বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতাল
রেফার করেও ‘চাপে’ পড়ে অস্ত্রোপচার
রিকাঠামো নেই বলে চোখে বঁড়শি গাঁথা এক বালককে ভর্তি না করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ‘রেফার’ করতে চেয়েছিল বিষ্ণুপুর হাসপাতাল। বালকটির পরিবার ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার ‘চাপে’ শেষ পর্যন্ত সেই বিষ্ণুপুর হাসপাতালেই বালকটির চোখে অস্ত্রোপচার হল। চোখ থেকে বঁড়শি বের করে চিকিৎসক জানালেন সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে।
জখম জগন্নাথ।
—নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য সরকার বিষ্ণুপুর হাসপাতালটিকে মহকুমাস্তর থেকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করেছে। কিন্তু তারপরেও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ এখনও ঢের বাকি। ফলে এখনও এই হাসপাতাল থেকে অনেক রোগীকেই কার্যত প্রাথমিক চিকিৎসা না করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অতীতে বারবার এমন অভিযোগ উঠেছে। বুধবার তেমনই ঘটনা ঘটতে চলেছিল ওন্দার লাউড়িয়া গ্রামের নয় বছরের বালক জগন্নাথ রায়ের ক্ষেত্রেও।
বন্ধুদের সঙ্গে গ্রামেরই একটি বাঁধে মাছ ধরতে গিয়েছিল সে। হঠাৎ এক বন্ধুর ছিপের বঁড়শি গেঁথে যায় তার বাঁ চোখে। রক্তাত্ত্ব অবস্থায় যন্ত্রনায় কাতরানো জগন্নাথকে নিয়ে তার বাবা সুকুমার রায় বিষ্ণুপুর হাসপাতালে আসেন। কিন্তু হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এখানে ওই বঁড়শি বের করার পরিকাঠামো নেই। কাছাকাছি একমাত্র বাঁকুড়া মেডিক্যালেই এর চিকিৎসা পাওয়া যেতে পারে। এ কথা শোনার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুকুমারবাবু। তিনি বলেন, “আমি দিনমজুর। বাঁকুড়ায় নিয়ে যাওয়ার খরচ তো কম নয়। তার উপরে যেতে যা সময় লাগবে, তারপর কি আর ছেলের চোখটা বাঁচানো যাবে?” তিনি হাসপাতালের কর্মীদের হাত ধরে ছেলের চিকিৎসা করার জন্য বার বার অনুরোধ জানাতে থাকেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তছা বিষ্ণুপুর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কাছে সুকুমারবাবু অনুরোধ করেন, “এখানেই কিছু একটা করে ছেলেকে বাঁচান।” দিব্যেন্দুবাবু হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক বিভাস সাহাকে বলেন, “বঁড়শি গাঁথা অবস্থায় দূরে নিয়ে যেতে গিয়ে ছেলেটার চোখের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এখানেই যা করার করতে হবে।” রাজি হয়ে যান বিভাসবাবু। হাসপাতালের ওটিতে নিয়ে গিয়ে অ্যানাসথেসিস্ট-সহ তিন কর্মীকে নিয়ে তিনি এক ঘণ্টার চেষ্টায় জগন্নাথের চোখ থেকে বঁড়শিটা বের করে আনেন। অস্ত্রোপচার শেষে বিভাসবাবু বলেন, “এ ধরণের জটিল অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো সত্যিই এই হাসপাতালে নেই। বঁড়শিটা চোখের নীচের পাতা থেকে সাদা অংশ পর্যন্ত গেঁথে গিয়েছিল। সবাই মিলে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করেছি। সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে।”
আপাতত জগন্নাথের বাঁ চোখে ব্যান্ডেজ বাঁধা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সে বলে, “বঁড়শিটা বেঁধার পরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল। হাসপাতালে ভর্তি করা নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে যা চলল, ভেবেছিলাম এখানে আমার আর চিকিৎসা হবে না। আমি বোধহয় এ বার অন্ধই হয়ে যাব। কিন্তু চিকিৎসক-সহ সবাই মিলে আমাদের পাশে দাঁড়ানোয় মনে হচ্ছে চোখটায় আবার দেখতে পাব।”
কেন ‘রেফার’ করা হচ্ছিল ওই বালককে? হাসপাতাল সুপার সুভাষচন্দ্র সাহা বলেন, “সদ্য জেলা হাসপাতালের স্বীকৃতি পাওয়া গিয়েছে। হাসপাতালে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। চক্ষু বিভাগের পরিকাঠামোগত অভাব মেটেনি। এই অবস্থার মধ্যেও যে ওই জটিল অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে, তাতে আমরা খুশি।” বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরেশ দাস বলেন, “ওই হাসপাতালে একটিই মাত্র অপারেশন থিয়েটার। সেখানেই সন্তানের জন্ম দেওয়া থেকে অন্য অস্ত্রোপচারও করা হয়। ফলে সংক্রমণের ভয় থাকেই। তা ছাড়া কর্মীরও অভাব রয়েছে। এ সব কারণেই হয়তো বালকটির অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি প্রথমে নিতে চাওয়া হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত ওই অস্ত্রোপচারের সাফল্যের জন্য চিকিৎসকে বাহবা দিচ্ছি।” তিনি জানান, হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে কথা বলে তিনি চক্ষু বিভাগের আলাদা ওটি-সহ অন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলি দ্রুত করার উদ্যোগ নেবেন।
কলেজে স্মারকলিপি। অবিলম্বে বিভিন্ন বিষয়ের শূন্যপদ পূরণ, কলেজে বহিরাগতদের আটকানো, পাশকোর্সের ক্লাস নিয়মিত করার মতো কয়েকটি দাবিতে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার জে কে কলেজের অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিল ছাত্র পরিষদ। সংগঠনের তরফে অভয় মাহাতো, রজত গরাইদের অভিযোগ, “আটটি বিষয়ে আংশিক সময়ের শিক্ষক প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে।” অধ্যক্ষ শান্তনু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কলেজ সার্ভিস কমিশনকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি শীঘ্রই শিক্ষক পাওয়া যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.