ভরসন্ধ্যায় দু’দল দুষ্কৃতীর গুলির লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন এক যুবক। জখম এক ছাত্রী-সহ তিন জন। বুধবার হুগলি স্টেশন রোডের জনবহুল কৃষ্ণপুর বাজার এলাকায় ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার অরুণ রায় ওরফে পটলা নামে ওই ব্যক্তিকে চন্দননগর স্টেশন চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, বাবুলের দলবলের সঙ্গে চন্দননগরের অন্য এক দুষ্কৃতী দলের রেষারেষিতেই এই কাণ্ড।
তবে এ দিনও নিহত যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ কর্তাদের একাংশের অনুমান, বছর তিরিশের ওই যুবক দুষ্কৃতী দলের সঙ্গেই এসেছিলেন। এলাকা দখলের লড়াইয়ের জেরেই ঘটেছে এই কাণ্ড। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছেন হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু।
বুধবারের ঘটনার পরে আতঙ্ক কাটেনি এলাকার মানুষজনের। যে ভাবে জনবহুল এলাকায় দুষ্কৃতীরা বেপরোয়া ভাবে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাপাদাপি করল, তাতে দিনেদুপুরেও রাস্তাঘাটে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ীর কথায়, “দিনের পর দিন এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। এমনটা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ পথেঘাটে বেরোবেন কোন ভরসায়? আমাদের ব্যবসাপত্রও লাটে উঠবে।” স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, হুগলি, ব্যান্ডেলের কিছু এলাকা বেশ কিছু দিন ধরেই সমাজবিরোধীদের ‘মুক্তাঞ্চলে’ পরিণত হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। দিন কয়েক আগে ব্যান্ডেলে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে সভা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাতে লাভ যে কিছু হয়নি, বুধবারের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
কী হয়েছিল ঘটনার দিন?
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সন্ধে তখন প্রায় ৮টা। কেনাবেচা চলছে বাজার এলাকায়। হঠাৎই তিনটি মোটর বাইক এসে দাঁড়ায় রাস্তার ধারে। তাতে বসেছিল ছ’জন যুবক। মাফলার, রুমালে ঢাকা মুখ। প্রথম শীতের সন্ধ্যায় মুখ ঢাকা যুবকদের দেখে কারও সন্দেহ হয়নি। কিন্তু ছবিটা বদলে গেল মুহূর্তের মধ্যে।
মোটর বাইক থেকে নেমে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে গুলি চালাতে শুরু করে ওই যুবকেরা। পাল্টা গুলি চলে উল্টো দিক থেকেও। কিন্তু যুবকদের লক্ষ্য কে বা কারা, তা ঠাহর করতে পারেনি কেউ। যে যেদিকে পারে ছুট লাগায়। ঝটপট দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। দোকানের ভিতরে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গুলির আওয়াজ শুনছিলেন তরুণ দে নামে এক ব্যবসায়ী (নাম পরিবর্তিত)। বললেন, “গুলি-বোমার আওয়াজ এই এলাকায় প্রথম শুনলাম, তা নয়। কিন্তু এ দিন তো মুহূর্মুহূ গুলি চলছিল। মনে হচ্ছিল যেন হিন্দি ছবির শ্যুটিং চলছে।”
মিনিট ১৫-২০ ধরে এই তাণ্ডব চলার পরে দেখা যায়, প্রাণহীন এক যুবকের দেহ। গুলিতে দেহ ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে। রবীন্দ্রনগর কালীতলার বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মামনি মুর্মু বই কিনতে বেরিয়েছিল। গুলি লাগে তার পায়ে। মামনিকে ভর্তি করা হয় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। ছাত্র পড়িয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কানাগড়ের আশ্রমমাঠের বাসিন্দা অমিত মণ্ডল। তাঁর গায়ে তিনটি গুলি লেগেছে। অমিতকে পাঠানো হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। মামনি বলে, “বইয়ের দোকানের সামনেই আমার পায়ে গুলি লাগে। পড়ে যাই। এক জন কাকু আমাকে টানতে টানতে একটা দোকানের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়।”
আর এক জখম ব্যক্তি বাবুল পাল। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, বাবুলকে খুন করতেই চন্দননগর থেকে এসেছিল দুষ্কৃতী দলটি। তারাই আগে গুলি চালায়। পরে বাবুলের দলবলও ‘জবাব’ দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবুলের চিকিৎসা চলছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। |