দিনেমার আমলের স্থাপত্য পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়ার প্রয়াস শুরু হল শ্রীরামপুরে।
অষ্টাদশ শতকে একটা বড় সময় শ্রীরামপুর ছিল ডেনমার্কের উপনিবেশ। ১৭৫৫ থেকে শুরু করে বেশ কিছু সময় ধরে গঙ্গা তীরবর্তী এই অঞ্চলে ঘাঁটি ছিল দিনেমারদের। সেই সময়ে বেশ কয়েকটি স্থাপত্য গড়ে ওঠে।
ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ডেনমার্ক, রাজ্য হেরিটেজ কমিশন এবং হুগলি জেলা প্রশাসনের সমবেত উদ্যোগে আজ, শুক্র এবং কাল, শনিবার এই ইতিহাস-জড়ানো শহরে প্রাচীন স্থাপত্যের সংস্কার, সৌন্দর্যায়ন এবং পর্যটনে উন্নয়নের ভাবনা নিয়ে কর্মশালা হচ্ছে। প্রথম দিন বেহালায় রাজ্য হেরিটেজ কমিশন দফতরে, দ্বিতীয় দিন শ্রীরামপুরে। কেন দুই শতাব্দী পুরনো সেই সব স্থাপত্যের পুনরুজ্জীবন করতে চাইছে সে দেশের মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ, তা নিয়েই সেখানে আলোকপাত করা হবে। |
পুরনো আমলের ডেনিস ট্যাভার্ন। |
প্রশাসন সূত্রের খবর, বছরখানেক আগে তিন উদ্যোক্তার মধ্যে একটি ‘মউ’ স্বাক্ষরিত হয়। সেটি অনুযায়ী, শ্রীরামপুরে সে কালের যে সব স্থাপত্য জরাজীর্ণ অথবা অবলুপ্ত হওয়ার পথে, সেগুলির সংস্কার করা হবে। শুধু সংস্কার নয়, সেগুলিকে পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। স্থাপত্যগুলিকে ঘিরে একটি ‘হেরিটেজ জোন’ তৈরির ভাবনাও রয়েছে। আদালত চত্বরেই ওই আমলের একটি ভবনকে ক্যাফেটেরিয়া হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এখন যেখানে মহকুমা পুলিশ লাইন, সেখানে ওই আমলে বিশ্রাম করা এবং খাওয়া-দাওয়ার জায়গা ছিল। ভবনটির নাম ছিল ‘ড্যানিশ ট্যাভার্ন’। ভবনটি ভগ্নপ্রায়। সেটি ভেঙে না ফেলে সুন্দর করে সংস্কারের চেষ্টা করা হবে। পুরনো চেহারা অনুযায়ী তার একটি নকশাও তৈরি করা হয়েছে। হেরিটেজ কমিশনের কর্তারা জানান, প্রয়োজনীয় টাকার জোগান দেবে ডেনমার্কের মিউজিয়ামটিই। |
বর্তমানে যে চত্বরে শ্রীরামপুর মহকুমা আদালত, মহকুমাশাসকের কার্যালয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অফিস-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতর, সেই চৌহদ্দি এক সময়ে দিনেমারদেরও ‘গভর্নমেন্ট কম্পাউন্ড’ ছিল। ১৭৭১ সালে ১৭ বিঘা জমির উপরে তৈরি হয়েছিল ‘গভর্নমেন্ট হাউস’। ওই সময় থেকে শুরু করে আড়াইশো বছর ধরে শ্রীরামপুরের প্রধান প্রশাসনিক ভবন হিসেবে পরিগণিত হয়ে এসেছে এই বাড়িটি। জীর্ণ হয়ে পড়ায় ১৯৯৯ সালে তা পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। দিনেমার ছাড়াও ব্রিটিশ এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মহকুমার প্রশাসনিক কাজকর্ম এখানে হয়েছে। ওই ভবনের পাশেই ছিল ‘ওয়াচ টাওয়ার’। পরে সেটি দোতলা হয়। দোতলা বাড়িটি এখন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল)-এর কার্যালয়।
ইতিমধ্যে ‘গভর্নমেন্ট হাউজ’ সংস্কারের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার কোর্ট লক-আপের পাশে ‘সাউথ গেট’ এবং সেন্ট ওলাফ গির্জা সংস্কারের কাজ শুরু করার কথা ভাবা হচ্ছে। মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) জয়সি দাশগুপ্ত জানান, ডেনমার্কের জাতীয় মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের তরফে ইতিমধ্যেই সমীক্ষা করা হয়েছে। স্থাপত্যগুলি সংস্কারের পরে কী ভাবে সংরক্ষণ এবং ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে শহরের বিশিষ্টজনেদের বক্তব্যও শোনা হবে। সেই আমলের ইতিহাস যাঁরা চর্চা করেন, এমন উদ্যোগে তাঁরা উচ্ছসিত। শ্রীরামপুর কলেজের কেরি লাইব্রেরি ও রিসার্চ সেন্টারের কিউরেটর তপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর ভাষা নেই। যা পরিকল্পনা রয়েছে শুনলাম, তাতে গোটা শহরের চেহারাটাই একেবারে বদলে যাবে। শ্রীরামপুরকে হয়তো দিনেমারদের ফ্রেডরিক নগর বলেই মনে হবে। প্রয়োজনে অর্থ সংগ্রহের জন্য আমি রাস্তায় নামতেও রাজি আছি।” |