|
|
|
|
ত্রিস্তর পঞ্চায়েতই চায় মোর্চা, দ্বিস্তরে রাজি রাজ্য-কেন্দ্র
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
প্রত্যাশিত ভাবেই দ্বিস্তর পঞ্চায়েত নয়, সংবিধান সংশোধন করার পরে দার্জিলিঙে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনই চাইল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বৃহস্পতিবার নবান্নে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মোর্চা নেতৃত্ব স্পষ্ট করে সে কথা জানিয়ে দেন। তবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি সময় সাপেক্ষ বলে আপাতত পাহাড়ে দ্বিস্তর পঞ্চায়েত ভোটের পক্ষেই মত দিয়েছেন। যাতে সংবিধান সংশোধনের জন্য যে সময় লাগবে, তার মধ্যেই জিটিএ পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
সেই সঙ্গে, পাহাড়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত গঠিত হলে জেলা পরিষদ ও জিটিএ-র মধ্যে সম্পর্ক কী দাঁড়াবে, সেই প্রসঙ্গও উঠে এসেছে আলোচনায়। পাহাড়ের উন্নয়নের নানা কাজ জিটিএ করছে। জেলা পরিষদ হলে তারাও গ্রামোন্নয়নের কাজ করবে। সে ক্ষেত্রে জিটিএ ও জেলা পরিষদ একই দলের দখলে থাকলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু জিটিও ও জেলা পরিষদ যদি দু’টি ভিন্ন রাজনৈতিক দলের হাতে থাকে, তা হলে বিরোধের আশঙ্কা থাকবে। সে জন্যই সব দিক খতিয়ে দেখে এগোনোর পক্ষপাতী কেন্দ্র ও রাজ্য। সে কথা বুঝেছেন মোর্চা নেতারাও। যে কারণে বৈঠকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ব্যাপারে অনড় মনোভাব দেখালেও দার্জিলিঙে ফিরে দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে ফের আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। সব ঠিক থাকলে সামনের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহেই ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা। মোর্চা সূত্রের দাবি, সেই বৈঠকে পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত জট খুলতে পারে। ইতিমধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্যের পক্ষ থেকেও পাহাড়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত চালুর জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
এদিন বৈঠকের পরে মোর্চা নেতা রোশন গিরি বলেন, “জিটিএ চুক্তিতেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত গঠনের কথা বলা হয়েছিল। সব কিছু যখন চুক্তি মেনে হচ্ছে, এটাই বা হবে না কেন? আমরা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতেই ভোট চাই। এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল, গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। আমরাও দার্জিলিঙে ফিরে দলের সভাপতিকে সব জানাব।” সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “ত্রিস্তর পঞ্চায়েত চালুর ব্যাপারে যে সব সমস্যার কথা উঠছে তা নিয়ে ফের আলোচনাও করব।” এর মধ্যে যাতে অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়, সে জন্য কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের কাছে দাবি জানিয়েছেন মোর্চা প্রতিনিধিরা।
এ দিনের বৈঠকে কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কিত অধিকর্তা আশুতোষ জৈন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তা কে স্কন্দন। রাজ্য সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্বত্য বিষয়ক দফতরের সচিব আর ডি মিনা এবং দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনিত যাদব। মোর্চা ও জিটিএ-র পক্ষ থেকে ছিলেন রোশন গিরি, হরকাবাহাদুর ছেত্রী, রোহিত শর্মা এবং আর বি ভুজেল।
রোশন জানিয়েছেন, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে তাঁরা দার্জিলিং-কে উত্তর-পূর্ব রাজ্যের কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা দার্জিলিংকে উত্তর-পূর্ব কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।” একই সঙ্গে দার্জিলিংকে আদিবাসী এলাকার মর্যাদা এবং দেশের পার্বত্য রাজ্যগুলি যে সব সুযোগ সুবিধে পায়, তা দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন মোর্চা প্রতিনিধিরা। মোর্চা নেতারা জানান, দু’টি বিষয়ই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কাছে বিবেচনার জন্য পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। রোশন বলেন, “জিটিএ এলাকার বিভিন্ন অভয়ারণ্য তাদের অধীনে নিয়ে আসার ব্যাপারেও এ দিনের বৈঠকে কথা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
দার্জিলিঙে জিটিএ সভা এবং সেখানকার সদস্যদের বাসভবন তৈরির জন্য এ দিন ৫৫৩ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য চেয়েছেন মোর্চা নেতারা। স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেববাবু জানান, এ ধরনের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। জিটিএ-র পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট দিলে কেন্দ্রীয় পূর্ত মন্ত্রকের মাধ্যমে তার খরচ হিসেবের পরেই রাজ্য তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী ইতিমধ্যেই জিটিএ-র অধীনে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর বদলি করা হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রসচিব এ দিন জানিয়ে দেন, দার্জিলিঙে রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অফিসটিকে জিটিএ-র অধীনে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, “জিটিএ চাইলে পৃথক তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর খুলতেই পারে। দার্জিলিঙে রাজ্যের অফিসটি বন্ধ করা হবে না।”
বাসুদেববাবু এ দিন জানান, জিটিএ এলাকার মহকুমা এবং ব্লকের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে পাহাড়ে বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড়ের কী ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, কোনও একটি বণিক মহলকে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হবে। |
|
|
|
|
|