অভিষেক চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
অন্ধকারে মুখ ঢেকেছে গ্রামীণ হাওড়ার গলি থেকে রাজপথ।
রাত্রি সাড়ে ৮। আন্দুল থেকে ডোমজুড়গামী (ভায়া বিপ্রন্নপাড়া) একটি ট্রেকার ছুটে আসছিল তীব্র গতিতে। স্থানীয় সরস্বতী ব্রিজ পেরানোর পর হঠাৎ ‘গেল গেল’ রব ট্রেকারটির থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে দাঁড়িয়ে একটি সাইকেল। ঘোর অন্ধকারের মধ্যে ট্রেকারটিকে দূর থেকে ঠাওর করতে পারেননি সাইকেল আরোহী। ট্রেকারের ড্রাইভার জোরে ব্রেক কষায় সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। এটা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। ডোমজুড়ের বিভিন্ন রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো না থাকায় ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেই চলছে বাস, ট্রেকার, মোটর বাইক-সহ একাধিক যান। বহু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়ানোর কোনও সুযোগই পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডোমজুড় বাজার, মাকড়দহ বাজার, শলপ বাজার-সহ ডোমজুড় থানা এলাকার বাজারগুলিতে আলো থাকলেও বাজার থেকে ভিতরের রাস্তাগুলিতে আলোর সংখ্যা খুব কম। কোথাও কোথাও নেই বললেই চলে। যেমন মাকড়দহ থেকে ডোমজুড় যাওয়ার পথে জলা এলাকা, (এ বছরের সপ্তমীর রাতে এই রাস্তাতেই যাত্রিভর্তি ভ্যানোতে ধাক্কা মারে বাস। মারা যায় ভ্যানোতে থাকা এক শিশু-সহ ছ’জন), আন্দুল থেকে ডোমজুড় যাওয়ার পথে সরস্বতী ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকা, ডোমজুড় থেকে নারনা যাওয়ার রাস্তা, মাকড়দহ থেকে অঙ্কুরহাটি যাওয়ার রাস্তা।
শুধু ডোমজুড় নয়, এই সমস্যা গ্রামীণ হাওড়ার প্রায় সব ব্লকেই। সাঁকরাইল ব্লকের আড়গোড়ের বাসিন্দা শুভদীপ সেন বলেন, “আড়গোড় মোড় থেকে জঙ্গলপুর যাওয়ার রাস্তায় প্রতিদিন প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন। রাস্তায় আলো না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া আন্দুল বাজার থেকে আন্দুল স্টেশন রোডে যাওয়ার রাস্তাও অন্ধকার। আলো নেই আন্দুল স্টেশন রোডেও।” একই সমস্যা জগৎবল্লভপুরেও। এই ব্লকের ইছানাঘড়ি থেকে মুন্সিরহাট, জগৎবল্লভপুর রথতলা থেকে পাঁতিহাল, বড়গাছিয়া থেকে আমতা ও বড়গাছিয়া থেকে উদয়নারায়ণপুর রাস্তার বেশির ভাগ অংশই সূর্য ডুবলে চলে যায় ঘুটঘুটে অন্ধকারের কবলে। জগৎবল্লভপুরের বাসিন্দা অভিজিৎ টাটের অভিযোগ, “সব জায়গাতেই যেটুকু আলো আছে সেটা রাস্তার পাশের দোকানের আলো। রথতলা থেকে পাতিহাল যাওয়ার পথেই আছে সরকারি হাসপাতাল। সেখানেও আলো নেই।” এই সমস্যা রয়েছে শ্যামপুর, আমতা, বাগনান-সহ গ্রামীণ হাওড়ার প্রায় সব ব্লকেই।
কী বলছে প্রশাসন?
ডোমজুড়ের বিডিও তমোঘ্ন কর বলেন, “কিছু পঞ্চায়েত নিজেদের উদ্যোগে রাস্তায় আলো লাগিয়েছে। নতুন স্থায়ী সমিতিগুলির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচা করব।” উদয়নারায়ণপুরের বিডিও সুরজিৎ ঘোষ বলেন, “আলো লাগানোর ক্ষেত্রে মূল সমস্যা অর্থের। আলোর বিল কে মেটাবে সেই প্রশ্নও আছে। তবে রাস্তায় আলো লাগানো খুবই প্রয়োজন।” ডোমজুড়ের বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইতিমধ্যেই আমার বিধায়ক তহবিল থেকে আমার বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বেশ কিছু রাস্তায় আলো লাগানোর ব্যবস্থা করেছি।” উলুবেড়িয়া (দক্ষিণ) কেন্দ্রের প্রধান রাস্তাগুলিতে বিধায়ক কোটা থেকে ৫৩টি সাদা আলো ইতিমধ্যেই লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার বিধায়ক পুলক রায়। হাওড়া জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ প্রিয়া পাল সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি জেলা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা করব।”
উদ্যোগ ও আলোচনা আদৌও আলো দেখবে নাকি ডুবে যাবে ফাইলবন্ধি অন্ধকারের গর্ভে, উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ। |