তেলের টাকা মেলে না, টহলদারি কমাচ্ছে পুলিশ
রাজ্যের ভাঁড়ারে পুলিশের জন্য তেলের টাকার আকাল। গাড়ি ছুটিয়ে দুষ্কৃতী ধরতে যেতে তাই দু’বার ভাবতে হচ্ছে পুলিশ অফিসারদের।
গত মাস ছয়েক ধরে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তেলের খাতে কার্যত কোনও টাকাই পাচ্ছে না পুলিশ। পরিস্থিতি এমনই যে, রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারেরা অনুরোধ করেছেন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে। মাসের পর মাস থানাগুলিকে ধারে তেল দিয়ে পেট্রোল পাম্পের মালিকেরাও হাত তুলে নিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে পুলিশকে গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে নগদে তেল কিনতে হচ্ছে।
বহু থানায় তেলের অভাবে টহলদার ভ্যান বসে গিয়েছে। পাহাড় থেকে সাগর রাজ্যের ১৯টি জেলার একই ছবি। পুলিশের আশঙ্কা, এর ফলে দুষ্কৃতীরা বেপরোয়া হয়ে উঠবে। মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুরের মতো কিছু জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়কার তেলের টাকা এখনও পৌঁছয়নি। এরই মধ্যে কয়েকটি জেলায় আজ, শুক্রবার পুর নির্বাচন বা উপ-নির্বাচন।
রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, গত ছ’মাসে জেলাগুলিতে পুলিশের বকেয়ার পরিমাণ লাফিয়ে-লাফিয়ে বেড়েছে। কোথাও সেই অঙ্ক সাড়ে পাঁচ কোটি ছুঁয়েছে। যেখানে বকেয়ার পরিমাণ সবচেয়ে কম, তা-ও কোটি টাকার নীচে নয়। অন্য দিকে, ভাড়ার গাড়ির বকেয়া টাকা না পেয়ে গাড়ির মালিকেরাও পুলিশকে গাড়ি দিতে চাইছেন না। গত মঙ্গলবার রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএম প্রভু রাজশেখর রেড্ডির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রায় সব জেলার পুলিশ সুপারই বকেয়া টাকার জন্য দরবার করেছেন।
কোথায় কত বাকি
দক্ষিণ ২৪ পরগনা সাড়ে ৫ কোটি
হুগলি দেড় কোটি
মুর্শিদাবাদ ১ কোটি ১০ লক্ষ
বীরভূম দেড় কোটি
উত্তর ২৪ পরগনা দেড় কোটি
পশ্চিম মেদিনীপুর সাড়ে ৩ কোটি
পূর্ব মেদিনীপুর ১ কোটি ৭০ লক্ষ
পুলিশ সূত্রের খবর, এক-একটি জেলায় সাধারণত মাসে গড়ে ১৫ লক্ষ টাকার তেল খরচ হয়। উৎসব বা ভোটের মরসুমে আবার তা অনেকটাই বাড়ে। থানাগুলির একটা নির্দিষ্ট কোটা থাকে তেল পাওয়ার। এত দিন জেলা সদর থেকে সেই তেল সংগ্রহ করা হত। কোনও ক্ষেত্রে তেল বেশি লাগলে সংশ্লিষ্ট থানার কোটা বাড়িয়ে দেওয়া হত। কিন্তু টাকা না আসায় গত কয়েক মাস জেলার পুলিশকর্তারা থানাগুলিকে নিজেদের উদ্যোগে পেট্রোল পাম্প থেকে তেল ভরে নিতে বলছেন। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক ছিল, দু’এক মাস অন্তর সংশ্লিষ্ট জেলায় টাকা পৌঁছে যেত। বকেয়ার প্রায় পুরোটাই পাঠানো হত। কোথাও সামান্য কিছু বাকি থাকত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি প্রায় হাতের বাইরে। যার দেড় কোটি টাকা পাওনা, তাকে হয়তো ১০ বা ১৫ লক্ষ টাকা কোনও ক্রমে দেওয়া হচ্ছে। প্রতি জেলায় পুলিশের আর্থিক স্থিতি নষ্ট হতে বসেছে।”
পুলিশের একটা বড় অংশের আক্ষেপ, সরকারের সর্বোচ্চ মহলে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। উল্টে খরচ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষকর্তার ব্যাখ্যা, “পুলিশ বাজেটে তেলের যে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছিল, তা ইতিমধ্যে প্রায় শেষ। কারণ তেলের দাম যেমন বেড়েছে, তেমন ব্যবহারও বেড়েছে।” তাঁর ব্যাখ্যা, “তেলের টাকা দেওয়া হচ্ছে না, এটা ঠিক নয়। খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে। তেল কোম্পানিগুলির কাছে রাজ্যের বকেয়া প্রচুর। না মেটালে তারা তেল দিতে চাইছে না।”
কিন্তু তেল না পেলে পুলিশি টহল বা তল্লাশির কাজ কী ভাবে চালানো যাবে, একেবারে নিচুতলা থেকেই সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। থানার ওসি বা আইসি-রা বহু ক্ষেত্রেই রাতের টহলদারি অনেকটাই কাঁটছাট করছেন। যে ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচটি টহলদার ভ্যান থাকত, সেখানে মেরেকেটে একটা বা দু’টো গাড়ি দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে তাঁদের। এখনই টাকা না এলে টহলদারি বন্ধের আশঙ্কাও রয়েছে বহু জেলায়। একটি জেলার পুলিশকর্তা বলেন, “এমনিতেই তো পুলিশ দেরি করে পৌঁছয় বলে বদনাম রয়েছে। এখন যা অবস্থা তাতে দেরি করে কেন, আদৌ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরিস্থিতিই হয়তো থাকবে না।”
রাজ্য প্রশাসনের এক পদস্থ অফিসারের বক্তব্য, “পুলিশ, স্বরাষ্ট্র এবং অর্থ দফতরের সমন্বয়ের সমস্যায় কিছুটা জট পাকিয়েছে। এটা কেটে যাবে বলে আশা।” কবে কাটবে, তার উত্তর কোনও মহল থেকেই মেলেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.