নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
চরের জমি ব্যবহার নিয়ে কয়েক দিন ধরেই চাষি এবং প্রাণী-পালকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত গোলমাল চলছিল। শুক্রবার ফের একই কারণে উত্তেজনা ছড়াল আরামবাগ পুরসভা এলাকার অন্তর্গত দৌলতপুর গ্রামের চাষিপাড়ায়। চাষিরা চাইছেন সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদীর চরের জমিতে চাষাবাদ করতে। প্রাণী-পালকেরা দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে গরু-ছাগল চরাচ্ছেন। এ নিয়েই দু’পক্ষের গোলমাল। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগও তোলে।
শুক্রবার সকালে চাষিরা যখন চাষাবাদের কাজ শুরু করতে চরে নামেন, তখন মহিলা প্রাণী-পালকেরা কয়েকশো গরু-ছাগল নিয়ে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে আসেন বলে অভিযোগ। চাষিরা গরু-ছাগলের গুঁতো থেকে বাঁচতে পালান। তার পর সারাদিন গরু-ছাগল নিয়ে নদীর চর পাহারা দেন প্রাণী-পালকেরা। তার আগে বৃহস্পতিবার বিকেলেও প্রায় একই রকম পরিস্থিতি হয়। পুরসভার চেয়ারম্যান এবং কয়েক জন কাউন্সিলরর ঘটনাস্থলে যান। চাষি এবং প্রাণী-পালক দু’পক্ষই পুরসভার হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেন। |
পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল কচ বলেন, “দু’পক্ষকে নিয়ে শীঘ্রই আলোচনায় বসা হবে। মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত নদীর চর যেমন গরু-ছাগলের চারণভূমি হিসেবে রয়েছে, তেমনই থাকবে।” সেচ দফতর অবশ্য দু’পক্ষের সমঝোতার উপরে জোর দিয়েছে। সেচ দফতরের আরামবাগ মহকুমা সহ-বাস্তুকার প্রিয়ম পাল বলেন, “নদীর চর ব্যবহার বেআইনি নয়। গরু-ছাগলের চারণভূমি হিসেবে যেমন ব্যবহার করা যেতে পারে, তেমনই চাষাবাদও হতে পারে। দৌলতপুরের সমস্যাটিতে দু’পক্ষই সমঝোতা করে এলাকা ভাগ করে নিতে পারেন।”
ওই চরের প্রাণী-পালকদের অধিকাংশই মহিলা। তাঁদের মধ্যে মেনকা কোটাল, অসীমা মাজি, গঙ্গা পাল প্রমুখের বক্তব্য, গরু-ছাগল পালন করে তা বিক্রি করে বা দুধ বিক্রি করেই তাঁদের সংসার চলে। নিজেদের জমিজমা না থাকায় পশুখাদ্য জোটানো যায় না। সমতলে চারণভূমি মেলা দুষ্কর। নদীচরে জন্মানো ঘাস, ছোটখাটো গাছপালা খাইয়ে গরু-ছাগল প্রতিপালন করা হয়। তাঁদের অভিযোগ, উপরের জমিতে চাষাবাদের সুযোগ থাকলেও চাষিরা চরেই তা করতে চাইছেন। দু’টি শ্যালো বসিয়ে সেই কাজ শুরুও হয়েছে। পুরো চরেই চাষ শুরু হলে গরু-ছাগল কোথায় চরবে বলে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। পায়রা বেগম নামে এক প্রাণী-পালক বলেন, “স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বছর ছয়েক ধরে গরু-ছাগল বড় করে বিক্রি করে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালাই। চর ছাড়ব না।”
কৃষকদের পক্ষে অশোক খাঁড়া, দীনবন্ধু মণ্ডল প্রমুখের দাবি, মাত্র কয়েক বিঘা জমিতে ফসল ফলিয়ে সংসার চালানো দুষ্কর। সে কারণেই নদীর চরে তাঁরা চাষাবাদ করতে চাইছেন। তা ছাড়া, চরের মাটি ঊর্বর হওয়ায় ফলন বাড়বে। প্রাণী-পালকেরা অন্যায় ভাবে গোটা চরকে চারণভূমি হিসেবে দেখাতে চাইছেন। |