নিজস্ব সংবাদদাতা • পুড়শুড়া |
চরম বিশৃঙ্খলা চলছে পুড়শুড়ার বালিখাদের ব্যবসায়।
ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের নতুন নিয়ম জারির প্রতিবাদে বৈধ বালিখাদগুলি দিন কয়েক হল বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকেরা। ফলে হাজার চারেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। অন্য দিকে, ওই দফতরেরই নজরদারির অভাবে রমরমিয়ে বালি চুরি চলছে বলে অভিযোগ। যত্রতত্র নদী বাঁধের গায়ে গজিয়ে উঠছে অবৈধ বালিখাদ। এক দিকে, তাতে ভাঙনের আশঙ্কায় আতঙ্কিত নদী-সংলগ্ন বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ। আবার রাজস্ব না মেলায় উদ্বিগ্ন জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরও। হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর) আয়েশা রানি বলেন, “পুড়শুড়ায় বেআইনি বালিখাদ বন্ধ করতে অভিযান শুরু হয়েছে। বৈধ বালি খাদ থেকেও পারমিট মোতাবেক বালি তোলা নিয়ে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া রুখতেই ১০ হাজার সিএফটি বালি তোলার জন্য দশ দিনের সময়সীমা কমিয়ে তিন দিন করা হয়েছে। বৈধ বালি খাদগুলির এ বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।”
পুড়শুড়া ব্লক এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে দামোদর নদ এবং মুণ্ডেশ্বরী নদী। দুই নদীতেই বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে অসংখ্য বালিখাদ। ওই সব খাদ থেকে বালি কাটা কয়েক হাজার মানুষের রুটি-রুজির একমাত্র পথ। বালিখাদ দখল নিয়ে হানাহানিরও প্রচুর নজির আছে। রাজনীতিতে ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে বালিখাদের ব্যবসায় দখলদারিও বদলে যায় বলে স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা। |
পুড়শুড়া ব্লক ভূমি ও ভমি রাজস্ব দফতর সূত্রের খবর, দুই নদীতে বর্তমানে বৈধ বালি খাদের সংখ্যা ১০টি। আর অবৈধ খাদের সংখ্যা? সংশ্লিষ্ট দফতরের হিসাবেই তা ২০টিরও বেশি। যেমন পুড়শুড়া থানা-সংলগ্ন কয়েকটি ছাড়াও কোটালপাড়া, রসুলপুর, বৈকুন্ঠপুর প্রভৃতি এলাকায় বেশ কিছু অবৈধ বালিখাদ আছে। আর বৈধ বালিখাদ মালিকদের হিসাবে অবৈধ বালিখাদ অন্তত ৫০টি। যেগুলির অধিকাংশই রাজনৈতিক নেতাদের মদতে বা বেনামি অংশীদারিত্বে চলে। এখান থেকে কোনও রাজস্ব আদায় হয় না। উল্টে, বালি-বোঝাই লরি আটকে হেনস্থা হতে হয়েছে সরকারি কর্মীদের এমন নজিরও আছে।
বালিখাদ নিয়ে পুড়শুড়া ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত জাফর খান কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে পুড়শুড়া বিডিও অনির্বাণ রায় বলেন, “অবৈধ বালি তোলা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। পুড়শুড়ায় সমস্যা হল, এখানে বর্তমানে কোনও স্থায়ী আধিকারিক নেই। খানাকুলের আধিকারিককে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি অধিকাংশ সময় গরহাজির থাকেন। স্বভাবতই নজরদারির অভাবে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে। বৈধ বালিখাদগুলি বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিষয়টি ভূমি রাজস্ব দফতরের। তবু ওই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার মানুষের রুটি-রুজির সম্পর্ক থাকায় সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। |
• আগে ১০ হাজার সিএফটি বালি তোলার সময় ছিল ২০ দিন।
• গত বছরের গোড়ায় তা কমে দাঁড়ায় ১৫ দিনে।
• ২০১২ সালের মাঝামাঝি ১০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ হয়।
• সম্প্রতি ওই পরিমাণ বালি তোলার সময় ধার্য হয়েছে তিন দিন। |
|
বৈধ বালিখাদ মালিকদের দাবি, ১০ হাজার সিএফটি বালি তোলার সময়সীমা তিন দিন থেকে বাড়িয়ে আগের মতো দশ দিন করতে হবে। অতীতে ১০ হাজার সিএফটি বালি তোলার সময়সীমা ছিল ২০ দিন। গত বছরের গোড়ায় তা কমে ১৫ দিন হয়। ওই বছরেরই মাঝামাঝি ১০ দিন সময়সীমা নির্ধারণ হয়। কিন্তু চলতি মাসের ১১ তারিখে আচমকা অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) বৈধ খাদানগুলিতে হানা দিয়ে চালান বইপত্র সব নিয়ে চলে যান। পরদিনই তা ফিরিয়ে দেওয়া হলেও নতুন নির্দেশিকা আসে, বালি তোলার সময় তিন দিন। ওই খাদ মালিকদের পক্ষে কল্যাণ সিংহরায়, সুব্রত সামন্ত, অচিন্ত্য হাইত, নির্মল বাইরী, তপন সামন্তদের অভিযোগ, পুড়শুড়ার বালি ভাল নয়। ওই বালি কেবল ভরাটের কাজে লাগে। কোনও মতেই তিন দিনে ১০ হাজার সিএফটি বালি বিক্রি করা সম্ভব নয়। এ দিকে, ১০ হাজার সিএফটি বালির রয়্যালটি হিসাবে জমা দিতে হয় ১১,৮২৫ টাকা। এখানের নিম্নমানের এই বালির ১০০ সিএফটির দাম ২৫০ টাকা (যেখানে বাঁকুড়া ও বর্ধমানে মোটা বালি ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হয়)। তারমধ্যে পরিবহণ খরচ, শ্রমিকদের বেতন, বিভিন্ন খাতে চাঁদা দিয়ে খরচ হয়ে যায় প্রায় ২১০ টাকা। ১০০ সিএফটি বালি বেচে ৫০ টাকা লাভ থাকে। এই অবস্থায় তিন দিনের চালান কাটলে বাড়ি থেকে টাকা দিতে হবে। এঁদের দাবি বালি তোলার সময়সীমা অন্তত দশ দিন করা হোক। তাঁদের আরও বক্তব্য, “বৈধ খাদগুলির বদলে অবৈধ বালি খাদগুলিতে হানা দেওয়া হোক। তাদের জরিমানা করে ঢের বেশি রাজস্ব আদায় হতে পারে।” |