আদালতে দীর্ঘ দিন ধরে জমে থাকা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে একই দিনে দেশ জুড়ে লোক আদালত বসছে। কাল, শনিবার এই কর্মসূচির উদ্যোক্তা ‘ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি’। ‘ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি’র চেয়ারম্যান তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক সমর রায় বলেন, “নানা কারণে বছরের পর বছর বহু মামলা জমে। লোক আদালতের মতো বিকল্প ব্যবস্থায় বহু মামলার নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। কম সময়ে বিচার মিলতে পারে। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির জন্যই ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই আয়োজন করেছে।” ‘স্টেট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি’র রেজিস্ট্রার অঞ্জনকুমার সেনগুপ্ত জানান, সুপ্রিম কোর্ট থেকে মহকুমা আদালত পর্যন্ত সর্বস্তরে লোক আদালত বসবে। শনিবার রাজ্যের লোক আদালতগুলিতে প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার মামলা ওঠার কথা।
লোক আদালত কী? আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, এটি একটি বিকল্প বিচার ব্যবস্থা। যেখানে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তকে পাশাপাশি বসিয়ে আলোচনার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। যে সব মামলার সাজা সাত বছরের কম, সেই সব মামলাগুলোরই এ ভাবে নিষ্পত্তি হতে পারে। সাধারণত আলোচনার মাধ্যমে জরিমানা দিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি মেলে অভিযুক্তের। বিচারকের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত তাঁর দোষ স্বীকার করেন। অভিযোগকারীও ক্ষতিপূরণ হিসেবে জরিমানা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ মেটাতে সম্মত হন। লোক আদালতে বিচারের দায়িত্বে থাকবেন এক জন বিচারক বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, এক আইনজীবী ও এক জন সমাজকর্মী। প্রতি জেলায় ‘ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি’র প্রধান হলেন জেলা জজ। তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটিই লোক আদালতগুলির বিচারক পদে কারা বসবেন, তা ঠিক করবে।
লোক আদালতের মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করতে হলে যে আদালতে মামলা রয়েছে, সেই আদালতে আবেদন করতে হয়। যিনি মামলা করেছেন, বা যাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তিনিও আবেদন করতে পারেন। আইনজাবীদের মধ্যস্থতায় দু’পক্ষ রাজি হলে বিচারকই মামলাটি লোক আদালতে পাঠিয়ে দেন। তার আগে অবশ্য বিচারক দেখে নেন, মামলাটি আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসাযোগ্য কি না। সাধারণত লোক আদালতের মাধ্যমে ঋণ-সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হয়।
এ রাজ্যের জেলায়-জেলায় আদালতে জমে থাকা মামলার সংখ্যা কম নয়। শুধু মেদিনীপুর আদালতেই ৪০,৬৬৯টি মামলা জমে রয়েছে। শনিবার শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরেই ২৬টি লোক আদালত বসবে। সেখানে লোক আদালতে দু’হাজারটিরও বেশি মামলা ওঠার কথা। তেমনই উত্তরবঙ্গের মালদহে ১২টি লোক আদালতে ওঠার কথা প্রায় তিন হাজার মামলার। ‘ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি’র আয়োজনে খুশি আইনজীবীদের একটা বড় অংশ। তাঁরা বলছেন, “এতে যদি এক দিনে একটা জেলায় এক হাজার মামলারও নিষ্পত্তি হয়, সেটা তো ভালই। উদ্যোগের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী দিনে সব আদালতে জমা মামলার চাপ কমবে। দ্রুত বিচার পাবেন মানুষ।” |