ঝাড়গ্রামে পুরভোটে
দেরিতে গুনগুনিয়ে
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেকেআই স্কুল বুথে ইভিএম বিভ্রাটের জেরে পাক্কা দেড় ঘণ্টা দেরিতে ভোট শুরু হল। ইভিএম বদলাতে দেরি হওয়ায় ভোটারদের লাইনে থাকা এক তরুণী গুনগুন গান ধরলেন, ‘‘কেন দেরি করে আলে হে, সময় বল্যেঞ।’’ সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ভোটগ্রহণ শুরু হল। ঝুমুর গানের বিশিষ্ট শিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতো এ বার ভোট দিয়েই তড়িঘড়ি ছুটলেন। জানালেন, পুরুলিয়ার মানবাজারে জলসা আছে। ভেবেছিলেন সকালে প্রথম ভোটটা দিয়ে বেরোবেন। কিন্তু দেড় ঘণ্টা দেরি হওয়ায় গুনগুন করে দু’কলি গেয়ে ফেললেন। শ্রোতা এক ভোটারের প্রশ্ন, “দিদি, গানটা কী ইভিএমকে উদ্দেশ করে গাইলেন?” ইন্দ্রাণীর জবাব, “যাঁরা ওগুলো নিয়ে এলেন তাঁদের শোনালাম। তবে বুঝলেন কি-না জানি না।”

কালো ছাতা হাতে
শান্তিতেই মিটল এগরার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচন। এগরার মহকুমাশাসক অসীমকুমার
বিশ্বাস জানান, ৮৯.২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। কোনও গণ্ডগোল হয়নি। শুক্রবার সকাল থেকেই
১১ নম্বর ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর পল্লিমঙ্গল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি বুথে ভোটগ্রহণ
শুরু হয় কড়া পুলিশি পাহারায়।
ছবি: কৌশিক মিশ্র।
১২ নম্বর ওয়ার্ডের জঙ্গলখাস প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ‘অগ্নিকন্যা’। ’৯৮ সাল থেকে তৃণমূলে ছিলেন। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এখন তৃণমূলকে টা-টা করে কংগ্রেসের প্রার্থী। মীনাক্ষী ঘোষ বললেন, “জানেন আমাকে এক সময় ঝাড়গ্রামের মমতা বলা হত। কিন্তু সেই আমিই কি-না ব্রাত্য হয়ে গেলাম। তৃণমূলে সম্মান না পেয়ে অনেক জ্বালায় কংগ্রেসে যোগ দিয়েছি। তিনটে বুথের একটাতেও পোলিং এজেন্ট দিতে পারিনি। তবে লড়াইয়ের ময়দান ছাড়ছি না। এক কাপ চা আর দু’টো বিস্কুট খেয়ে সকাল থেকে রাউন্ড দিচ্ছি। তৃণমূলের সন্ত্রাস তো সিপিএমের সন্ত্রাসকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে কি-না।” মেঘলা দিনে সঙ্গে কালো ছাতা কেন? মীনাক্ষী বলেন, “রোদ সদ্য করতে পারি না। তবে কেউ দুষ্টুমি করলে কয়েক ঘা ছাতার বাড়িও মারতে কসুর করব না।” দিনের শেষে অবশ্য ছাতাটা কাজে লাগেনি।

তিনি নিদ্রা গিয়েছেন
৩ নম্বর ওয়ার্ডের ননীবালা গার্লস স্কুল বুথের বাইরে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন তপন সেনরায়। প্রবীণ নাট্যকর্মীর আক্ষেপ, “পুলিশের ডাকে মাদক বিরোধী নাটক করেছি। অথচ সেই পুলিশের কাছ থেকেই কোনও সাহায্য পাচ্ছি না। শক্তিনগরে প্রচার করতেই পারলাম না। আমাদের সমর্থক ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। আমার প্রচার হোর্ডিং, ফ্লেক্স, পতাকা সব ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও অভিযোগই পুলিশের কানে পৌঁছচ্ছে না।” সব দেখে শুনে ‘নরক গুলজার’ নাটকের গানটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে সিপিএম প্রার্থী তপনবাবুর। ‘কথা বলো না, কেউ শব্দ করো না, ‘পুলিশ’ (থুড়ি, ভগবান) নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না।’

নির্জলা ভোট শিউলির
ভোট দেওয়ার জন্য ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শক্তিনগর কমিউনিটি হল বুথে দুপুর ১২টা নাগাদ দাঁড়িয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী কাউন্সিলর শিউলি সিংহ। হঠাৎই মোটর সাইকেল দাপিয়ে হাজির সিপিএম নেতা শ্যামল সনগিরি। শ্যামলবাবুর স্ত্রী মণিদীপা ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী। স্থানীয় রিকশা চালক উত্তম সাহাকে দেখে শ্যামলবাবু বললেন, “ভোটের পরে কিন্তু আমরাই দেখব।” ভোটের লাইনে দাঁড়ানো শিউলিদেবী চাপা গলায় বললেন, “দেখছেন, এখনও কী রকম বলছে! খুবই টেনশনে রয়েছি। সারা দিন কিছু মুখে দিতে পারিনি। ভোট পর্ব মিটলে তবেই কিছু মুখে দেব।”
হার মেনেছে বয়স। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দেবরাজ ঘোষের ছবি।

নির্মলের বেশ বদল
চিরাচরিত পাঞ্জাবি ও চোস্ত পায়জামা ছেড়ে শার্ট-প্যান্ট ও কালো সোয়েটারে তাঁকে চেনাই যাচ্ছে না। এক তৃণমূল কর্মীর মোটর সাইকেলের পিছনে বসে অরণ্যশহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ। বেশ বদল কেন? নির্মলবাবু মুচকি হেসে বললেন, “মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারছেন কি-না সেটা দেখতেই হারুন অল রশিদের মতো পরিক্রমায় বেরিয়েছি।” তা কী দেখলেন? নির্মল-জবাব, “ভোটদানের হার দেখে বেলা ১২টার পর হতাশ সিপিএমের লোকেরা ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।”

দিনের সেরা রসিকতা
রিটার্নিং অফিসারের কাছে ফোন করেছেন এক অভিযোগকারী। জানালেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে বিকেল তিনটের পরেও অনেক ভোটার লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লাইন নড়ছে না। ফোন রেখেই খোঁজ করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ মহকুমাশাসক তথা ঝাড়গ্রাম পুর রিটার্নিং অফিসার এস অরুণ প্রসাদের। সিপিআই প্রার্থী মৃত্যুতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট তো স্থগিত রয়েছে। হাসতে হাসতে মহকুমাশাসক সহকর্মীদের উদ্দেশে বললেন, “দিনের সেরা রসিকতা বটে!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.