫টি বাড়ি পসরা সাজিয়ে বসেছে। এ বারই প্রথম অতিরিক্ত ১২টি স্টলে বর্ধমানের ডোকরা, দক্ষিণ দিনাজপুরের মুখোশ, পুরুলিয়ার ছৌয়ের মুখোশ নিয়ে শিল্পীরা এসেছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের উৎপল সরকার জানালেন, বাঁশের মুখোশ ২০০ টাকা ও কাঠের মুখোশ ৩০০টাকা।
গত কয়েক বছরে পট-গ্রাম নয়ার কথা দেশ বিদেশের বহু মানুষের কানে পৌঁছেছে। তাঁদের অনেকে এখানে এসেওছেন। মেলায় ঘুরে ভেষজ রং পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত দক্ষিণ ভারতের গবেষক চারণ্য টিসিএ। তিনি বলেন, “আমি প্রকৃতি থেকে পাওয়া সবুজ রং নিয়ে গবেষণা করছি। এই ভেষজ রং যেমন বহুদিন থাকে, তেমনই উজ্জ্বল। এই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে এই রং বানিয়ে ওঁরা কাজ করেন। তিনটে দিন ওঁদের সঙ্গে থেকে রঙের খুঁটিনাটি জানতেই এখানে আসা।”

পটমেলা: পশ্চিম মেদিনীপুরে পিংলার নয়াগ্রামে শুক্রবার থেকে শুরু হল পটমেলা ‘পটমায়া’।
মেলায় পটচিত্রের প্রতিযোগিতার আয়োজনও রয়েছে। ২০০৬ সালে গ্রামের যুবক আনোয়ার চিত্রকর ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। আনোয়ার বলেন, “আমি হারিয়ে যাওয়া ‘কালীঘাট পটে’ বেশি জোর দিই। লালগড়ের মাওবাদী কার্যকলাপ নিয়েও পটচিত্র করেছি।” গ্রামের দু’একটি বাড়ি ছাড়া প্রায় সবই মুসলিম পরিবার। কী ভাবে তাঁদের ভাবনায় মঙ্গলকাব্য, শ্যামাসংগীত, রামায়ণ ঘুরপাক খায়? বিদেশ ঘুরে আসা ইয়াকুব চিত্রকর বলেন, “শুনেছি পূর্ব বাংলায় থাকা আমাদের পূর্বসূরিরা পীরের গান নিয়ে পট আঁকতেন। এখানে আসার পর জনপ্রিয়তা পেতেই পুরাণ-মহাকাব্যের দিকে ঝুঁকেছিলেন। আমরা সেই ধারাই অনুসরণ করছি।”

— নিজস্ব চিত্র


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.