|
|
|
|
প্রস্তুতি বাকি, ধান কেনায় দেরি পূর্বে
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
নিয়ম মতো, অক্টোবর থেকে ধান কেনার কাজ শুরু হওয়ার কথা। তা না হলেও নভেম্বর থেকে তোড়জোড়টা অন্তত শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এ বার সহায়ক মূল্যে ধান কেনার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজটুকুও পূর্ব মেদিনীপুরে শুরু হয়নি। ফলে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ধান সংগ্রহ শুরু হবে বলে জানালেও এই জেলায় দিন পিছোবে বলেই মনে করেছে কৃষক সংগঠনগুলি। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা খাদ্য নিয়ামক রণজিৎ গোস্বামী তা মেনে নিয়ে বলেন, “১ ডিসেম্বর থেকে জেলায় ধান কেনার কাজ শুরু না করা গেলেও শীঘ্রই জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিবির করা হবে।” এই অবস্থায় গত দু’বছরের মতো এ বারও ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার জেলায় আমন চাষ হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু পাঁশকুড়া, তমলুক ও নন্দকুমার ব্লকের ২০০টি গ্রাম বেশ কিছু দিন জলের তলায় থাকায় প্রায় ৬২ হাজার হেক্টর জমির ধান চাষ (কিছু আউশ ধানও আছে) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এ বার জেলায় আশানুযায়ী আমন ধানের উৎপাদন হবে না বলে মনে করছে কৃষি দফতর। এই অবস্থায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হয়েছে। তবে, অন্য বারের মতো এ বারও রাজ্য সরকারের অধীনস্থ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম, বেনফেড, কনফেড, নাফেড, এনসিসিএফ প্রভৃতি সংস্থা সমবায়ের মাধ্যমে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কিনবে। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় থাকা চালকলগুলিকে ধান কেনার দ্বায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। |
সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি |
সাল |
কেনা শুরু |
লক্ষ্যমাত্রা |
সংগ্রহ |
২০১১-১২ |
ডিসেম্বরের শেষে |
৯৩,৭০০ |
৮২,৩৩৫ |
২০১২-১৩ |
নভেম্বরের শেষে |
১ লক্ষ |
৭৬,১৯৬ |
(হিসাব মেট্রিক টনে) |
|
কোনও বছরই অক্টোবরে ধান কেনার কাজ শুরু হয় না। শুরু করতে করতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত গড়িয়েই যায়। কিন্তু এ বার নভেম্বরের মাঝখানেও ধান কেনার ন্যূনতম প্রস্তুতি শুরু হয়নি বলে অভিযোগ করছে কৃষক সংগঠনগুলি। প্রস্তুতি বলতে সমবায় ও চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক। গত বছর নভেম্বরের শুরুতেই বৈঠকটি হয়ে গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন জেলার একটি সমবায় সমিতির কর্তা। ধান কেনা শুরু হয়েছিল ২৬ নভেম্বর। তারপরেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল জেলা। এ বার এখনও বৈঠক হয়নি। এমনকী বৈঠক কবে হবে, সেই দিনটাও ঠিক হয়নি। জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ বিমান পণ্ডা বলেন, “নভেম্বরের মধ্যেই আমরা বৈঠক করব। এখনও দিনটা ঠিক হয়নি।”
পাশাপাশি যে সব চাষিদের এর আগে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হয়নি, তাদের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তদ্বির করা দরকার। ২০১১-১২ বছরে শুধুমাত্র এই অ্যাকাউন্ট খোলার জটিলতায় ধান কেনার কাজ শুরু হয়েছিল ডিসেম্বরের শেষে। কৃষকদের অভিযোগ, সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার জন্য আগে থেকে ঠিক মতো প্রস্তুতি নেওয়া হয় না বলেই যত সমস্যা। জেলার সর্বত্র ধান কেনার শিবির না হওয়ায় অনেক চাষিই সরকারি মূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ পান না। ফড়েদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন চাষিরা।
সহায়ক মূল্য নিয়েও চাষিদের আপত্তি আছে। কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের জেলা সম্পাদক নন্দ পাত্রের অভিযোগ, ‘‘সরকারি ভাবে এ বছর ধানের যে সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে (১৩১০ টাকা), তা খোলাবাজারে ধানের দামের কাছাকাছি। উপরন্তু কবে সরকারি ধান কেনার শিবির হবে তা কৃষকরা জানতে পারছেন না। ফলে ফড়েদের কাছে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।”
জেলা খাদ্য নিয়ামক অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, “চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করার জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন সরকারি অধীনস্থ সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ধান কেনার জন্য নিযুক্ত সংস্থাগুলি যে সব এলাকায় পৌঁছতে পারবে না সেখানে সরাসরি শিবির করে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। ধানের অভাবী বিক্রি যাতে না হয় সে দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|