বিজ্ঞাপনে নয়, গোটা বসিরহাটে এখন মানুষের মুখ ঢেকেছে রুমাল, গামছা বা ওড়নায়। ঘর থেকে রাস্তায় বেরোলেই বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ, দেখা যাচ্ছে সকলেরই নাক-মুখ কাপড়ে ঢাকা। না কোনও সংক্রামক রোগের জীবাণু নয়, গোটা মহকুমাশহরে রাস্তার হাল যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে তাতে ক্রমবধর্মান ধুলো থেকে বাঁচতে এই উপায়ই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন মানুষজন। আর ধুলোর এই দূষণের জন্য তাঁদের যাবতীয় ক্ষোভ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মহকুমার রাস্তাগুলি মেরামত না হওয়ার কারণেই এই অবস্থা। যা নিয়ে প্রশাসনের কোনও গা নেই। |
মৈত্রবাগান এলাকায় ধুলোময় টাকি রোড।
ধুলো থেকে বাঁচতে এভাবেই মুখ ঢাকছে মানুষ।—নিজস্ব চিত্র। |
রাস্তায় বেরোলে ধুলোর সঙ্গে এমন যুদ্ধে চিন্তিত অভিভাবকেরাও। তাঁদের কথায়, বেহাল রাস্তায় যে ভাবে ধুলো উড়ছে তাতে বড়রা তো বটেই, ছোট ছেলমেয়েদেরও শ্বাস নেওয়ার সমস্যা হচ্ছে। ধুলো এড়াতে সকলেই তাই ওষুধের দোকান থেকে ‘মাস্ক’ কিনে ছেলেমেয়েদের মুখে বেঁধে রাস্তায় বেরোচ্ছেন। নিজেরাও রুমাল বা এক টুকরো কাপড়ে নাক-মুখ ঢাকছেন। অবিলম্বে রাস্তা মেরামত না হলে এই ধুলো ওড়ার ফলে লোকজনের শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মহকুমা স্বাস্থ্যআধিকারিক অসিত পাণ্ডে। তিনি বলেন, “নাক-মুখ দিয়ে ঢোকা ধুলো-বালি ফুসফুসে গিয়ে তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি এমনকী আরও বড় ধরনের রোদে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শরীর ৫ মাইক্রন পরিমাণ ধুলো ঢুকলে তা সরাসরি ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে। তা ছাড়া এ ফলে পরিবেশেরও ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে।” ধুলের হাতে থেকে বাঁচতে তাঁর পরামর্শ, “নাক-মুখ কাপড়ে ঢেকে রাস্তায় বেরোন। বাড়ি ফিরে চোখ-মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।”
গোটা বসিরহাট মহকুমার বেশিরভাগ রাস্তাই বেহাল। শহরের অন্যতম প্রধান ইটিন্ডা এবং টাকি রোডের অবস্থা ভয়ঙ্কর। রাস্তা মেরমতির দাবিতে স্থানীয় মানুষের বেশ কয়েকবার প্রবল বিক্ষোভের জেরে বর্ষায় খানাখন্দভর্তি রাস্তায় ইট ফেলে গর্ত বুজিয়ে কোনওমতে তাপ্পি দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই ইটই স্থানীয় মানুষের কাছে যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ভারী ভারী গাড়ির চাপে ইট গুঁড়ো হয়ে গিয়েছে। ফলে হাওয়ায় বা গাড়ি গেলেই ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। এমন অবস্থা যে ধুলোর ঝড়ে একটু দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেক জায়গাতেই রাস্তার পাশের দোকানদারেরা রাস্তায় জল ছেটানোর ব্যবস্থা করলেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না ধুলোর ঝড়। কমল মণ্ডল, খগেন মণ্ডল-এর মতো পথচারীদের কথায়, “একেই রাস্তার যা অবস্থা তাতে গাড়িতে উঠলে জন্মদিনের ভাত উঠে আসার জোগাড়। তার উপর ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো হাজির হয়েছে ধুলো। এর মধ্যে দিয়েই হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া-আসা চলছে। কী নিদারুণ অবস্থা। অথচ প্রশাসন সব জেনেও নিশ্চুপ।”
বসিরহাট জেলা হাসপাতালের বক্ষ বিশেষজ্ঞ অসীমকৃষ্ণ দাস বলেন, “রাস্তার গর্ত বোজাতে ব্যবহার করা ইট-বালি উড়ে বাতাসে দূষণ ছড়াচ্ছে। সেই ধূলিকণা শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে অ্যাজমা হতে পারে। শিশুদের ক্ষতি এড়াতে মাস্ক অবশ্যই পরা দরকার।” আর এই সুযোগে বিভিন্ন ওষুধের দোকানেও মাস্ক কেনার ভিড় লেগে গিয়েছে। বসিরহাট পুরাতন বাজারের এক ওষুধ দোকানের মালিক জানালেন, “ধুলো থেকে বাঁচতে অনেকেই মাস্ক কিনছেন। ৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা সব দামেরই মাস্ক ভালই বিক্রি হচ্ছে।’’
রাস্তার উপযুক্ত সংস্কার না হওয়ার কী বক্তব্য প্রসাসনের? বসিরহাটের পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার তপন নস্কর বলেন, “ধুলোয় নাকাল হতে হচ্ছে আমাকেও। তবে রাস্তা সংস্কারের হচ্ছে না এ অভিযোগ ঠিক নয়। বসিরহাট কলেজ থেকে বেলতলা পর্যন্ত টাকি রোড ও ইটিন্ডা রোডের মেরামতির জন্য ইতিমধ্যেই ৬০ লক্ষ টাকার টেন্ডারের কাজ শেষ করে কাজ শুরু করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। তবে কলেজ থেকে খোলাপোতার দিকে রাস্তার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। স্বরূপনগরের দিক থেকে কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।” |