‘গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাতিষ্ঠানিক সশক্তিকরণ প্রকল্প’ বা আইএসজিপি-র দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১,২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে অনুদান দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। রাজ্যে এই প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০১০-এ। ওই বছর থেকে বাছাই করা ১,০০০টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে প্রকল্পের অধীনে আনে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। ২০১৫ পর্যন্ত এই সব গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ১,০০০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে যে পঞ্চায়েতগুলিকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে তাদের উন্নয়নেও বিশ্ব ব্যাঙ্ক একই ভাবে অনুদান দেবে বলে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর।
আইএসজিপি প্রকল্পের টাকায় আওতাধীন পঞ্চায়েতগুলোর পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়। যেমনরাস্তা গড়া, রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করা, পঞ্চায়েতের আয় বাড়তে পারে এমন সম্পদ সৃ্ষ্টি করা।
নতুন যারা এই প্রকল্পে ঢুকছে তাদের মধ্যে রয়েছে, হুগলি জেলার ২০৭টি (জেলার সব পঞ্চায়েত), দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৭০টি এবং উত্তর ২৪ পরগনার ১৫০টি পঞ্চায়েত। দুই ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকার পঞ্চায়েতগুলিকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে না। এ বিষয়ে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানান, ওই এলাকা যেহেতু জাতীয় বনাঞ্চলের অধীনে তাই সেখানে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকল্পটিতে কাজ করা যাবে না। এ ছাড়া বীরভূম, বর্ধমান, কুচবিহার, হাওড়া, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের (এই জেলাগুলিরই ১,০০০ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রথম পর্যায়ে আইএসজিপি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়) ৬৮৪টি পঞ্চায়েত প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের বাইরে ছিল। সেগুলিকেও দ্বিতীয় পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত করা হল।
প্রথম পর্যায়ে যে ১,০০০ গ্রাম পঞ্চায়েতকে আইএসজিপি প্রকল্পে বাছাই করা হয়, তাদের কিন্তু সরাসরি টাকা দেওয়া হয়নি। মোট পাঁচটি কিস্তিতে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে টাকা দেওয়া হয়। প্রতিবার টাকা পাওয়ার আগে পঞ্চায়েতগুলিকে বিশ্ব ব্যাঙ্কের দেওয়া বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। দিতে হয় লিখিত পরীক্ষা। এ সবে যারা উতরে যায় তারা টাকা পায়। পেয়েছে। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে পঞ্চম কিস্তি টাকা পাওয়ার জন্য মোট ৯৬০টি পঞ্চায়েত যোগ্যতামান পেরিয়েছে। এই কিস্তিতে তাদের দেওয়া হবে ২৯৭ কোটি টাকা। একই পদ্ধতিতে দ্বিতীয় পর্যায়ে টাকা দেওয়া হবে বলে পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
চলতি বছরের মাঝামাঝি বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা আইএসজিপি প্রকল্পে কেমন কাজ হচ্ছে তা দেখতে আসেন। কাজ দেখে তাঁরা সন্তুষ্ট হন। এর পরেই বিশ্ব ব্যাঙ্ক বাড়তি আরও ১,২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার কথা জানিয়ে দেয় বলে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন। তবে প্রকল্পটিতে টাকা দেওয়ার আগে নির্বাচিত পঞ্চায়েতগুলিতে গিয়ে প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্য এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাঁরা প্রশিক্ষণ দেবেন, সেই সব কর্মী ও আধিকারিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এইসব কর্মী এবং আধিকারিকদের বেত ন বাবদ টাকাও দেবে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের যুগ্মসচিব সৌম্য পুরকায়স্থ বলেন, “আগামী বছরের গোড়া থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটি শুরু হবে।” পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, “বাকি যে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি রয়েছে, তাদের মধ্যে যাদের কাজকর্ম ভাল তাদেরও যাতে আইএসজিপি প্রকল্পের আওতায় আনা হয় সে জন্য আমরা বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে আবেদন জানিয়েছি।”
|